চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ৯ জনের বহিষ্কার বাতিল ‘মানবিক কারণে’

মারামারি, কক্ষ ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় এই নেতা-কর্মীদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই উপপক্ষের সংঘর্ষের সময় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে স্লোগান ও মহড়া দিতে দেখা যায়। ছবিটি ২ ডিসেম্বরের
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর বহিষ্কার আদেশ বাতিল করা হয়েছে। ‘মানবিক কারণ’ দেখিয়ে গত ৩১ জুলাই এ সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব রেসিডেন্স, হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটি। পরে গতকাল রোববার এ কমিটির সদস্যসচিব প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার স্বাক্ষরিত এক চিঠি বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বিভাগ ও আবাসিক হলে পাঠালে বিষয়টি জানাজানি হয়।

আদেশ বাতিলের এসব চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, মানবিক দিক বিবেচনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে যদি বহিষ্কার হওয়া এসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্ট করার চেষ্টা করেন, তাহলে কারণ দর্শানো ছাড়াই তাঁদের বহিষ্কার করা হবে।

গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত মারামারি, কক্ষ ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় এই নেতা-কর্মীদের এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল। ৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটি এ সিদ্ধান্ত নেয়। তবে একই কমিটি এ সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে।

আরও পড়ুন

জানতে চাইলে প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, বহিষ্কারের পর অনেকেই এ আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছিলেন। পরে বিষয়টি পুনরায় তদন্ত করা হয়েছে। এরপর যাচাই-বাছাই করে বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিটি।

যেসব ঘটনায় ছাত্রলীগের এই নেতা-কর্মীদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, এর মধ্যে গত ২ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় রামদা উঁচিয়ে স্লোগান দেওয়ার ঘটনা সবচেয়ে আলোচিত ছিল। এ ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র ৩ ডিসেম্বর প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত হলে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এ ঘটনায় ছয়জনকে বহিষ্কার করেছিল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বহিষ্কার আদেশও বাতিল করা হয়েছে।

বহিষ্কার আদেশ বাতিল হওয়া ছাত্রলীগের এই নেতা-কর্মীরা হলেন শাখা ছাত্রলীগের উপশিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক সমাজতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী হাছান মাহমুদ। সংস্কৃত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের অনিক দাস, একই বর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তনয় কান্তি শিকদার, অর্থনীতি বিভাগের লাবিব সাঈদ, লোকপ্রশাসন বিভাগের আরশিল আজিম।

ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সিফাতুল ইসলাম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শোয়েব মোহাম্মদ (আতিক)। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নাহিদুল ইসলাম, একই বর্ষের ইতিহাস বিভাগের মো. মোবারক হোসেন। এই নেতা-কর্মীদের সবাই শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছের নেতৃত্বাধীন বিজয় উপপক্ষের কর্মী হিসেবে পরিচিত। এ উপপক্ষটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন।

ছাত্রলীগের প্রভাবে এসব নেতা-কর্মীর বহিষ্কার আদেশ বাতিল করা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ প্রথম আলোকে বলেন, যে ১৭ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, এর মধ্যে শুধু তাঁর অনুসারীদেরই পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও ফলাফল আটকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি। তাঁরা পরীক্ষা দিয়ে ফলাফলও পেয়েছেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের ক্ষেত্রে কেন এমনটা করা হয়েছে, সেটি প্রশাসন থেকে জানতে চেয়েছিলেন।

মোহাম্মদ ইলিয়াছ আরও বলেন, তাঁর অনুসারীরা প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় সাবেক প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া ইচ্ছাকৃতভাবে বহিষ্কার করেছিলেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, প্রক্টর কখনো একা সিদ্ধান্ত নেন না। উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, ডিন, প্রাধ্যক্ষ ও বিভাগের সভাপতি নিয়ে গঠিত হয় ডিসিপ্লিন কমিটি। এ কমিটির সবাই যাচাই-বাছাই করেই সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মানবিক কারণ’ দেখিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বহিষ্কারের আদেশ বাতিলের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে। ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর সংঘর্ষে জড়ানোর অপরাধে ১২ শিক্ষার্থীকে ৬ মাসের জন্য সাময়িক বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর বহিষ্কৃত হয়েও দুই মাসের মাথায় ডিসেম্বরে স্নাতকের প্রথম বর্ষের তিন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসেন।