সৈয়দপুরের দা-কুড়াল যাচ্ছে বিভিন্ন জেলায়

নীলফামারীর সৈয়দপুরের ওয়াপদা মোড়ে বাইপাস সড়কের পাশে রয়েছে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহীন হোসেনের দা ও কুড়ালের কারখানা। ঈদকে সামনে রেখে এ কারখানায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে লোহা কাটাকাটি, কয়লার পোড়া গন্ধ, হাপরের হাঁসফাঁস আর হাতুড়ির টুংটাং শব্দ।
এ কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ৫০০টি করে দা ও কুড়াল তৈরি করা হচ্ছে। এসব দা-কুড়াল পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, যশোরসহ উত্তরের জেলাগুলোতে।
কাউন্সিলর শাহীন ২০০৯ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ওই কারখানা শুরু করেন। আস্তে আস্তে এই কারখানার তৈরি দা ও কুড়ালের চাহিদা বাড়ছে।
কয়েকজন শ্রমিক বলেন, প্রথমে সাইজ করে লোহা কেটে কয়লার আগুনে লাল করা হয়। হাপরের বাতাসে লাল টুকটুকে করে লাইনের ওপর রেখে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়। দা ও কুড়ালের আকার না আসা পর্যন্ত লোহার তপ্ত খণ্ডটি একবার আগুনে একবার পানিতে ভিজিয়ে অনবরত হাতুড়ি চলতে থাকে। দা ও কুড়াল তৈরি হলে শাণ দেওয়ার কাজ করে চকচকে করে তোলা হয়। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ওই কারখানার কুড়ালের চাহিদা রয়েছে সর্বত্র। বাঁকা ধরনের দা এই জনপদে কম চললেও ঢাকাসহ দক্ষিণের জেলাগুলোতে এর চাহিদা ব্যাপক।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানায় আটটি হাপরে আটজন কামার, টানার জন্য সহযোগী ও শেষ ধাপে শাণ দেওয়ার জন্য দৈনিক মজুরিতে লোক রেখে কারখানাটি পরিচালিত হচ্ছে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সব মিলে কারখানায় ৬০ জনের মতো লোক কাজ করছেন। এঁদের দৈনিক মজুরি ৩৭৫ থেকে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা। কারখানা কর্তৃপক্ষ ৬৫-৬৭ টাকা কেজি দরে লোহা কেনে। সেই লোহা কয়লায় লাল করে পিটিয়ে তৈরি করেন দা ও কুড়াল। ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য শাণ দেওয়ার পর দা ১২২ থেকে ১২৪ টাকা ও কুড়াল ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। সারা বছরই এই কারখানায় কাজ হলেও কোরবানি ঈদে কারখানায় ব্যস্ততা বেড়ে যায়।
মালিকপক্ষের দাবি, বাইরে থেকে লোহা কিনে তারা কারখানাটি চালায়। তবে অভিযোগ রয়েছে, এর বেশির ভাগ লোহা আসে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ভেতর থেকে চোরাই পথে। রেলওয়ে কারখানা থেকে এই কারখানাটিও খুব কাছেই অবস্থিত। কারখানার গুদামেও পাওয়া যায় রেলের লাইন, স্প্রিং ও অন্যান্য সামগ্রী।
কারখানার মালিক শাহীন রেলের লোহা চোরাই পথে আসার কথাটি অস্বীকার করেন। তিনি কারখানাটি টিকিয়ে রাখার জন্য সহজ শর্তে ঋণ ও সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কামনা করেন।