সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফের পিএসসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

সত্যজিৎ মুখার্জিছবি: সংগৃহীত

অবৈধভাবে আড়াই হাজার কোটি টাকা অর্জনের অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলায় ফরিদপুরের আলোচিত দুই ভাই বরকত-রুবেলসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলার পলাতক ৩৭ জন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্তি সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) তাপস কুমার পাল।

তাপস কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলায় পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত। মামলার ৪৭ জন আসামির মধ্যে জামিনে আছেন ৭ জন। কারাগারে রয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন বরকত, ইমতিয়াজ হোসেন রুবেল ও এ এইচ এম ফুয়াদ। এ ছাড়া মামলার পলাতক আসামি সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) সত্যজিৎ মুখার্জিসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

আইনজীবী-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ মামলায় জামিনে থাকা আসামি খন্দকার মোহাতেশাম বাবর (খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাই), আসিবুর রহমান, কামরুল হাসান ডেভিড, আরিফুর রহমান দোলনসহ সাতজন আদালতে হাজিরা দেন।

গত বছরের জুলাইয়ে সিআইডির জমা দেওয়া সম্পূরক অভিযোগপত্রে নতুন করে আরও ৩৭ জনকে আসামি করা হয়। এর আগের অভিযোগপত্রে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন বরকত, তাঁর ভাই ইমতিয়াজ হাসান রুবেলসহ ১০ জন আসামি ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ২ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। আসামি বরকত, রুবেলসহ অন্যদের স্বীকারোক্তিতে যেসব আসামির নাম উঠে এসেছে, তাঁদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করে সিআইডি। কার হিসাবে কত টাকা লেনদেন, আয়ের উৎস, কত টাকা, কীভাবে লন্ডারিং করা হয়েছিল, তা বিস্তারিত তুলে ধরা হয় অভিযোগপত্রে।

সত্যজিৎ মুখার্জির বিষয়ে সিআইডির সম্পূরক অভিযোগপত্রের তথ্য বলছে, তাঁর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য আদালতকে জানিয়েছিলেন ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার। তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন, তিনি একজন ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। মোকাররম বাবু ও বাবর সাহেব (খন্দকার মোহতেশাম) টেন্ডারবাজি শুরু করেন, সত্যজিৎ মুখার্জি এ বিষয়ে জানতেন।

বরকত ও রুবেলের বিরুদ্ধে সিআইডির পরিদর্শক এস এম মিরাজ আল মাহমুদ বাদী হয়ে ২০২০ সালের ২৬ জুন ঢাকার কাফরুল থানায় অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে অর্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়। ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধনী-২০১৫-এর ৪(২) ধারায় এ মামলা করা হয়। ওই মামলা তদন্ত করে ২০২২ সালের ৩ মার্চ আদালতে বরকত, রুবেলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।

আরও পড়ুন

পরে আদালতে অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি হয়। তবে অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের জবানবন্দিতে অনেকের নাম উঠে আসে। তবে তাঁদের বিষয় তদন্ত না করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। পরে আদালত ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০ স্বপ্রণোদিত হয়ে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এতে নতুন করে আরও ৩৭ জন আসামি হন।

২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাজ্জাদ হোসেন বরকত ও ইমতিয়াজ হাসান রুবেলের ৫ হাজার ৭০৬ বিঘা জমি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে ১৮৮টি ব্যাংক হিসাবে থাকা তাঁদের প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাঁদের মালিকানাধীন ৫৫টি বাস, ট্রাক ও ব্যক্তিগত গাড়িও জব্দের আদেশ দেন আদালত।