এবার কোরবানির পশু বেশি অবিক্রীত, কী বলছেন খামারিরা

সিলেট শহরতলিতে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। স্থানীয় লোকজন হাটে গরু এনেছেন বিক্রির জন্য। শিবেরবাজার, সিলেট, ২৫ জুন
ছবি: প্রথম আলো

গতবারের তুলনায় এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু বেশি অবিক্রীত রয়ে গেছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবেই এ বছর চাহিদার চেয়ে সাড়ে ৩ লাখ কম পশু কোরবানি হয়েছে।

খামারিরা বলছেন, মানুষ আর্থিকভাবে সংকটে রয়েছে। এ কারণে এ বছর ছোট পশুর চাহিদা ছিল বেশি। কয়েকজন মিলে ভাগাভাগি করে পশু কোরবানি দেওয়ার সংখ্যাও এবার উল্লেখ্যযোগ্য ছিল। আর্থিক সংকটই পশু অবিক্রীত থাকা বা কোরবানি কম হওয়ার প্রধান কারণ।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। এর মধ্যে ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি পশু কোরবানি হয়েছে। অর্থাৎ, ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫২১টি পশু অবিক্রীত রয়ে গেছে বা কোরবানি হয়নি। গত বছর কোরবানিতে অবিক্রীত পশুর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৬৯ হাজার ৭১৭।
অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, এবার কোরবানির জন্য চাহিদা ছিল ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি পশুর। অর্থাৎ, চাহিদার চেয়ে সাড়ে ৩ লাখ পশু কম কোরবানি হয়েছে।
‘উদ্বৃত্ত থাকা ঠিকই আছে’

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। এর মধ্যে ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি পশু কোরবানি হয়েছে। অর্থাৎ, ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫২১টি পশু অবিক্রীত রয়ে গেছে বা কোরবানি হয়নি। গত বছর কোরবানিতে অবিক্রীত পশুর সংখ্যা ছিল ২১ লাখ ৬৯ হাজার ৭১৭।

জানা গেছে, এ বছর সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে, ২৫ লাখ ৪৮ হাজারটি। সবচেয়ে কম কোরবানি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে, ৩ লাখ ৮৫ হাজারটি পশু।

এ বছর কোরবানিতে বিক্রির জন্য ৬৮০টি পশু প্রস্তুত করেছিলেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের আল মদিনা ক্যাটলের কর্ণধার রমজান আলী। এর মধ্যে ১৬০টি গরু অবিক্রীত রয়ে গেছে।

রমজান আলী প্রথম আলোকে বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো বিক্রি হয়নি। কারণ, মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। এ কারণে মানুষ কম কোরবানি দিয়েছে। ভাগে কোরবানি এবার বেশি হয়েছে, যা মাঝখানে কয়েক বছর কম ছিল। মানুষ যদি কোরবানি দিতে পারত, পশু যা ছিল, তাতে ঘাটতি দেখা দিত।

প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো বিক্রি হয়নি। কারণ, মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না। এ কারণে মানুষ কম কোরবানি দিয়েছে। ভাগে কোরবানি এবার বেশি হয়েছে, যা মাঝখানে কয়েক বছর কম ছিল। মানুষ যদি কোরবানি দিতে পারত, পশু যা ছিল, তাতে ঘাটতি দেখা দিত।
রমজান আলী, কর্ণধার, আল মদিনা ক্যাটল, মোহাম্মদপুর, ঢাকা

ছোট গরু ও অনেক বড় গরুর চাহিদা বেশি ছিল বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জের এসএস ক্যাটল ফার্মের মো. লুৎফর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা মূল্যের ছোট গরুর চাহিদা বেশি ছিল। পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার গরুও বিক্রি হয়েছে, যা ধনীরা কিনেছেন। মাঝারি আকারের গরু কম বিক্রি হয়েছে।
লোকসান এড়াতে কম লাভে গরু বিক্রি করে দিয়েছেন জানিয়ে লুৎফর রহমান বলেন, ক্রেতাদের মাথায় গত বছরের দাম ছিল। কিন্তু এর মধ্যে যে খাদ্য, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খরচ বেড়ে গেছে, তা ক্রেতাদের মাথায় ছিল না।

অবশ্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ রেয়াজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুধু কোরবানির সময় পশু দেব, তারপর সারা বছর সংকট থাকবে, এটা যেন না হয়। আমাদের স্টক (মজুত বা অবিক্রীত পশু) থাকবে, সারা বছর অনেকগুলো উৎসব আছে। প্রতিদিন গরুর প্রয়োজন হয়। সেই হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ঠিকই আছে।’

আরও পড়ুন

গরুর চেয়ে ছাগল বেশি কোরবানি

২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিন বছর ছাগল-ভেড়ার চেয়ে গরু-মহিষ বেশি কোরবানি হয়েছে। এরপর চিত্র উল্টে যায়। ২০২১ সাল থেকে বা শেষ তিন বছর গরু-মহিষের চেয়ে ছাগল-ভেড়া বেশি কোরবানি হয়েছে। এবার ৪৬ লাখ ৮৮ হাজার ৯৩৫টি গরু-মহিষ কোরবানি হয়েছে, সেখানে ছাগল-ভেড়া কোরবানি হয়েছে ৫৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৩৫টি। অর্থাৎ, গরু-মহিষের চেয়ে ছাগল-ভেড়া সাড়ে ৬ লাখের বেশি কোরবানি হয়েছে।

এ ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষের আর্থিক সক্ষমতার কথাই বলছেন। বড় প্রাণী বা গরু-মহিষ কোরবানি দেওয়ার সক্ষমতা কমায় মানুষ ছোট প্রাণী বা ছাগল-ভেড়া দিকে ঝুঁকেছে।

আরও পড়ুন

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার রাজাবাড়ী গ্রামের মো. হাবিবুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর আমরা একটি-দুটি পশু কোরবানি দিয়েছিলাম। এবার দ্রব্যমূল্যসহ সবকিছুর দাম বেশি। সব মিলিয়ে কুলিয়ে ওঠা যায়নি। তাই এবার শুধু একটি খাসি কোরবানি দিয়েছি।’

তবে বিষয়টিকে এভাবে দেখতে নারাজ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) মোহাম্মদ রেয়াজুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বড় শহরগুলোয় গরু বেশি কোরবানি হয়। উত্তরাঞ্চল বা গ্রামাঞ্চলে ছাগল-ভেড়া বেশি কোরবানি হয়।

আরও পড়ুন