বিশাল গর্তটি হওয়ার কথা ছিল রাস্তার উল্টো দিকে। তিনটি দোকানের মালিকের তোপের মুখে গর্তটি খোঁড়া হয় মিরপুর এস ও এস হারম্যান মেইনার কলেজের সামনে। এখন সেই গর্ত মরণফাঁদ।
তিন মালিকের একজন রফিকুল হক। বললেন, তাঁদের দোকানের সামনে রাস্তা খুঁড়তে বাধা দিয়েছেন অনেকটা বিরক্ত হয়েই। কারণ, প্রায় পাঁচ বছর চিৎকার ও অভিযোগ করার পর ছয় মাস আগে রাস্তাটির মেরামত শেষ হয়। এখন কেন আবার খোঁড়াখুঁড়ি?
গত বুধবার দেখা যায়, মিরপুর ১০ থেকে ১৪ নম্বর সড়ক পর্যন্ত এমন অনেক গর্ত খোঁড়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৩ নম্বরে গ্লোরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হোপস ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও হারম্যান মেইনারের সামনের গর্তগুলো বিপজ্জনকভাবে হাঁ করে আছে। ভেতরে রড। হারম্যান মেইনার, স্কলাসটিকাসহ আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই রাস্তা ব্যবহার করে।
জানা যায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে কাজ ধরে প্রায় তিন মাসে ২০ কোটি টাকায় রাস্তা মেরামত করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এখন গর্ত খুঁড়ে রাস্তাকে আগের দশায় নিয়ে যাচ্ছে ঢাকা ওয়াসা। যার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে সিটি করপোরেশন থেকেই। দুই কর্তৃপক্ষের কাজের মধ্যে কোনো সমন্বয় না থাকায় বাড়ছে জনদুর্ভোগ। রয়েছে যানজট আর দুর্ঘটনার শঙ্কা।
বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে কথা হয় কয়েকজন দোকানি এবং এলাকায় নিয়মিত যাতায়াতকারী ব্যক্তির সঙ্গে। হারম্যান মেইনার স্কুলে পড়ে মিরপুর ১১ নম্বরের বাসিন্দা খায়রুল ইসলামের ছেলে। প্রথম আলোকে খায়রুল ইসলাম বলেন, স্কুলে আসার পথে ভাঙা রাস্তায় যাতায়াতে অনেক অসুবিধা হতো, তাই অভিভাবকেরা রাস্তা মেরামতের জন্য সিটি করপোরেশনকে দফায় দফায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন। পরে মাস ছয়েক আগে মেরামত করা হয়। কিন্তু এখন আবার রাস্তা খোঁড়া হচ্ছে।
খোঁড়াখুঁড়ির জন্য এলাকায় যানজটও হচ্ছে। মিরপুর ১৩ নম্বরে অবস্থিত বনফুল আদিবাসী স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র অমিত। তার মা মায়মুন নাহারের অভিযোগ, সকালে ইব্রাহিমপুর এলাকা থেকে ছেলেকে স্কুলে দিতে এসে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সৃষ্ট যানজটের কবলে পড়েন। বাধ্য হয়ে রিকশা থেকে নেমে ধুলাবালির মধ্যে অনেক দূর হেঁটে স্কুলে দিয়ে আসতে হয় ছেলেকে।
আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবদুস সাত্তার রাস্তার কারণে তাঁদের দুর্ভোগের কথা জানালেন। ছয় মাস আগেও রাস্তাটি ছিল মৃত্যুকূপ। বর্ষাকালে ভাঙা, কর্দমাক্ত আর শুকনা মৌসুমে ধুলার রাজত্ব। এখানে-ওখানে গর্ত। গত বছর জুনে এক সন্ধ্যায় স্ত্রীকে নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর থেকে কেনাকাটা করে ফিরছিলেন রিকশাযোগে। রাস্তায় বাতি ছিল না। বনফুল স্কুলের সামনে গর্তে পড়ে যায় রিকশার চাকা। উল্টে পড়ে যান তাঁর স্ত্রী। কোমরে চোট লাগে, ভেঙে যায় হাঁটুর হাড়। প্রায় দেড় মাস বিছানায় থাকতে হয় স্ত্রীকে।
গ্লোরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে কয়েকজন দোকানমালিকের মতে, সেবা সংস্থাগুলো নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে কাজ করলে মানুষের দুর্ভোগ বারবার হয় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল শুক্রবার ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. কুদরতউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ওই রাস্তাটি মেরামতের সময় ঢাকা ওয়াসা ও অন্য সংস্থাগুলোকে কয়েক দফায় চিঠি দিতে বলা হয়েছিল, খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে করে নিতে হবে। কিন্তু ওয়াসা ওই সময়ে কাজ করেনি।
এর পরও সিটি করপোরেশন রাস্তা খোঁড়ার অনুমতি দিল কেন? এ প্রশ্নের জবাবে কুদরতউল্লাহ বলেন, ওয়াসা বিদেশি তহবিলে পানির পাইপলাইন করার জন্য রাস্তা খুঁড়তে হবে বলে জানিয়ে অনুমতি নেয়। এ ছাড়া নানা অজুহাতে অনুমতি নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম কামরুল আলম চৌধুরী সিটি করপোরেশনের তাগিদ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, অনেক সময় করপোরেশনের কাজের সময় ঠিকাদারের তহবিল থাকে না, পরে করতে হয়। তাই সমন্বয় হয় না। মিরপুরে পুরো রাস্তা না খুঁড়ে কিছু দূরে বড় গর্ত করে কাজ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।