সংবিধান সংশোধন বিলের প্রতিবেদন সংসদে উত্থাপন

জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন বিলের প্রতিবেদন উত্থাপন করেছে আইন মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি। বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদকে ফিরিয়ে দিতে আনীত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর গতকাল রোববার কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রতিবেদনটি সংসদে উত্থাপন করেন। কমিটি বিলে কিছু সংশোধনী এনেছে এবং বিলের অংশ থেকে প্রস্তাবনা বাদ দিয়েছে।
এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল, ২০১৪ সংসদে উত্থাপন করেন। বিলটি সংসদের চলতি অধিবেশনেই পাস হতে পারে। প্রতিবেদনটি উত্থাপনের পরপরই আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে বিলটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরামর্শ করতে দেখা গেছে।
এদিকে, প্রতিবেদনটি উত্থাপন করে কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, সাংসদদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন বা অপসারণ করা যায়। তবে তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে ভিন্নমতের কথা জানা গেছে। কেননা, সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদে আছে, সংবিধান লঙ্ঘন বা অসদাচরণের কারণে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের জন্য সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নোটিশ আনা যাবে। নোটিশ আসার পর দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত করা যাবে। অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের ক্ষেত্রেও একই বিধান (৫৩) রয়েছে।
প্রতিবেদন উত্থাপনের আগে সুরঞ্জিত বলেন, প্রস্তাবিত বিলে সুপ্রিম কোর্টকে আরও বেশি সুরক্ষিত, সম্মানিত ও স্বাধীন করা হয়েছে। অথচ কেউ কেউ বলছেন, সর্বনাশ হয়ে গেছে। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ড. কামাল হোসেন ও আমীর-উল ইসলামরা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে মিলে বিক্ষোভ করছেন। কেউ যদি না বুঝে সমালোচনা করেন, তাঁদের কিছু বলার নেই। কিন্তু জ্ঞানপাপীদের সমালোচনা দুঃখজনক। অথচ তাঁরা জানেন, স্পিকার আর রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাগে। সেখানে বিচারকদের অপসারণে লাগবে সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। যাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সমর্থন দিচ্ছেন এবং যাঁরা যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন দিচ্ছেন, তাঁরা সবাই একাকার হয়ে গেলেন। বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার জন্য কোথায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেবেন। তা না করে ‘গেল গেল’ করছেন। বিক্ষোভ মিছিল হয়ে গেল।
উত্থাপিত বিলে বলা হয়েছিল, ‘বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করবেন।’
সংসদীয় কমিটি এই দফা সংশোধন করে বলেছে, ‘... সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিবেন।’
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণসংবলিত বিবৃতিতে কমিটির সভাপতি বলেন, কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। সুতরাং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত¯কোনো বিচারককে অপসারণের সুযোগ থাকবে না।
প্রতিবেদনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানে বিচারকদের অপসারণে পন্থা গণতান্ত্রিক ও ভারসাম্যপূর্ণ করা হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে চতুর্থ সংশোধনীতে এই অনুচ্ছেদে (৯৬) প্রথম পরিবর্তন আনা হয়। এরপর ১৯৭৮ সালে অবৈধ পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের মতো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে দেওয়া হয়। কেবলমাত্র একটি তদন্ত প্রতিবেদনের দ্বারা বিচারকদের অপসারণ গণতান্ত্রিক অনুশীলনের পরিপন্থী। সপ্তম ও চতুর্দশ সংশোধনী ছিল দুরভিসন্ধিমূলক। একটি সংশোধনীতে বিচারকদের বয়স কমিয়ে একজন বিচারপতিকে অপসারণ করা হয়েছিল। আরেকটি সংশোধনীতে বিচারকদের বয়স বাড়িয়ে একজন ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা করার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। যার ফলে কুখ্যাত এক-এগারো আসে এবং দেশের সাংবিধানিক ধারা ব্যাহত হয়।
এ ছাড়া গতকাল বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ বিল, ২০১৪ সংসদে পাস হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বিলটি উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।