অস্ট্রেলিয়া যাত্রা: ‘অকেজো’ ভিসায় প্রতারিত হচ্ছেন বাংলাদেশিরা
অস্ট্রেলিয়ায় ওয়ার্কিং হলিডে ও ই–ভিজিটর—দুই শ্রেণীর ভিসার তালিকায় বাংলাদেশ নেই। এই দুই ক্যাটাগরিতে ফি দিয়ে আবেদন করলেই নিশ্চিত ভিসা পায় তালিকাভুক্ত দেশের নাগরিক। বাংলাদেশে প্রতারক চক্র এই সুযোগ নিচ্ছে। তারা ওই দেশের নাগরিক দেখিয়ে ভিসা নিয়ে দেশে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে।
বিদেশে পড়তে ইচ্ছুক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশের গন্তব্য অস্ট্রেলিয়া। আবার অভিবাসী হতে চান, এমন অনেক বাংলাদেশিও অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হচ্ছেন। তবে কাজের ভিসায় বাংলাদেশ থেকে ওই দেশে কর্মী তেমন নেওয়া হয় না।
একশ্রেণির প্রতারক অস্ট্রেলিয়ায় ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশিদের ফাঁদে ফেলছে। তাদের ভুয়া ভিসার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকে।
প্রতারক চক্র এমন কৌশল নেয়, যাতে ভিসাটি যে ভুয়া, তা অনেকে বুঝতে পারেন না। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার সরকারি ভিসা যাচাইয়ের ওয়েবসাইটেও দেখা যায়, পাসপোর্টের বিপরীতে ভিসা দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল যুগে এই প্রতারণাও হচ্ছে ডিজিটাল উপায়ে।
যেভাবে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হয়
মধ্যপ্রাচ্য বা এশিয়ার অন্য কোনো দেশ থেকে ফেরত স্বল্পশিক্ষিত ব্যক্তিদের প্রধানত টার্গেট করে প্রতারক চক্র। কম খরচে ভিসা করে দেওয়া, আগে ভিসা পরে টাকা এবং ইংরেজি বা কোনো দক্ষতা ছাড়াই কাজের সুযোগ—এমন লোভনীয় কথা বলে ফাঁদ পাতা হয়। এরপর কাঙ্ক্ষিত ভিসাও দেওয়া হয়।
অস্ট্রেলিয়ার সরকারি ভিসা যাচাইয়ের ওয়েবসাইট ভিইভিওতে (VEVO) যাচাই করলে ওই ভিসা দেখা যায়। এরপর অস্ট্রেলিয়ায় যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে প্রতারকচক্র বলে, অস্ট্রেলিয়া যেতে হলে বাংলাদেশ থেকে ভিসা ফ্রি কোনো দেশ যেমন—নেপাল, মালদ্বীপে বা ইন্দোনেশিয়া যেতে হবে। কারণ, বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সরাসরি ফ্লাইট নেই। এরপর ওই ব্যক্তিকে ভিসা ফ্রি দেশে নেওয়া হয়। সেখানে যাওয়ার পর অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করতে গেলে ভুয়া ভিসার বিষয়টি ধরা পড়ে। আবার যাঁরা বাংলাদেশ ছাড়ার আগেই ভিসার খোঁজ করেন, তাঁরা দেশেই ভুয়া ভিসার বিষয়টি জেনে যান। কিন্তু এরই মধ্যে প্রতারক চক্র লাখ লাখ টাকা নিয়ে যান।
প্রতারক চক্র ভুক্তভোগীকে অন্য দেশে নেওয়ার কারণ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার ভিসার কপি ছাড়া সাধারণত অস্ট্রেলিয়াগামী বিমানের টিকিট কেনা যায় না। ফলে তথ্য জালিয়াতি করে বানানো ভিসা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ার টিকিট কেনা যায় না। তা ছাড়া বাংলাদেশের অভিবাসন বিভাগেও ভিসা জালিয়াতি ধরা পড়তে পারে।
অবশ্য বাংলাদেশ থেকে কী পরিমাণ মানুষ এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তার কোনো হিসাব অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন বা দেশে পুলিশের কাছে নেই।
বাংলাদেশ হাইকমিশন যা বলছে
কর্মসংস্থানের জন্য ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গমনেচ্ছুদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ক্যানবেরায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন। এ বিষয়ে হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সেলর মো. সালাহউদ্দিন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভিসা নিয়ে প্রতারণার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। সাবক্লাস ৪১৭ ও সাবক্লাস ৬৫১-এই দুটি ভিসা কোনোভাবেই বাংলাদেশিদের জন্য নয়। এ ধরনের ভিসা বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী কেউ পেলে, সেটি নিশ্চিত ভুয়া।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘দেশের অনেক তরুণ এখানে পড়াশোনা করতে আসেন। তাই দেশের বৃহৎ স্বার্থেই প্রতারণার ব্যাপারে আমরা অভিবাসন বিভাগকে এখনো লিখিত কিছু জানাইনি। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট এবং বাংলাদেশিদের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে।’
কাউন্সেলর বলেন, অস্ট্রেলিয়ার কর্মভিসা-যেমন সাবক্লাস ৪৮২ ভিসা কেউ পেলে ১৫ অস্ট্রেলীয় ডলার ফি জমা দিয়ে ই-মেইলে তথ্য পাঠালে হাইকমিশন ভিসা যাচাই করে বাংলাদেশে ছাড়পত্র পাঠিয়ে দেয়।
পুলিশের কাছে প্রতারণার কোনো তথ্য আছে কিনা, বিষয়টি যোগাযোগ করা হয় পুলিশ তদন্ত ব্যুরোর (পিবিআই) প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জালিয়াতির ধরনটি এখনো বেশ নতুন। তাই, হয়তো এখনো কোনো মামলা বা লিখিত অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি।
বনজ কুমার বলেন, তবে বিদেশগামী ব্যক্তিকে ভারতে নেওয়া, সেখানে অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাসে ঘোরাঘুরি, অনলাইনে ভিসা হয়েছে দেখানো এবং পরে এই ভিসায় বাংলাদেশ থেকে উড়োজাহাজের টিকিট কিনতে না পারা-এমন প্রতারণার কিছু অভিযোগ পুলিশের কাছে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা অভিবাসন পুলিশের সঙ্গে কাজ করছেন।
ভুক্তভোগীদের আত্মীয়দের ভাষ্য
সিডনির বোটানির বাসিন্দা তবারক খান বলেন, ‘এজেন্সি থেকে আমার ভাতিজা ভিসা পেলে আমি ভিইভিওতে যাচাই করে দেখি, ভিসা আছে। তবে ভিসার ধরন দেখে আমার সন্দেহ হয়। ভিসা পাওয়ার পর তাঁকে টাকা দিতে চাপ দেয় প্রতারক চক্র। পাশাপাশি তাঁকে ঢাকা থেকে সরাসরি অস্ট্রেলিয়া না গিয়ে নেপাল নেওয়ার কথা বলে। এরপর আমি আরেকটু ঘাঁটাঘাঁটি করে ভিসাটি ভুয়া বলে নিশ্চিত হই।’
সিডনির লেপিংটনের রামিন’স ফার্মের স্বত্বাধিকারী হারুন রশিদ বলেন, ‘আমার আত্মীয়ের সঙ্গে প্রায় ১৬ লাখ টাকায় চুক্তি করেছিল প্রতারক চক্র। আত্মীয়কে বলা হয়েছিল, এই ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে কৃষিকাজ করতে পারবেন। তিন বছর পর স্থায়ী হওয়ার আবেদন করা যাবে। সবকিছু শুনে আমার খটকা লাগে। কারণ, সাধারণ কর্মভিসার আবশ্যিক শর্তপূরণের যোগ্যতা আমার ওই আত্মীয়ের নেই। ভিসার টিআরএন নম্বরের সঙ্গে ভিসা গ্রান্ট নম্বর মিলিয়ে দেখি, ভিসাটি ভুয়া।’
এ ছাড়া সিডনির প্রবাসী বাংলাদেশি তথ্যপ্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ আবু তারিকসহ আরও অনেকে এই প্রতিবেদককে একই ধরনের বেশ কয়েকটি ভুয়া ভিসার ঘটনার বিবরণ ও তথ্য জানান।
ভুয়া ভিসা যেভাবে করা হয়
ভুক্তভোগী ও অভিবাসন আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রতারকেরা অস্ট্রেলিয়ার ওয়ার্কিং হলিডে (সাবক্লাস ৪১৭) এবং ই–ভিজিটর (সাবক্লাস ৬৫১) ভিসার সুযোগ নেয়। অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণের সময় কাজ করার ভিসা হচ্ছে ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা। আর কয়েকটি দেশের নাগরিকদের জন্য প্রযোজ্য ডিজিটাল ভিসা হচ্ছে ই-ভিজিটর ভিসা।
অস্ট্রেলিয়া ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা দেয় বিশ্বের মাত্র ১৯টি দেশের নাগরিকদের। এর মধ্যে রয়েছে বেলজিয়াম, কানাডা, সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, হংকং, চীন ইত্যাদি দেশ। আর ই–ভিজিটর ভিসা দেওয়া হয় ৩৬ দেশের নাগরিকদের। এমন দেশের তালিকায় রয়েছে কানাডা, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জাপান, ভ্যাটিক্যান, পর্তুগাল, ইতালি, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া ইত্যাদি দেশ। এই দুই ক্যাটাগরির ভিসার তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই।
অস্ট্রেলিয়ার ভিসার জন্য অভিবাসন বিভাগের অনলাইন পোর্টালে নিজের ই–মেইল ব্যবহার করে ইমিঅ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এই ইমিঅ্যাকাউন্টে আবেদন করলে পাসপোর্ট ও অন্যান্য আবশ্যিক শর্ত যাচাই করে ভিসা দেওয়া হয়। ওয়ার্কিং হলিডে ও ই–ভিজিটর ভিসা অনেকটাই স্বয়ংক্রিয় ভিসার মতো। পাসপোর্টের তথ্য দিয়ে ফি জমা দিলেই ভিসা দেওয়া হয়।
প্রতারক চক্র ইমিঅ্যাকাউন্টে আবেদনকারীর সব তথ্যই সঠিক দেয়। কিন্তু ‘কান্ট্রি অব পাসপোর্ট’ অর্থাৎ আবেদনকারীর পাসপোর্ট কোন দেশের—এ প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের জায়গায় ইমিগ্রেশন সিস্টেমে ওই ভিসার জন্য অনুমোদিত দেশের নাম দেওয়া হয়। এতে তারা ভিসা পেয়ে যায়। কিন্তু এই ভিসা দিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্টে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সুযোগ নেই।
অভিবাসন আইনজীবীরা বলছেন, প্রতারকেরা কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজটি করে, তার একটি নজির মেলে ভিসা যাচাইয়ের সময়। অন্য দেশের নাগরিক হিসেবে ভিসা ইস্যু করা হলেও ভিইভিও-তে ভিসা যাচাইয়ের সময় ঠিকই বাংলাদেশের নাম দেখা যায়। এটা করা হয় সুকৌশলে। ভিসা মঞ্জুর হওয়ার পর ইমিঅ্যাকাউন্টে গিয়ে ‘ভুল তথ্য সংশোধন’ সুবিধাটি ব্যবহার করে প্রতারক চক্র এই কাজটি করে থাকে।
বাংলাদেশিদের কোন ধরনের ভিসা
টেম্পোরারি স্কিলড সর্টেজ ভিসা (সাবক্লাস-৪৮২) আওতায় বাংলাদেশিদের ওয়ার্কিং ভিসা দেয় অস্ট্রেলিয়া। সে দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনশক্তি নিতে স্পনসর করতে পারে।
এ জন্য অস্ট্রেলিয়ায় যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে ইংরেজিতে দক্ষতার প্রমাণস্বরূপ আইইএলটিএস করতে হয়। সঙ্গে কাজের দক্ষতার সনদ লাগে। এই ভিসায় বাংলাদেশ থেকে খুব কমই মানুষ যায়।
বাংলাদেশিরা অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণের জন্য সাধারণত ভিজিটর ভিসার (সাবক্লাস–৬০০) জন্য আবেদন করতে পারেন। এই ভিসার মধ্যে ভ্রমণ, পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ—এমন কয়েকটি ধরনও রয়েছে।
যেভাবে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হয়
অস্ট্রেলিয়ার ভিসার সব কাজই হয় অনলাইনে। ভিসার যাবতীয় কাগজপত্র জমা হয় ইমিঅ্যাকাউন্টে। ভিসার জন্য দূতাবাসে যেতে হয় না। তবে ভিসার আবেদনের পর দুটি কাজ আবেদনকারীকে সশরীরে করতে হয়—বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা। ঢাকায় অস্ট্রেলিয়া সরকারের অনুমোদিত ভিসা এজেন্ট ভিএফএস গ্লোবালে বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে হয়।
এ জন্য ভিসা আবেদনের কপি ও অভিবাসন বিভাগের দেওয়া বায়োমেট্রিকের চিঠি জমা দিতে হয়। এই কাজেও জালিয়াতি করে প্রতারক চক্র। আলাদা করে আবেদনকারীর নামে একটি ভিজিটর ভিসার আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের কপি দিয়েই বায়োমেট্রিক করানো হয়। এরপর ওই ভিজিটর ভিসার আবেদন তুলে নেওয়া হয়। এরপর বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার নির্ধারিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার কেন্দ্রের বদলে অন্য কোনো ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
ফাঁদ চেনার উপায়
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের ভিসা যাচাই করতে অস্ট্রেলিয়ার সরকারি ওয়েবসাইটই ভিইভিও ব্যর্থ হচ্ছে। তাহলে এসব ভুয়া ভিসা শনাক্তের উপায় কী? প্রথম কথা হচ্ছে, ওয়ার্কিং হোলিডে (সাবক্লাস ৪১৭) এবং ই–ভিজিটর (সাবক্লাস ৬৫১)—এই দুই শ্রেণির ভিসার অনুমোদিত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নেই।
দ্বিতীয়ত, আরেকটি উপায় হচ্ছে, আগে ভিসা পরে টাকা। অভিবাসন আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট বৈধ এজেন্সি কখনোই ভিসা হওয়ার পর টাকা নেবে, এমনটা বলবে না। তবে অস্ট্রেলিয়ার ভিসার আইনি খরচ অনেক হওয়ায়, কয়েক কিস্তিতে টাকা নেওয়ার একটা প্রচলন রয়েছে। তবে আগে ভিসা, পরে টাকা মানেই ‘রেড ফ্ল্যাগ’, আপনার সতর্ক হওয়া উচিত।
তৃতীয়ত, ঢাকা থেকে সরাসরি অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার টিকিট কিনতে না পারা আরেকটি গলদ।
চতুর্থত, অস্ট্রেলিয়ার সরকার নির্ধারিত বাংলাদেশের তিনটি ক্লিনিকের বাইরে অন্য কোথাও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোও প্রতারণার লক্ষণ।
প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা আমাদের প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, শুধু টাকা দিয়েই যেকোনো দেশের ভিসা পাওয়া যায়। আসলে তা নয়। অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পেতে ভিসার প্রতিটি আবশ্যিক শর্ত পূরণ করা বাধ্যতামূলক। আবেদনকারীর বেশ কিছু যোগ্যতা থাকতে হয়। সুতরাং, এসব যোগ্যতা না থাকলে এমন প্রস্তাবে রাজি হওয়া মোটেই উচিত নয়।
অস্ট্রেলিয়ার ভ্রমণ ভিসা ছাড়া প্রায় সব ধরণের কাজের ভিসায় ইংরেজি ভাষার দক্ষতার পরীক্ষায় আবশ্যিক নম্বর পেতে হবে। পাশাপাশি দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, পড়াশোনার পেশাভেদে আবশ্যিক শর্ত পূরণ করতে হবে। আইইএলটিএস অথবা এ ধরনের স্বীকৃত ইংরেজি দক্ষতা ছাড়া কাজের ভিসা পাওয়া ৯৯ শতাংশই অসম্ভব। তাই ভিসার আবশ্যিক শর্ত সম্পর্কে আগে জানুন।
অস্ট্রেলিয়ার তিন মাসের কম মেয়াদের ভ্রমণ ভিসায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা লাগে না। এর বেশি মেয়াদের ভ্রমণ ভিসা হলে ভিএফএস গ্লোবালে আঙলের ছাপের পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরীক্ষা আবশ্যক। কাজের ভিসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হয়। ঢাকায় নির্ধারিত তিনটি ক্লিনিক রয়েছে। এর বাইরে অন্য ক্লিনিকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হলে বুঝবেন, ফাঁদে পড়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন–সংক্রান্ত সেবা নিতে সবচেয়ে উত্তম, অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত অভিবাসন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা। বাংলায় কথা বলতে বাংলাদেশি অভিবাসন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। পাশাপাশি যেসব এজেন্সি অভিবাসন আইনজীবীর মাধ্যমে পরিচালিত তেমন এজেন্সির সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন।
অস্ট্রেলিয়ার মাইগ্রেশন এজেন্ট নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে গিয়ে আইনজীবীর নাম অথবা এমএআরএন নম্বর অনুসন্ধান করে দেখা যায়। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ অবস্থায় সরকারের নিবন্ধিত অভিবাসন সহায়ক এজেন্সি ছাড়া যেকোনো মধ্যস্থতাকারী থেকে দূরে থাকতে হবে।
কাউসার খান অভিবাসন আইনজীবী ও সাংবাদিক, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া। [email protected]