প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৃহস্পতিবার ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা
তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সারা দেশের সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে সেখান থেকে চলে যেতে শুরু করেন তাঁরা।
বুধবার দুপুরে শাহবাগ মোড় অবরোধের এক পর্যায়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাত্রা করার পর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে পুলিশের বাধা পান শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে লাঠিপেটা, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
পুলিশের মারধরের শিকার হওয়ার পর বিকেলে আবার শাহবাগ মোড়ে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। রাত ১০টার দিকে সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের সামনে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, সে জন্য আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার হিসেবে অত্যন্ত দুঃখিত এবং দুঃখ প্রকাশ করছি। আজকের এই অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য একটা তদন্ত কমিটি আমি আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) গঠন করে দেব।’
ডিএমপি কমিশনার এ কথা বলার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন প্রকৌশলী অধিকার আন্দোলনের সভাপতি মো. ওয়ালী উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মসূচির ব্যাপারে আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, যে তিন দফার ব্যাপারে আমরা দাবি রেখেছিলাম এবং গত দুই দিন ধরে আমরা শাহবাগ ব্লকেড করেছি, তার কোনোটাই এখন পর্যন্ত পূরণ হয়নি। আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।’
ওয়ালী উল্লাহ বলেন, ‘জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা জনদুর্ভোগপূর্ণ কোনো কর্মসূচিতে ইমিডিয়েটলি যাব না। আমরা আগামীকাল বিকেল পাঁচটায় আমাদের সাংবাদিক ভাইদের উপস্থিতিতে ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্সের কাউন্সিল হলে সাংবাদিকদের নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচির জন্য একটি সভা আহ্বান করছি।’
এ সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব। সে জন্য আগামীকাল দেশের সব ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন অব ইঞ্জিনিয়ার্স ঘোষণা করা হলো।’
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে প্রকৌশলী লিখতে না দেওয়া, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাউকে পদোন্নতি দিয়ে নবম গ্রেডে উন্নীত না করা এবং দশম গ্রেডের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্নাতক প্রকৌশলীদের সুযোগ দেওয়া—এই তিন দফা দাবিতে কিছুদিন ধরে আন্দোলন করছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা। এর দাবিতে মঙ্গলবার বিকেল থেকে পাঁচ ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধ করেছিলেন তাঁরা। মঙ্গলবার রাতে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ করে শাহবাগ মোড়ে এসে সড়ক অবরোধ এবং প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে যাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করেন তাঁরা। এর অংশ হিসেবে বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা শাহবাগের মূল সড়কে অবস্থান নেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় শাহবাগ ও আশপাশের সড়ক।
বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীরা যমুনা অভিমুখে রওনা দেন। তাঁরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড় পেরোনোর চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাঠিপেটা করে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি, পুলিশের হামলায় ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, পুলিশকে লক্ষ্য করে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। এ ঘটনায় পুলিশের আট সদস্য আহত হয়েছেন।