এ রকম চিঠি অতীতে এসেছে, ভবিষ্যতেও আসতে পারে: শাহরিয়ার আলম

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো মার্কিন কংগ্রেসের ছয় সদস্যের চিঠিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে না ঢাকা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, এ রকম চিঠি অতীতে এসেছে, ভবিষ্যতেও আসতে পারে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড আরও বাড়বে।

মার্কিন কংগ্রেসের ছয় সদস্যের চিঠির বিষয়ে আজ সোমবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।

মার্কিন কংগ্রেসের ছয় সদস্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে লেখা চিঠিতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষ যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, সে সুযোগ সৃষ্টির জন্য প্রেসিডেন্টকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এবং দায়ী ব্যক্তিদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুরোধ করেন তাঁরা।

২ জুন ভার্জিনিয়ার কংগ্রেস সদস্য বব গুড প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে লেখা ওই চিঠি নিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেন। চিঠিতে স্বাক্ষরদানকারী অন্য পাঁচ কংগ্রেস সদস্য হলেন স্কট পেরি, ব্যারি মোর, ওয়ারেন ডেভিডসন, টিম বুরচেট ও কিথ সেলফ।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের চিঠি সরকার সংগ্রহ করেছে। অন্য চিঠিপত্রের মতো এখানেও অসামঞ্জস্য আছে, বাড়াবাড়ি আছে। তথ্যের একটা বড় ধরনের ঘাটতি আছে। কংগ্রেসম্যানদের প্রচেষ্টা দুর্বল ও সস্তা।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের চিঠিটি পুরোপুরি পড়তে ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথাও বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের রাজনীতিবিদেরা, সংসদ সদস্যরা, বিশেষ করে অন্য দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে অনেক কিছু বলেন, অনেকে হয়তো লেখেনও। হয়তো আমার বিরুদ্ধে লেখা হয়, যেটা আমি জানি না। তবে এটা নির্ভর করে সরকারপ্রধান বিষয়টিকে বিবেচনায় নেবেন কি না।’

ওই চিঠি দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না উল্লেখ করে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ রকম চিঠি অতীতে এসেছে, ভবিষ্যতেও আসতে পারে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড আরও বাড়বে। তবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সব পক্ষের কাছে, এমনকি আমরা ওই কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে কথা বলব। শুধু তা–ই নয়, এ অঞ্চল নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে বা এ ধরনের বিষয়ে যাদের আগ্রহ আছে, তাদের সকলকেই নিয়মিতভাবে আমাদের অবস্থান জানাব।’

‘অখণ্ড ভারতের’ মানচিত্র সম্পর্কে জানতে চায় বাংলাদেশ

ভারতের নতুন সংসদ ভবনে ম্যুরালের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা ‘অখণ্ড ভারতের’ মানচিত্র নিয়েও কথা বলেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। অখণ্ড ভারতের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যেটা জেনেছি—ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন যে এটি অশোকা সাম্রাজ্যের মানচিত্র, এটি খ্রিষ্টের জন্মের ৩০০ বছর আগের। সেই সময়ের যে অঞ্চলটি ছিল, তার একটি মানচিত্র এবং এটি একটি ম্যুরাল। ওই ম্যুরালে চিত্রায়ণ করা হয়েছে মানুষের বিভিন্ন যাত্রা। এখানে সাংস্কৃতিক মিল থাকতে পারে, কিন্তু এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। এটি নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার দরকার নেই।’

দিল্লিতে বাংলাদেশ মিশনকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে তাদের সরকারি ব্যাখ্যা কী, সেটা জানাতে বলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।

সীমা লঙ্ঘন করলেই ব্যবস্থা

বিএনপির নেতা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরির আলাদা বৈঠক বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, বিদেশি রাষ্ট্রদূতেরা যদি তাঁদের কাজের সীমারেখা অতিক্রম করেন, তাহলে সরকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার বিস্তারিত (জাপানের রাষ্ট্রদূতের দুই বৈঠক সম্পর্কে) জানা নেই। ছয় মাস আগে অবশ্যই একটা পর্ব গেছে। যদি কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত আবার সে ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হন, যেটা আমরা মনে করি যে তাঁদের কাজের সীমারেখা অতিক্রম করছে, তাহলে আমরা অবশ্যই তা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে এখন পর্যন্ত এ রকম কিছু আমাদের চোখে পড়েনি।’

আরও পড়ুন