শিক্ষক উৎপল হত্যার প্রধান আসামি আশরাফুলের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

শিক্ষক হত্যার প্রধান আসামি আশরাফুল আহসান
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার সাভারে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার হত্যা মামলার প্রধান আসামি আশরাফুল আহসানের (জিতু) পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজিএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসান আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এ আদেশ দেন। ওই আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আনোয়ারুল কবীর বাবুল প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

২৫ জুন স্কুলে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্টাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করেন আশরাফুল আহসান। তিনি ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিক্ষক উৎপল কুমারের মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই আশরাফুল পালিয়ে যান। গতকাল বুধবার গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

শিক্ষক উৎপল হত্যায় যে মামলা করা হয়েছে, সেখানে আশরাফুলের বয়স ১৬ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। তবে দুপুরে র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জেএসসি পরীক্ষার সনদ অনুযায়ী তাঁর বয়স ১৯ বছর।

আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিকেলে আশরাফুলকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের আবেদন করে আশুলিয়া থানা–পুলিশ। আবেদনের সঙ্গে আশরাফুলের জন্মসনদ ও জেএসসি পরীক্ষার সনদ সংযুক্ত করা হয়, যাতে তাঁর বয়স ১৯ বছর দেখা যায়। এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব হাসান মামলাটি শিশু আদালতে পাঠিয়ে দেন। শিশু আদালত আশরাফুলের সনদ পর্যালোচনা করে তাঁকে প্রাপ্তবয়স্ক সাব্যস্ত করে মামলাটি আবার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠান। এরপর উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আশরাফুল আহসানকে পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত।

দুপুরে র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে আশরাফুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিক্ষক উৎপল হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর জানানো হয়। র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, স্কুলের এক ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন আশরাফুল। এ ধরনের আচরণ থেকে তাঁকে বিরত থাকতে বলেছিলেন শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার। এতে আশরাফুল ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রীর কাছে ‘হিরোইজম’ দেখাতে শিক্ষক উৎপলের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেন।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৫ জুন আশরাফুল ক্রিকেট স্টাম্প নিয়ে স্কুলে আসেন। শ্রেণিকক্ষের পেছনে সেটি লুকিয়ে রাখেন। কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালে শিক্ষক উৎপল কুমারকে মাঠের এক কোণে একা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্টাম্প দিয়ে অতর্কিত তাঁকে বেধড়ক আঘাত করেন। শিক্ষক উৎপলকে প্রথমে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করা হয়। পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন আশরাফুল। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উৎপল কুমার মারা যান।

নিহত শিক্ষক উৎপল কুমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে ২০১৩ সালে আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ওই কলেজের শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন। এর ফলে তিনি বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম পরা, চুল কাটা, ধূমপান থেকে বিরত থাকা, উত্ত্যক্ত না করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিতেন।