শীতের তীব্রতা বাড়বে, আসছে শৈত্যপ্রবাহ

শীতের সকালে সন্তান কোলে বাজার থেকে বাড়ি ফিরছেন বাবা। গতকাল রংপুর শহরতলির জলছত্র এলাকায়ছবি: মঈনুল ইসলাম

মাঘের শীতের মধ্যেই গত দুই দিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। তবে আপাতত আর বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। মেঘও কেটে গেছে। এর ফলে তাপমাত্রা কমে আজ শনিবার থেকে দেশের কিছু অঞ্চলে নতুন করে শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে সারা দেশে শীতের অনুভূতিও আজ থেকে আরও বাড়তে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এমনটিই বলা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনের (বার্তা) তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে আজ রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। এ ছাড়া আজ মধ্যরাত থেকে আগামীকাল রোববার সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা থাকতে পারে। অন্য অঞ্চলেও হালকা থেকে মাঝারি মাত্রায় কুয়াশা পড়তে পারে।

রাজশাহী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলা এবং রংপুর বিভাগের বেশ কিছু এলাকায় আজ থেকে শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।
ওমর ফারুক, আবহাওয়াবিদ

দেশের বেশ কিছু এলাকায় গতকাল বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে নোয়াখালীর হাতিয়া ও বাগেরহাটের মোংলায় ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হয়েছে পটুয়াখালী, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও সাতক্ষীরার অঞ্চলে। তবে কোনো এলাকাতেই ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ৪ মিলিমিটারের বেশি ছিল না। এ ছাড়া ভোলা, যশোর, খুলনা, কুমিল্লা, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের কিছু এলাকায় ১ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হয়েছে ফরিদপুর ও বরিশালে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আর বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। মেঘও কেটে গেছে। মেঘ কেটে যাওয়ায় তাপমাত্রা কমবে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে সারা দেশেই শীতের অনুভূতি বাড়বে।

দেশের অনেক অঞ্চলের আবহাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি রয়েছে। কোনো অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দুই থেকে তিন দিন ১০–৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে এলে সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। অবশ্য দেশের কোনো অঞ্চলে গতকাল শৈত্যপ্রবাহ ছিল না।

দেশের অনেক অঞ্চলের আবহাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি রয়েছে। কোনো অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দুই থেকে তিন দিন ১০–৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে এলে সেখানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। অবশ্য দেশের কোনো অঞ্চলে গতকাল শৈত্যপ্রবাহ ছিল না।

গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি তাপমাত্রা ছিল আরও বেশ কিছু অঞ্চলে। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি, নীলফামারীর ডিমলায় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি, কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ১০ দশমিক ৭ ডিগ্রি ও দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর বাইরে দেশের বেশির ভাগ এলাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল ১১ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ছিল। আর ঢাকায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

প্রথম আলোর পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, জেলার বেশির ভাগ এলাকা গতকাল সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন ছিল। গতকাল সকালে তিনি যান পঞ্চগড় সদর উপজেলার রজলী খালপাড়া এলাকায়। সেখানে কথা বলেন স্থানীয় কৃষক আজিজার রহমানের সঙ্গে। তখন নিজের ভুট্টাখেতে নিড়ানি দিতে লাঙল টানছিলেন আজিজার। কথায় কথায় তিনি বললেন, এত কুয়াশা, ১০ হাত দূরেও দেখা যায় না। আর মাটিও যেন বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেছে। খালি পায়ে হাঁটলে পা যেন অবশ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন

পঞ্চগড় সদর উপজেলার স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গেও কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেন, রাতে টিনের ঘরের চালে কুয়াশা যেন টিপ টিপ বৃষ্টির মতো ঝরে।

টানা কয়েক দিনের কনকনে শীতে পঞ্চগড়ে শীতবস্ত্রের বিক্রি বেড়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ পুরোনো শীতবন্ত্র কিনতে ফুটপাতের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। তীব্র শীতের কারণে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে হাসপাতালে। তীব্র শীতে বেশি সমস্যায় পড়েছে শিশু ও বয়স্করা। অনেকে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

শীতের তীব্রতা আজ থেকে বাড়বে কি না, এমন প্রশ্নে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহী, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলা এবং রংপুর বিভাগের বেশ কিছু এলাকায় আজ থেকে শৈত্যপ্রবাহ দেখা দিতে পারে।

আরও পড়ুন