রাজধানীর হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর শয্যা বাড়াচ্ছে সরকার

ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এই পরিস্থিতিতে রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীর জন্য নির্ধারিত সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যার সংখ্যা কমে আসছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভিন্ন হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি অধিদপ্তর দেশবাসীর কাছে অনুরোধ করেছে, আপাতত ঢাকা শহরের বাইরের ডেঙ্গু রোগী যেন চিকিৎসার জন্য রাজধানীতে না আসেন। ঢাকার বাইরে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।

গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর অনলাইন ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে ২১৫ জন প্রাণ হারান। অন্যদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে।

রাজধানীর ১৮টি সরকারি হাসপাতালে এবং সরকারের আর্থিক সহায়তায় চালিত দুটি স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা চলছে। প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গুর জন্য শয্যা নির্ধারণ করা আছে। একাধিক হাসপাতালে নির্ধারিত শয্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছেন বলে জানা গেছে।

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট শয্যা ৫০০টি। গতকাল রোগী ভর্তি ছিলেন এক হাজারের বেশি। এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগী ছিলেন ৫৬৬ জন। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু রোগীর জন্য বরাদ্দ শয্যা ৪২টি। গতকাল ওই হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু ভর্তি ছিল ৮৯ জন। অর্থাৎ বরাদ্দ শয্যার দ্বিগুণের বেশি রোগী আছে।

গতকাল আহমেদুল কবীর সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীর অধিকাংশ সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য শয্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গুর জন্য বরাদ্দ শয্যা ২৫০টি। ওই হাসপাতালে ১০০ শয্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালেও শয্যা বাড়ানো হবে। তবে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য শয্যা আর বাড়ানো হবে না। তিনি বলেন, কেউ যেন আপাতত ডেঙ্গু চিকিৎসার জন্য মুগদা হাসপাতালে না আসেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গতকাল দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আড়াই হাজার শয্যা খালি ছিল। এসব শয্যা দ্রুত রোগীতে ভরে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আহমেদুল কবীর বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ২০০ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। অন্যদিকে সুস্থ হয়ে প্রতিদিন বাড়ি ফিরছেন ৯০০ রোগী। এর অর্থ, প্রতিদিন হাসপাতালে ৩০০ জন করে রোগী বাড়ছে।

ঢাকার বাইরের অনেক রোগী রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছেন। তবে সরকার নির্ধারিত কিছু হাসপাতালে গতকাল কোনো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল না।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক রয়েছেন। পাশাপাশি সব সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে, চিকিৎসা নির্দেশিকাও আছে। বাইরে থেকে রোগী ঢাকায় এলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়বে। আহমেদুল কবীর বলেন, ‘যে যেখানেই আছেন, সেখানেই চিকিৎসা নিন।’

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাড়াও বহু মানুষ বাসায় ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার থেকে অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া অনলাইনেও অনেকে চিকিৎসা ও পরামর্শ নিচ্ছেন।

জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা কল সেন্টার ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩’ থেকে প্রতিদিন মানুষকে ডেঙ্গু বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য বাতায়নের পরিসংখ্যান বলছে, ১ মে থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত সর্বমোট ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৩৪টি কল এখানে এসেছে। এর মধ্যে ১৮ হাজার ৬৫০টি কল ছিল ডেঙ্গুবিষয়ক পরামর্শের জন্য। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন থেকে ডেঙ্গুবিষয়ক পরামর্শ ও চিকিৎসা পাচ্ছেন।

স্বাস্থ্য বাতায়নের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অনেক বড়সংখ্যক রোগী টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে সেবা নিচ্ছে। এর অর্থ অনেক মানুষের রোগ শনাক্ত হচ্ছে না। আমি মনে করি মানুষকে আরও সচেতন করতে হবে এবং সেবার জায়গাগুলোতে সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ২ হাজার ৬৫৩ জন নতুন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা শহরে ১ হাজার ৩২৭ জন এবং ঢাকা শহরের বাইরে ১ হাজার ৩২৬ জন। অর্থাৎ ঢাকা শহর ও ঢাকা শহরের বাইরের রোগীর সংখ্যায় বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই।

এ বছর গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ৪০ হাজার ৩৪১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ রোগী ঢাকা শহরের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। বাকি ৪১ শতাংশ রোগী ঢাকা শহরের বাইরের। অন্যদিকে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ২১৫ জনের মধ্যে ১৭২ জন ঢাকা শহরের এবং ৪৩ জন ঢাকা শহরের বাইরের।