সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জেলা পর্যায়ে সচিবদের দায়িত্ব দেওয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত’ অভিহিত করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। করোনা মোকাবিলায় দেশের ৬৪টি জেলায় ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দেওয়াসহ বিভিন্ন কাজে আমলাদের প্রাধান্য দেওয়া নিয়ে আগের দিন জাতীয় সংসদে তোফায়েল আহমেদসহ সরকারি ও বিরোধীদলীয় একাধিক সংসদ সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর পরদিন আজ মঙ্গলবার সচিবদের এই দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে এ কথা বললেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ মাহমুদ।
প্রতিমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মন্ত্রণালয়ের উদ্ভাবনী কাজে ভূমিকার জন্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার ছয়জন কর্মকর্তাকে ‘উদ্ভাবক পুরস্কার ২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এই বক্তব্যের সঙ্গে জাতীয় সংসদে আলোচনার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি যা সত্য মনে করেছেন, তা–ই বলেছেন। এটা তো সত্য যে আমলাতন্ত্র কাজ করছে। জেলা পর্যায়ে সচিবদের দায়িত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে একটি ‘চেইন’ তৈরি হয়েছে।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে গত এপ্রিল মাসে অফিস আদেশ জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কেউ মন্তব্য না করলেও অনেক সাংসদ তা ভালোভাবে নেননি।
সোমবার জাতীয় সংসদে আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর সহচর ও আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী সাংসদেরা সচিবদের ওপরে। এটা খেয়াল রাখতে হবে।
আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ‘মাফ করবেন, কথা বলাটা কতটা যুক্তিসংগত জানি না। এখন আমাদের জেলায় জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। মানুষ মনে করে আমরা যা দিই, এটা প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই দেন। অথচ প্রশাসনিক যাঁরা কর্মকর্তা, তাঁরা কিন্তু যানইনি। যাঁকে দেওয়া হয়েছে, তিনি এখন পর্যন্ত যাননি। এটা কিন্তু ঠিক নয়। একটা রাজনৈতিক সরকার এবং রাজনীতিবিদদের যে কর্তৃত্ব কাজ, সেটা কিন্তু ম্লান হয়ে যায়।’
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, করোনাকালে খাদ্য বিতরণ এবং ওষুধসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘চেইন অব কমান্ড’ বজায় রয়েছে এবং বিতরণ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে হয়েছে। ডিসি, ইউএনওরা মানুষের দ্বারে দ্বারে গেছেন। মানুষ আরও সাহসী হয়েছে। কোনো শ্রেণি-পেশার মধ্যে বৈষম্য নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘সবাই ঐক্যবদ্ধ’।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাস পুরো পৃথিবীকে ঘায়েল করে ফেলেছিল। উন্নত বিশ্ব ও ইউরোপের দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা করোনা মোকাবিলায় দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। করোনা পরিস্থিতিতে ব্যাপক ভীতি তৈরি হয়েছিল। সে ভীতিটা দূর করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের মানুষকে সাহসী করে তুলেছেন। তিনি সারা দেশে প্রতিটি জেলায় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁদের সাহসী করে তুলেছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের সাহস দেন, পথ দেখান। তাঁর এই সাহস আমাদের পথচলায় পাথেয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করছে, অগ্রযাত্রা থমকে যায়নি।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, উদ্ভাবনী পদক্ষেপ সব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির কারণে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে। এর মূল উদ্ভাবক বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী দেশরত্নœশেখ হাসিনা। দেশ এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে উদ্ভাবনী কাজের জন্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার বণিক, বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির প্রদর্শক মু. খালেদ সালাউদ্দিন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন ও বাজেট) আ ন ম বজলুর রশীদ ও সিস্টেম এনালিস্ট জি এম ফয়সাল আহমদ এবং সচিবের একান্ত সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ পুরস্কার পান।
প্রতিমন্ত্রী চারজনের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। আর ঢাকার বাইরের দুজনকে অনলাইনে পুরস্কার দেওয়া হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।