গোঁজামিলের ব্যয় দেখিয়ে ভাড়া বাড়ে বাসে

প্রতিবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর নানা গোঁজামিলের ব্যয় যোগ করে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের মুখ্য ভূমিকা রয়েছে।

রাজধানীর গাবতলী থেকে সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ফিটনেসবিহীন বাস। গতকাল দুপুরে গাবতলীর বিআইডব্লিউটিএর ল্যান্ডিং স্টেশন এলাকা থেকে তোলা
শুভ্র কান্তি দাশ

মহানগরে চলাচল করে, এমন একটি নতুন বাসের মূল্য ৩৫ লাখ টাকা। এটি চলবে ১০ বছর। এর মধ্যে প্রতি পাঁচ বছরে একবার এসব বাস নতুন করে সংস্কার (রেনোভেশন) করা হয়। এতে ব্যয় সাড়ে ছয় লাখ টাকা। এর বাইরে দৈনন্দিন মেরামত, সংস্কার এবং যন্ত্রপাতির পরিবর্তন তো আছেই। এটা রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে চলাচলকারী নগর পরিবহনের বাসের কথা বলা হচ্ছে। এই দুই মহানগরে চলাচলকারী বাস দেখলে কি এমন ব্যয়বহুল যত্নের চিহ্ন পাওয়া যাবে? মোটেই না। এসব বাস মানেই ছালবাকল উঠে যাওয়া, রংচটা, লক্কড়ঝক্কড়। ময়লা-ছেঁড়া আসন। অথচ এমন ব্যয়ের ভিত্তিতে এবার সর্বশেষ বাসের ভাড়া নির্ধারণ করেছে সরকার।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর সর্বশেষ গত শনিবার নগর পরিবহন ও দূরপাল্লার বাসের ব৵য় বিশ্লেষণ করা হয়। পরে নগর পরিবহনে কিলোমিটারপ্রতি ৩৫ পয়সা এবং দূরপাল্লার পথে ৪০ পয়সা করে ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

সরকার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দেয় গত শুক্রবার রাতে। মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাস ও লঞ্চে ভাড়ার পরিমাণ কত বাড়তে পারে, তার একটি ধারণা দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। গত শনিবার মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রতি কিলোমিটারে বাসভাড়া সর্বোচ্চ ২৯ পয়সা আর লঞ্চে ৪২ পয়সা বাড়তে পারে। যদিও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের হিসাবের চেয়ে দূরপাল্লায় কিলোমিটারপ্রতি ১৩ পয়সা এবং নগরে কিলোমিটারে ৬ পয়সা করে বেশি ভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বিআরটিএ।

‘আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে যে ব্যয় বিশ্লেষণ হয়, এর তথ্য–উপাত্ত মালিক–শ্রমিক সংগঠনগুলোর সরবরাহ করা। বিআরটিএর নিজের এবং স্বাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়ে এর কোনো যাচাই হয় না। ফলে দর–কষাকষিতে বিআরটিএ বা সরকারপক্ষ থাকে দুর্বল অবস্থানে। আর মালিক–শ্রমিকপক্ষ থাকে শক্তিশালী। যাত্রীদের কথা শোনা হয় না। বাড়তি ভাড়া মেনে নেওয়া ছাড়া তাদের উপায় থাকে না।’
সামছুল হক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ

বাসের ভাড়া ঠিক করে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বিআরটিএ। সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ের করা হিসাব তাহলে পাল্টে গেল কেন? এখানেই শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে।

বিআরটিএ ব্যয় বিশ্লেষণের সময় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি বাসের অন্যান্য ব্যয় ও বিনিয়োগেরও বিশ্লেষণ করেছে। যদিও প্রতিবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর নানা গোঁজামিলের ব্যয় যোগ করে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের মুখ্য ভূমিকা থাকে।

বিআরটিএর ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটির প্রধান সংস্থাটির চেয়ারম্যান। কমিটিতে আছেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা। এর বাইরে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের দুজন সদস্য ছিলেন। কখনো কখনো মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধির সংখ্যা চার-পাঁচজনও হয়।

বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ব্যয় বিশ্লেষণের ফর্মুলাটি অনেক পুরোনো। আরও যুগোপযোগী করা যেতে পারে। এবার সময় কম ছিল। এরপরও ব্যয় বিশ্লেষণের বৈঠকে অনেক বিতর্ক হয়েছে। মালিক-শ্রমিক নেতারা অনেক বেশি ভাড়া দাবি করেছিলেন। সেটা কমানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি আদায় করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এ ব্যয় বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসলে যাত্রীদের ঠকানো হচ্ছে। কারণ, আজগুবি ব্যয় এবং অযৌক্তিক নানা শর্ত যোগ করার কারণে বাড়তি ভাড়া ঘোষণা করা হয়। আবার সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া ভাড়া বাস্তবে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা না মেনে আরও বাড়তি আদায় করছেন। এর ফলে যাত্রীরা আসলে দুবার প্রতারিত হচ্ছেন। প্রথমবার টেবিলে বসে ভাড়া ঠিক করার সময় যাত্রীরা ঠকছেন। দ্বিতীয়বার বাসে ওঠার পর মালিক-শ্রমিকদের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।

মূল কারণ মালিক-শ্রমিক প্রভাব

ব্যয় বিশ্লেষণের মাধ্যমে যাত্রীদের ঠকানোর কাজটা কীভাবে সম্ভব হয়? কারণ, পরিবহন সমিতিগুলোর নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী সদস্য। মালিক-শ্রমিক সমিতির নামে ওঠা চাঁদা তাঁরাই নিয়ন্ত্রণ করেন। আবার ভাড়া নির্ধারণ কমিটিতে তাঁরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। অর্থাৎ আলোচনার টেবিল ও মাঠে—দুই জায়গাতেই তাঁদের কর্তৃত্ব।

বর্তমানে সারা দেশে পরিবহনমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মসিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ। অন্যদিকে পরিবহনশ্রমিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহনশ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

ব৵য় বিশ্লেষণের সময় ১২টি বিষয় আমলে নেওয়া হয়। আর ১৬-২০টি ব্যয়ের খাত চিহ্নিত করে এগুলোতে বছরে কত টাকা খরচ হয়, তা বের করা হয়। এর সঙ্গে ১০ শতাংশ মুনাফা যোগ করে প্রতি কিলোমিটারে কত ব্যয় হয়, সেটা বের করা হয়। কিন্তু পরিবহন খাতে যে চাঁদাবাজি হয়, সেই হিসাবটা ব্যয় বিশ্লেষণে আসে না। এই চাঁদার মধ্যে রয়েছে মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় মাস্তানের ভাগ।

আজগুবি ব্যয়

নগর পরিবহনের মতো দূরপাল্লার বাসেও সংস্কারে (রেনোভেশন) ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। দূরপাল্লার বাসে দুর্ঘটনাসহ ছোটখাটো ঝুঁকির জন্য বছরে তিন লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আদতে দূরপাল্লার বাস দুর্ঘটনায় না পড়লে সংস্কারের প্রয়োজন পড়ে না। অথচ বিআরটিএর ব্যয় বিশ্লেষণে দুটি আলাদা খরচের খাত দেখানো হয়েছে, যা অনেকটা অযৌক্তিক।

দূরপাল্লার বাসের ভাড়ার ক্ষেত্রে আরও একটি বড় শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে। ঢাকার বাইরে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় কিংবা জেলার ভেতরে অন্য উপজেলায় চলাচলকারী বাসের ভাড়াও দূরপাল্লার বাসের সমান। অথচ এসব বাসের বেশির ভাগই পুরোনো। ঢাকা কিংবা দূরপাল্লার পথে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাওয়া বাসই সেখানে চলে। সারা দেশে বাস-মিনিবাস আছে প্রায় ৮০ হাজার। এর মধ্যে নগর এবং দূরপাল্লার পথে চলাচল করে বড়জোর ৩০ হাজার। বাকিগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলাচল করে।

নগর পরিবহনের বাস গ্যারেজ ও টার্মিনালে রাখার জন্য আলাদা ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। কিন্তু ঢাকার কোনো বাসের জন্য আলাদা গ্যারেজ নেই। সড়কের পাশেই থাকে এসব বাস।

দূরপাল্লার বাসে গ্যারেজ, টার্মিনাল ও ব্যবস্থাপনার ব্যয় ধরা হয়েছে বছরে দুই লাখ টাকা। কিন্তু অল্প কিছু বড় কোম্পানি বাদে বাকি বাস রাখার নিজস্ব কোনো গ্যারেজ নেই।

নগর পরিবহনের বাসপ্রতি এক বছর পরপর ইঞ্জিন ওভারহোলিংয়ের জন্য প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয় বলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া তিন মাসে একবার রক্ষণাবেক্ষণে ২৭ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। অথচ ঢাকার বাসের বেশির ভাগেরই সামনে-পেছনের বাতি নেই। জানালা-দরজা থাকে ভাঙা।

ঋণের সুদ ও বিনিয়োগ

রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রামে একটি বাস ক্রয়ের মূল্য দেখানো হয়েছে ৩৫ লাখ টাকা, যার ২১ লাখ টাকাই ঋণ। এ ঋণের সুদ ১০ শতাংশ হারে। সব মিলিয়ে একটি বাসের ক্রয়, ঋণের সুদ, নিবন্ধনসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা।

প্রায় ৪৬ লাখ টাকার এ বাস ১০ বছর চলবে—এটা ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কিলোমিটার আড়াই টাকা। ২০১৫ সালে অল্প কিছু কোম্পানির অধীনে পুরো ঢাকার বাস পরিচালনার উদ্যোগ নেওয়ার পর একটি গবেষণা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এতে দেখা যায়, চলমান বাসের অর্ধেকের বেশি ১০ থেকে ১৫ বছরের পুরোনো। অর্থাৎ বিনিয়োগ সুদে-আসলে উঠে যাওয়ার পরও এসব পুরোনো বাসে নতুনের সমান ভাড়া ধরা হয়েছে।

গত বছর নভেম্বর মাসে একবার বাসের ব্যয় বিশ্লেষণ করে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছিল। ৯ মাসের ব্যবধানে গত শনিবার যে ব্যয় বিশ্লেষণ করা হয়, তাতে দূরপাল্লার বাসের মূল্য ৫ লাখ টাকা বেড়ে গেছে বলে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ গত বছর ছিল ৭৫ লাখ, এবার ৮০ লাখ হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ লাখ টাকা ঋণের। এর জন্য পাঁচ বছরে সুদ দিতে হবে ২৪ লাখ টাকা। দূরপাল্লার পথে বাসেরও বয়সসীমা ধরা হয়েছে ১০ বছর। অথচ এর চেয়ে পুরোনো বাসও চলাচল করছে। সব মিলিয়ে দূরপাল্লার একটি বাসে বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৪ লাখ টাকা।

সাধারণত পরিবহনমালিকেরা বিভিন্ন কোম্পানির বাস সামান্য কিছু টাকা বিনিয়োগ করে মাসিক কিস্তিতে পরিশোধের শর্তে ক্রয় করেন। এ জন্য সুদ বেশি দিতে হয়। অর্থাৎ অল্প বিনিয়োগ করে ঋণের ওপর দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করেন তাঁরা।

মজুরি ও বোনাসের গল্প

ব্যয় বিশ্লেষণ অনুসারে, নগর পরিবহনে চালকের বেতন দৈনিক ১ হাজার টাকা, ভাড়া আদায়কারীর ৭০০ এবং চালকের সহকারীর বেতন ৪০০ টাকা। কিন্তু ঢাকা ও চট্টগ্রামের কোনো বাস সাধারণত এভাবে বেতন দিয়ে পরিচালিত হয় না। দৈনিক ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় চুক্তিতে এসব বাস চালান চালকেরা। জ্বালানি খরচ, চাঁদা মিটিয়ে বাড়তি যা থাকে তা ভাগ করে নেন চালক, ভাড়া আদায়কারী ও সহকারী। এ জন্য বাড়তি আয়ের আশায় পরিবহনচালকেরা কার আগে কে যাত্রী তুলবেন, এ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। এটাকে নগরে সড়ক দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলার মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ব্যয় বিশ্লেষণে বলা হয়েছে—বছরে দুবার শ্রমিকদের ৪০ হাজার টাকা বোনাস দেওয়া হয়। আদতে নগর পরিবহনে বোনাসের কোনো ব্যবস্থাই নেই। বরং ঈদ এলে পরিবহনশ্রমিকেরা বোনাসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে দু-তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় করেন। অনেক নগর পরিবহনের বাস দূরপাল্লার পথে বাড়তি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করে।

দূরপাল্লার পথে বাসের চালক, সুপারভাইজার এবং সহকারীর পেছনে বছরে প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা খরচ হয় বলে ব্যয় বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে। তবে বড় কিছু কোম্পানি বাদ দিলে দূরপাল্লার পথেও মালিকেরা বাস চুক্তিতে চালান।

ভাড়া নির্ধারণ ও যাত্রী সংখ্যা

পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় বাসেই মানুষ অফিস সময়ে ঝুলে যাতায়াত করেন। আসনের অতিরিক্ত গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হয়। আর যেসব বাস আসনের সমান (সিটিং সার্ভিস) নামে চলে, সেগুলোতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুণ পর্যন্ত আদায় করা হয়। অথচ ভাড়া নির্ধারণের সময় বলা হয়েছে ঢাকার বাস ৫ শতাংশ আসন খালি রেখে চলে।

এবারের ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকার একটি বাস পরিচালনায় প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয় ১২০ টাকা ৮৯ পয়সা। প্রতিটি বাসে ৯৫ শতাংশ আসন যাত্রী নিয়ে চললে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া আসে আড়াই টাকা। যদি শতভাগ আসন পূর্ণ ধরে হিসাব করলে ভাড়া কমে দাঁড়াত দুই টাকার কাছাকাছি।

একইভাবে দূরপাল্লার পথে বাস ৭০ শতাংশ আসন ফাঁকা নিয়ে চলাচল করে বলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ ৫২ আসনের একটি বাসে ১৬টি ফাঁকা নিয়ে চলাচল করে। বাসগুলোতে প্রায়ই শতভাগ যাত্রী পরিবহন করা হয়। দূরপাল্লার বাসে অনেক সময় কিলোমিটার হিসাব করে ভাড়া ঠিক হয় না। যেমন কোনো একজন ঢাকা থেকে টিকিট কেটে ময়মনসিংহের বাসে উঠলেন। তিনি শেষ গন্তব্যের আগে ভালুকা কিংবা ত্রিশাল নেমে গেলেও পুরো পথের ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।

বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক গত কয়েক বছরে তাদের গবেষণায় দেখিয়েছে, ৮০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত হয় সড়কপথে। বাকিরা রেল ও নৌপথে যাতায়াত করেন। দেশের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠীকে এভাবে ভাড়া নির্ধারণের সময় কৌশলে এবং সড়কে অনেকটা জোর করে ঠকানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে যে ব্যয় বিশ্লেষণ হয়, এর তথ্য–উপাত্ত মালিক–শ্রমিক সংগঠনগুলোর সরবরাহ করা। বিআরটিএর নিজের এবং স্বাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়ে এর কোনো যাচাই হয় না। ফলে দর–কষাকষিতে বিআরটিএ বা সরকারপক্ষ থাকে দুর্বল অবস্থানে। আর মালিক–শ্রমিকপক্ষ থাকে শক্তিশালী।

যাত্রীদের কথা শোনা হয় না। বাড়তি ভাড়া মেনে নেওয়া ছাড়া তাদের উপায় থাকে না।’বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক গত কয়েক বছরে তাদের গবেষণায় দেখিয়েছে, ৮০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত হয় সড়কপথে। বাকিরা রেল ও নৌপথে যাতায়াত করেন। দেশের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠীকে এভাবে ভাড়া নির্ধারণের সময় কৌশলে এবং সড়কে অনেকটা জোর করে ঠকানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহনবিশেষজ্ঞ সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে যে ব্যয় বিশ্লেষণ হয়, এর তথ্য–উপাত্ত মালিক–শ্রমিক সংগঠনগুলোর সরবরাহ করা। বিআরটিএর নিজের এবং স্বাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়ে এর কোনো যাচাই হয় না। ফলে দর–কষাকষিতে বিআরটিএ বা সরকারপক্ষ থাকে দুর্বল অবস্থানে। আর মালিক–শ্রমিকপক্ষ থাকে শক্তিশালী। যাত্রীদের কথা শোনা হয় না। বাড়তি ভাড়া মেনে নেওয়া ছাড়া তাদের উপায় থাকে না।’