সফল দাবি বিএনপির, আ.লীগ বলছে ‘ব্যর্থ’

সিলেটে গণসমাবেশ পরবর্তী মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির নেতারা। শনিবার নগরের দরগাগেট এলাকার এক রেস্তোরাঁয়
ছবি: প্রথম আলো

সিলেটে বিভাগীয় গণসমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়েছে। গতকাল শনিবার হয়ে যাওয়া এ সমাবেশকে সিলেটের ‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড়’ বলে বিএনপি নেতারা দাবি করছেন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সমাবেশস্থল ফাঁকা ছিল। দলটি পুরোপুরি ব্যর্থ।

আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে গণসমাবেশ-পরবর্তী মতবিনিময় করেছে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি। এতে বিএনপি নেতারা বলেছেন, গণসমাবেশের আগে নেতা-কর্মীদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। বাসায় পুলিশ গিয়ে তল্লাশি চালিয়েছে। ১ হাজার ২০০ নেতা-কর্মীকে আসামি করে ৬টি হয়রানিমূলক মামলাও করা হয়েছে। তবে সব বাধাবিপত্তি ঠেলে সফলভাবে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশ হয়েছে।

বিএনপির মতবিনিময়ের পর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিএনপিকে বাধা দেওয়া ও হয়রানির অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে দাবি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপিকে কেউ বাধা দেয়নি। তারা (বিএনপি) যেভাবে আওয়াজ দিয়েছে, সেভাবে মানুষ আসেনি। মাঠ ফাঁকা ছিল। মানুষ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপির সঙ্গে মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই, এটা প্রমাণিত হয়েছে।’

নগরের দরগাগেট এলাকার একটি রেস্তোরাঁ মিলনায়তনে বিএনপি মতবিনিময় করেছে। এতে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বক্তব্য দেন। জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর সঞ্চালনায় ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী।

সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার বিকেলে নগরের সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে
ফাইল ছবি

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সভায় জানানো হয়, সমাবেশের ঠিক আগে করা ছয়টি মামলার মধ্যে তিনটির বাদী পুলিশ। বাকি তিনটি করেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এসব মামলায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে প্রচারপত্র বিলিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। এ ছাড়া বিএনপির ‘নিখোঁজ’ সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

বিএনপি নেতা আবদুল মঈন খান বলেন, সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ সফল করার পেছনে হাজারো মানুষের কষ্ট ও শ্রম লুকিয়ে আছে। ভয় ও শঙ্কা নিয়ে ধর্মঘটের বাধা ডিঙিয়ে মানুষ মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে এসেছেন। অনেকে নৌকায় করে এসেছেন। বিএনপির আন্দোলন সফলে নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের অনেক ত্যাগ আছে।
মতবিনিময়ে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, সিলেটে গণসমাবেশে মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে দিয়েছে, বিএনপির এই আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে তিন দিন আগে থেকে মানুষ খেয়ে না–খেয়ে, না ঘুমিয়ে সমাবেশস্থলে পড়ে ছিলেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সমাবেশ ঘিরে বাধা-প্রতিবন্ধকতা হয়নি—এটা বলা যাবে না। এরপরও সিলেটে গণসমাবেশ অনেক শান্তিপূর্ণ ও সফল হয়েছে।

আরও পড়ুন

তবে বিএনপির গণসমাবেশ শেষ হওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেনসহ দলটির অনেক নেতা-কর্মী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গণসমাবেশের সমালোচনা করে বিভিন্ন কথা লিখেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, সিলেটের আপামর মানুষ এই গণসমাবেশ প্রত্যাখ্যান করেছে। এ সমাবেশ ব্যর্থ ও বিফল।

যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগ নেতা মো. জাকির হোসেন বলেন, বিএনপি গণসমাবেশ আয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নেয়নি। এসব জেনেও পুলিশ কিংবা প্রশাসন বাধা দেয়নি। ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড দিয়ে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল, নজরুল চত্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা তারা ঢেকে দিয়েছিল। সমাবেশের আগের রাতে উচ্চ শব্দে মাইক দিয়ে গানবাজানোয় আশপাশের শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন। এসব সিলেটের মানুষ ভালোভাবে নেননি। এসবসহ নানা কারণেই তাই বিএনপির গণসমাবেশ মানুষ বর্জন করেছেন।

আরও পড়ুন

বিএনপির গণসমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট বিভাগের চার জেলা ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরাও সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। এত তৎপরতা চালানোর পরও সমাবেশে মানুষের উপস্থিতি খুব বেশি ছিল না। বিএনপি যে গণমানুষের কাছাকাছি নেই কিংবা জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে, এ সমাবেশে মানুষের কম উপস্থিতিই বড় প্রমাণ। অথচ সমাবেশের আগে তাঁদের লাফালাফি দেখে মনে হয়েছিল, সমাবেশের দিন পুরো সিলেট শহরই তারা অচল করে দেবে।

এর আগে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তবে গণসমাবেশ ঘিরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার, পুলিশের বাধা, প্রচার মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা ও ‘শোডাউন’ এবং পরিবহন ধর্মঘটের কারণে প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে সিলেট বিভাগের চার জেলায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ হয়েছে বলে বিএনপি নেতারা আজকের মতবিনিময় সভায় নিজেদের সন্তুষ্টির বিষয়টি জানিয়েছেন।
এদিকে গণসমাবেশ নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি জানানো হলে

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) তাদের প্রতিক্রিয়া কিংবা নিজস্ব মতামত জানাতেই পারে। তবে নানা বাধাবিপত্তি ঠেলে গণসমাবেশ সফল হয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও গণসমাবেশে যোগ দিয়েছেন। সমাবেশস্থল ছাড়াও আশপাশের রাস্তায় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল, এটা সবাই দেখেছেন।’