হাসপাতালটি নামেই ২৫০ শয্যার

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবন।  ছবি: প্রথম আলো
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের নতুন ভবন। ছবি: প্রথম আলো
• পুরোদমে চলছে না সেবা কার্যক্রম
• শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের ২০০ শয্যার ভবন উদ্বোধন হয়েছে।

শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালটি ৫০ শয্যার। গাজীপুরের টঙ্গীর একমাত্র সরকারি হাসপাতাল এটি। টঙ্গী জনবহুল এলাকা। তাই হাসপাতালটিতে ২০০ শয্যার আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। গত এপ্রিলে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। তবে লোকবল ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে ভবনটিতে চিকিৎসা কার্যক্রম পুরোদমে চালু হয়নি। 

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, নতুন ভবনটি আটতলা। ওয়ার্ডগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। চিকিৎসকের কক্ষগুলোও পরিপাটি, কিন্তু চেয়ারটেবিল নেই। নিচতলা ও দোতলায় কোনোরকমে চেয়ারটেবিল ফেলে বহির্বিভাগের রোগী দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে বহির্বিভাগে রোগী আসে ১২ শ জন। পুরোনো ভবনের জরুরি বিভাগের রোগীও এখানে আসে। অথচ চিকিৎসক মাত্র চার-পাঁচ জন।
এ বিষয়ে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘সাধারণ মানুষ জানে, নতুন ভবনটি চালু হয়েছে এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। কিন্তু তারা জানে না, ভবনটি এখনো ফাঁকা। এসে দেখে, আগের ৫০ শয্যার হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে।’
দেখা যায়, পুরোনো ভবনের সামনের নালায় পয়োবর্জ্য ভাসছে। বাতাসে দুর্গন্ধ। সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় মশার উপদ্রব। সিঁড়ি, বারান্দায় ধুলাবালি জমে আছে। রোগী আনা-নেওয়ার জন্য একমাত্র হুইলচেয়ারটি অচল। স্ট্রেচারও নেই। রোগনির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সপ্তাহে এক দিন আলট্রাসনোগ্রাফি হয়। তা-ও বাইরে থেকে চিকিৎসক আনতে হয়। দিনমজুরের কাজ করেন মো. জুয়েল। বাড়ি টঙ্গী কলেজগেট এলাকায়। বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ তাঁর স্ত্রীর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে আহসান উল্লাহ মাস্টার হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরদিন শুক্রবার সকালে চিকিৎসক তিনটি পরীক্ষা করাতে বলেন। জানতে চাইলে জুয়েল বলেন, ‘ডাক্তার বলছেন, পরীক্ষা এখানে হয় না। বাইরে থেকে করাতে হবে। এত বড় হাসপাতাল, অথচ বাইরে থেকে পরীক্ষা করাতে হবে।’ যোগাযোগ করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ইরাম শাহারিয়ার বলেন, ‘এখানকার এক্স-রে যন্ত্র ডিজিটাল না। তাই বলেছি, পরীক্ষাগুলো বাইরে থেকে করাতে।’
আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) অনুপস্থিতিতে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মাসুদ রানা বলেন, ‘আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে। পুরোনো ভবনেই চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। রোগী বেড়েছে, কিন্তু জনবল বাড়েনি। ৫০ শয্যার জনবল দিয়েই চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। নতুন ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হলে এসব সমস্যা থাকবে না।’
যোগাযোগ করলে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. জাহিদ আহসান গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন ভবনটির চিকিৎসা কার্যক্রম চালুর বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তাগাদা দেওয়ার পরও সাড়া পাইনি।’
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন সৈয়দ মোহাম্মদ মনজুরুল হক বলেন, ‘আমাদের কার্যক্রম প্রায় শেষের দিকে। আমাদের এখানে আনুষঙ্গিক সব কাজ শেষ করেছি। ফাইল ডিজি অফিসে পাঠিয়েছি।’
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি। সংশ্লিষ্ট কিছু পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনাসহ হাসপাতালটিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, আসবাব ও চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’