সিডি-৪ পরীক্ষার জন্য ঢাকায় ছুটতে হচ্ছে এইডস রোগীদের

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক) এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি ও এইডস রোগীরা সিডি-৪ পরীক্ষা করাতে পারছেন না। এইডস রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষায় বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিকের (বিকারক বা রিএজেন্ট) দরকার হয়। মূলত এই রাসায়নিক না থাকায় সিডি-৪ পরীক্ষাটি করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে রোগীদের ছুটতে হচ্ছে ঢাকায়। কিন্তু ঢাকায় যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়ার খরচের পাশাপাশি ভ্রমণজনিত ক্লান্তির কারণে অনেক রোগী সঠিক সময়ে এই পরীক্ষা করাতে পারছেন না।
চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় ৫০০ এইচআইভি এইডস রোগী রয়েছে। এর মধ্যে ৭০ ভাগ রোগীর প্রতি ছয় মাস পরপর সিডি-৪ পরীক্ষা করানো প্রয়োজন পড়ে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অণুজীববিজ্ঞান (মাইক্রোবায়োলজি) বিভাগে রোগীদের বিনা মূল্যে সিডি-৪ পরীক্ষা করার সুযোগ ছিল।
চিকিৎসকেরা জানান, সিডি-৪-এর সংখ্যা জানার পরই কোনো ব্যক্তিকে এইডসের ওষুধ (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল বা এআরভি) দেওয়া হয়। ওষুধের মাত্রাও নির্ভর করে ওই সংখ্যার ওপর। সিডি-৪ হচ্ছে রক্তের একধরনের শ্বেতকণিকা। এই কণিকা রোগ প্রতিরোধ করে। এক কিউবিক মিলিমিটার রক্তে ৭০০ থেকে ১২০০ সিডি-৪ থাকে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রফিকুল মওলা বলেন, এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সিডি-৪ যদি ২০০ থেকে ৩৫০-এর মধ্যে হয়, তাহলে তাকে এইডসের ওষুধ (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল বা এআরভি) দিতে হয়। ৫০০-এর নিচে নামলেই রোগ প্রতিরোধক্ষমতা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। সিডি-৪-এর মাধ্যমে রোগীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা
কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা নির্ণয় করা হয়।
ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সিডি-৪ পরীক্ষা করানো হয়। এই পরীক্ষার জন্য খরচ পড়ে এক থেকে দেড় হাজার টাকা।
চট্টগ্রামে এইচআইভি এইডস রোগীদের নিয়ে কাজ করে বেসরকারি সংস্থা আশার আলো সোসাইটি এবং হোপ নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। ২৯২ জন এইডস রোগী বর্তমানে আশার আলো সোসাইটি থেকে সেবা নেন। এর মধ্যে ১৮২ জন এআরভি বা এইডসের ওষুধ খান। দুই শতাধিক এইচআইভি রোগীকে সেবা দেয় হোপ।
আশার আলো সোসাইটির ব্যবস্থাপক মো. দিদারুল আলম বলেন, ছয় মাস পরপর একজন এইডস রোগীর সিডি-৪ পরীক্ষা করাতে হয়। চট্টগ্রামে পরীক্ষা করানোর সুযোগ না থাকায় এখন রোগীদের সমস্যা হচ্ছে।
মে মাসে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি এবং রাউজানের দুই রোগী ঢাকায় গিয়ে সিডি-৪ পরীক্ষা করিয়ে আসেন। তাঁরা জানান, ‘ঢাকায় গিয়ে একবার পরীক্ষা করালে সব মিলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা দরকার হয়। চট্টগ্রামে যদি এই পরীক্ষা হতো, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হতো।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের প্রধান মনসুরুল আলম বলেন, সিডি-৪ এইডস রোগীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। রোগটি কোন পর্যায়ে রয়েছে, তা জানা যায় এই পরীক্ষার মাধ্যমে। এ ছাড়া এআরভি কাজ করছে কি না, তা জানার জন্যও এই পরীক্ষা করাতে হয়। চট্টগ্রামে এ পরীক্ষা করা গেলে রোগীদের দুর্ভোগ লাঘব হতো।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের একাডেমিক ভবনে সিডি-৪ মেশিনটি বসানো হয়। এই মেশিন পরিচালনাকারী টেকনোলজিস্টরাও কলেজের অধীনে। চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর পাশাপাশি এইচআইভি সংক্রমিত অন্য রোগীরা এখানে বিনা মূল্যে পরীক্ষা করাতে পারেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অণুজীববিজ্ঞান (মাইক্রোবায়োলজি) বিভাগের প্রধান নাছিমা আকতার বলেন, জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির অধীনে সিডি-৪ পরীক্ষার জন্য রিএজেন্ট সরবরাহ করা হতো। এক বছর ধরে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় এইডস/এসটিডি কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর (ভারপ্রাপ্ত) আনিসুর রহমান বলেন, ‘রিএজেন্ট কেনার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের। আমরা তাদের চাহিদা, টাকা সবকিছু দিয়ে রেখেছি। কিন্তু এখনো রিএজেন্ট পাইনি। তাই সরবরাহ করা যাচ্ছে না।’