খিচুড়িতে পচা মাংসের অভিযোগে দোকান বন্ধ করল ছাত্রলীগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলে থাকা তসলিম ও সাজুর দোকান গতকাল শনিবার রাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ১১ সেপ্টেম্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: প্রথম আলো

খিচুড়ির সঙ্গে মুরগির ‘পচা মাংস’ পরিবেশনের অভিযোগে একটি খাবারের দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

একই সঙ্গে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হলের আরও একটি দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন। দ্বিতীয় দোকানটি থেকে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী দিনের পর দিন খেয়ে টাকা দেননি বলে জানা গেছে।

গতকাল শনিবার রাতে প্রথমে হলের তসলিম মিয়াজীর খাবারের দোকানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দোকানটির পাশে থাকা মো. সাজুর দোকানটিও পরে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সাজুর দোকানে খাবারসহ রকমারি পণ্য বিক্রি করা হতো।

তসলিম ও সাজুর দোকানের সামনে এখন ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য দোকান বন্ধ থাকবে’ লেখা কাগজ ঝুলছে।

আরও পড়ুন

তসলিম সূর্য সেন হলের নিরাপত্তাপ্রহরী। আর সাজু বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফটম্যান পদে কর্মরত। তাঁরা দুজনই সূর্যসেন হলে দোকানের ব্যবসা করে আসছিলেন।

সূর্য সেন হলের একাধিক ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাতে কিছু ছাত্র তসলিমের দোকান থেকে খিচুড়ি নিয়ে খোলা আকাশের নিচে টেবিলে খেতে বসেন।

খিচুড়ির সঙ্গে থাকা মুরগির মাংস পচা মনে হওয়ায় দুজন শিক্ষার্থী প্রতিবাদ করেন। এ সময় দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে ছাত্রদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। পরে আশপাশে থাকা সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা দোকানটিতে গিয়ে খিচুড়ির হাঁড়ি উপুড় করে মাটিতে ফেলে দেন। দোকানের কর্মচারীদের মারধরও করেন তাঁরা। পরে ঘটনাস্থলে যান হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। হলের আবাসিক শিক্ষক মোবারক হোসেনও ঘটনাস্থলে আসেন। হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তসলিমের দোকানের সঙ্গে সাজুর দোকানটিও বন্ধ করে দেন।

আরও পড়ুন

হলের শিক্ষার্থীরা বলেন, তসলিম তাঁর দোকানে পচা-বাসি ও মানহীন খাবার বিক্রি করতেন। তিনি খাবারের অতিরিক্ত দাম নিতেন। হলের কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি হলে ব্যবসা করে আসছিলেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি অসম্মানজনক আচরণ করতেন। আগে একাধিকবার তাঁর দোকান বন্ধ করা হয়েছিল।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তসলিম।

হলের সাধারণ শিক্ষার্থী, শাখা ছাত্রলীগ ও দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হল শাখা ছাত্রলীগের কিছু কর্মী হলের দোকানগুলোতে দিনের পর দিন খেয়ে টাকা দেন না। অন্য দোকানিরা এ নিয়ে ভয়ে মুখ খোলেন না। তবে সাজু প্রায়ই এ নিয়ে কথা বলতেন। বিভিন্নজনের কাছে বিচার দিতেন। এ কারণে ‘ফাও খাওয়া’ ছাত্রলীগ কর্মীরা সাজুর ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তাঁরা তসলিমের ওপর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের সুযোগ নিয়ে তাঁর দোকানটিও বন্ধ করে দেন।

আরও পড়ুন

সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিয়াম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তসলিম হলের কর্মচারী। তা সত্ত্বেও তিনি হলে ব্যবসা করে আসছিলেন। এ নিয়ে তাঁরা আগেই হল প্রশাসনের কাছে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তা ছাড়া তসলিমের দোকানের খাবারের মান ও দামের যে তারতম্য, তা দূর করতে তাঁরা বলেছিলেন। কোনো কাজ না হওয়ায় গতকাল সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। হল শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানানো হয়।

সিয়ামের ভাষ্য, গতকাল তসলিমের দোকান বন্ধ করা নিয়ে যখন কথা হচ্ছিল, তখন হলের আবাসিক শিক্ষকদের সামনেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা সাজুর দোকান নিয়ে নানা অভিযোগ তোলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর দোকানটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সাজুর দোকানে ছাত্রলীগ কর্মীদের ফাও খাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে সিয়াম বলেন, ‘এমন কিছু হওয়ার কথা নয়। সাজুর দোকানের ব্যাপারে আপত্তির কথা আগেও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন। তিনি ব্যবহার খারাপ করেন। দাম বেশি রাখেন। তাঁর দোকানের খাবারসহ পণ্যের মান ভালো নয়। সবাই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।’

ঘটনার বিষয়ে জানতে সাজুকে ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে, তসলিম ও সাজুর দোকান খুলে দেওয়ার কথা ভাবছেন সূর্য সেন হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মকবুল হোসেন ভূঁইয়া। তিনি আজ রোববার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘দোকানগুলো খোলা হবে। বিষয়টি আমরা দেখছি।’

আরও পড়ুন