বেইলি রোডে আগুনে নিহতদের স্মরণে বুয়েটে দোয়া–মানববন্ধন, ১৪ দফা দাবি
রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনের ঘটনায় প্রাণ হারানো বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুই শিক্ষার্থীসহ নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দোয়া মাহফিল ও মানববন্ধন করেছেন বুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
পরে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের মতো অসাবধানতাজনিত সব দুর্ঘটনার পেছনে দায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করাসহ ১৪ দফা দাবি জানিয়েছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
আজ শনিবার বেলা পৌনে দুইটায় বুয়েট ক্যাফেটোরিয়ার সামনে শিক্ষক–শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। বুয়েটের উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার, সহ–উপাচার্য আবদুল জব্বার খান, কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ম তামিম, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত প্রমুখ এতে অংশ নেন।
দোয়া মাহফিল শেষে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। এতে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক মিজানুর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক অংশ নেন।
এ আয়োজনে শিক্ষার্থীদের হাতে ‘আজকে লামিশা কালকে কে?’, ‘আজকে নাহিয়ান কালকে কে?’, ‘দুর্ঘটনা নাকি হত্যাকাণ্ড!!’, ‘এই হত্যার দায়ভার কার?’, ‘এই দায়িত্বহীনতার দায়ভার কার?’, ‘এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল। প্ল্যাকার্ড হাতে পাঁচ মিনিট সেখানে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা।
পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১৪ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো বেইলি রোডের অগ্নি দুর্ঘটনার মতো অসাবধানতাজনিত সব দুর্ঘটনার পেছনে দায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য ভবনে বিল্ডিং কোডসহ জরুরি কোড অমান্যকারী ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়া, প্রতিটি ভবন থেকে রাজউকের দেওয়া নিরাপত্তা লাইসেন্স নিয়মিত নজরদারি করা, দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে প্রতিটি বাণিজ্যিক ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা–ব্যবস্থা নিয়মিত পরিদর্শন, প্রতিটি বাণিজ্যিক কার্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনকল্যাণ কেন্দ্রে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রের ব্যবহার এবং প্রশিক্ষণ/ফায়ার ড্রিল বাধ্যতামূলক করা।
এ ছাড়া প্রতিটি ভবনে প্রয়োজনীয় প্রশস্ত জরুরি বহির্গমন ও নিরাপদে প্রস্থানের ব্যবস্থা রাখা, অনুমোদন ছাড়া ভবন ব্যবহারের প্রকৃতি (যেমন আবাসিক থেকে বাণিজ্যিক) পরিবর্তন না করা এবং একই ভবনে অল্প জায়গা নিয়ে বানানো বিভিন্ন রেস্তোরাঁর কাঠামো পরিবর্তন প্রভৃতি দাবি জানানো হয়েছে।
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন লাগে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৭৫ জনকে।
পুলিশ বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ জন পুরুষ, ১৮ জন নারী ও ৮ শিশু। তাঁদের মধ্যে ৪৩ জনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বুয়েটের শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিন ও লামিসা ইসলাম রয়েছেন। দুজনই বুয়েটের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।