হোটেল শাহবাগ থেকে বিএসএমএমইউ

পুরোনো ছবি, বর্তমান ছবি
পুরোনো ছবি, বর্তমান ছবি

ঢাকার প্রথম তিন তারকা হোটেল ছিল হোটেল শাহবাগ। ঢাকার ইতিহাস বলছে, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকায় বেশ কিছু ভবন মনোরঞ্জনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলোতে বাইজি নাচের ব্যবস্থা ছিল। নবাবদের এ রকমই একটি উল্লেখযোগ্য বাইজি ঘর ছিল শাহবাগের ইসরাত মঞ্জিল। নবাব সলিমুল্লাহ ১৯০৬ সালের ১৪ ও ১৫ এপ্রিল ভবনটি নিখিল ভারত মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের স্থান হিসেবে নির্বাচন করেন। ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বরে এ ভবনেই অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে এটিকে সংস্করণ করে হোটেলে রূপান্তর করা হয়, যা ঢাকার প্রথম আন্তর্জাতিক হোটেল। এই হোটেলটির স্থপতি ছিলেন এডওয়ার্ড হাইক্স। নকশা করেছিলেন রোনাল্ড ম্যাককেনেল। হোটেলটির অবস্থান ছিল শাহবাগ মোড়ের পূবালী ব্যাংকের পেছনে। পঞ্চাশের দশকে বিদেশি অতিথিদের আবাস ও আহারের ব্যবস্থা, বড় আকারের অভ্যর্থনা সবই এখানে হতো। পঞ্চাশের দশকের এই শাহবাগ হোটেলের একটি পুরোনো ছবি পাওয়া গেল ইন্টারেনেট। তাতে শাহবাগ মোড়ের একটি ফোয়ারার পেছনে হোটেলটি দেখা যায়। এখন সেই ফোয়ারাটি না থাকলেও যাঁরা শাহবাগে নিয়মিত যাতায়াত করেন তাঁরা ভবনটি দেখলেই বুঝতে পারবেন এটিই বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। আগে এর নাম ছিল ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ, সাধারণ মানুষের কাছে পিজি হাসপাতাল নামে পরিচিত ছিল। ইতিহাসবিদ শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ঢাকা কোষ এবং ইফতিখার-উল-আউয়াল সম্পাদিত ঐতিহাসিক ঢাকা মহানগরী: বিবর্তন ও সম্ভাবনা বইটিতে এই হাসপাতাল তৈরির ইতিহাস লেখা রয়েছে। এতে বলা হয়, ১৯৬৫ সালে ইনস্টিটিউট অব পোস্টগ্র্যাজুয়েটে মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চের জন্য শাহবাগের এই জায়গা অধিগ্রহণ করে সরকার। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর ব্যাপক বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৯৬৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনজন সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ ব্রিটিশ কাউন্সিলের উপদেষ্টা স্যার জেমস ডি এস কেমেরন, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম এবং অধ্যাপক এ কে এস আহম্মদকে নিয়ে এই ইনস্টিটিউট গড়ে ওঠে। পরে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠিত স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিনের সঙ্গে এটি যুক্ত হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ১৯৭২ সালে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের অনুরোধে তৎকালীন মন্ত্রী জহুর আহমেদ চৌধুরী মুসলিম লীগের পরিত্যক্ত ভবনটি (ব্লক এ) পোস্টগ্র্যাজুয়েট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেন। এরপর থেকে এখানেই পিজি হাসপাতালের কার্যক্রম চলে। তবে ১৯৯৮ সালে জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে এটিকে বিশ্ববিদ্যালয় করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নাম দেওয়া হয়। উচ্চতর মেডিকেল শিক্ষা এবং গবেষণার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু হয়েছিল পিজি হাসপাতালে। এখন এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। শিক্ষা, গবেষণা এবং মানসম্মত চিকিৎসা তিনটাই সমান্তরালভাবে চলছে এই মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।

লেখা: শরিফুল হাসান, ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন