‘বাজার থেকে স্যালাইন কিনতে হাসপাতালগুলোকে টাকা দেওয়া হয়েছে’
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে শিরায় দেওয়া স্যালাইনের (ফ্লুইড) চাহিদা। রক্তের তারল্য ঠিক রাখতে ও রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে ডেঙ্গুর রোগীকে স্যালাইন দিতে হয়। এই মুহূর্তে অতি জরুরি এই স্যালাইন চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ নেই বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্বাস্থ্যসচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেছেন, ‘পর্যাপ্ত ফ্লুইড আছে। সংকট নেই।’ অপর দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, সরকারি নির্দেশনা ছিল, হাসপাতালগুলোতে ফ্লুইড সরবরাহ করবে এসেনশিয়াল ড্রাগ কোম্পানি লিমিডেট (ইডিসিএল)। বর্তমানে বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ইডিসিএল সম্পূর্ণ ফ্লুইড সরবরাহ দিতে পারছে না। স্থানীয় বাজার থেকে স্যালাইন কিনতে হাসপাতালগুলোকে টাকা দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ রোববার বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন স্বাস্থ্যসচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
প্রসঙ্গত ইডিসিএল সরকারের একমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। সরকারি হাসপাতালে রোগীরা বিনা মূল্যে স্যালাইন পান। বর্তমানে ইডিসিএল বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে স্যালাইন কিনে সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করে বলে ইডিসিএলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বেক্সিমকো, স্কয়ার, এক্মি, পপুলার, ওরিয়ন, লিব্রা ও অপসোনিন—এই সাত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইডিসিএল স্যালাইন কেনে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্যালাইন প্রসঙ্গে রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, সব হাসপাতালে প্রশাসনিক অনুমোদন, নির্দেশনা ও টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলোকে তাদের বরাদ্দ থেকে স্যালাইন কিনতে হবে। স্থানীয় বাজার থেকে হাসপাতালগুলো টাকা দিয়ে স্যালাইন কিনতে পারবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়, চিকিৎসার সরঞ্জামাদি দেওয়া দায়িত্ব।
স্বাস্থ্যসচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেছেন, ডেঙ্গুর কোনো ওষুধ নেই। চিকিৎসা নেই। স্যালাইন ব্যবস্থাপনা করা হয়। পর্যাপ্ত স্যালাইন আছে। কোনো সংকট নেই। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালে এলে ভর্তিরও প্রয়োজন হয় না।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ডেঙ্গু পরীক্ষার ৮৫ টাকার কিট ১২৫ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে, এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, বেশি দাম দিয়ে কারা কোথা থেকে কিনছেন, এ তথ্য জানা নেই। যথেষ্ট কিট মজুত আছে। সরকারি প্রতিটি হাসপাতালে কিট দেওয়া হয়েছে। লোকজনকে তো এসব হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য আসতে হবে।
‘সবাই মুগদায় না গিয়ে অন্য হাসপাতালে আসুন’
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর চাপ অনুযায়ী শয্যা না থাকা, সেবার মান নিয়ে প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যসচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, এবার আশঙ্কাজনকভাবে ডেঙ্গু বেড়েছে। ডেঙ্গু যে বাড়তে পারে, তা আগে ধারণা করা হয়েছিল। তাই পর্যাপ্ত প্রতিরোধব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আগে থেকে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল। তারা অনেকগুলো ব্যবস্থা নিয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ‘বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল’ নিয়ে কাজ করছে। বিগত বছরে ডেঙ্গু ঢাকা মহানগরকেন্দ্রিক ছিল। এবার গ্রামেও ছড়িয়ে যাওয়ায় রোগীর সংখ্যা বেশি।
স্বাস্থ্যসচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ঢাকা শহরে অতিরিক্ত দেড় হাজার শয্যা তৈরি করা হয়েছে। মুগদা এলাকায় আক্রান্তের হার বেশি। মুগদা হাসপাতালেও এ কারণে চাপ বেশি। অন্যান্য জায়গায় হাসপাতালেও শয্যা রয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) হাসপাতালকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য রাখা হয়েছে। কুর্মিটোলা, সোহরাওয়ার্দীসহ সব সরকারি হাসপাতালে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সরকারের তথ্য অনুসারে, এ বছর জানুয়ারি থেকে রোববার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। সারা দেশে ৬৬ হাজার ৭৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা শহরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৬০১ জন এবং মারা গেছেন ২৪৮ জন।