নির্মাণের তিন বছরেও চালু হয়নি ক্যাফেটেরিয়া

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের জন্য তিন বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছিল ক্যাফেটেরিয়া। সেখানে বসানো হয়েছে চেয়ার–টেবিল। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্য এখনো ক্যাফেটেরিয়াটি চালু করা হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের আশপাশের দোকান থেকে বাড়তি দামে খাবার কিনতে হচ্ছে। 

২০০৭ সালে চুয়েটের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) জন্য ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ কেন্দ্রের ভেতরে দুটি ভিন্ন তলায় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি এবং শিক্ষক ও কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভবনের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়। ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১১ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ তদারক করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর।

এরপর তিন বছর পার হয়েছে, এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাফেটেরিয়া ও টিএসসি ভবনের উদ্বোধন হয়নি। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের ভেতরের অনেক কক্ষ পড়ে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, টিএসসির ভেতরের কক্ষগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের জন্য বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে ক্যাফেটেরিয়ার ভেতরে সেগুলোর প্রস্তুতি নেওয়া ও অনুষ্ঠান আয়োজন করার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা।

গত ৬ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার জন্য একটি ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সেটির কোনো অগ্রগতি নেই।

ক্যাফেটেরিয়া ও টিএসসি ভবন চালুর বিষয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর মেরিডিয়ান নামে একটি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জন্য নিচতলার ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার দায়িত্ব নেবে বলে আবেদন করে। সেটি পরিচালনার জন্য ফিউম হুড ও চিমনি প্রয়োজন বলে তারা জানায়।

সেগুলো তৈরির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। এ কারণে একটু সময় লাগছে। আশা করছি, সব ঠিক থাকলে এক মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ক্যাফেটেরিয়াটি চালু হতে পারে। তবে ভবনের দ্বিতীয় তলায় শিক্ষক এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান আবেদন করেনি।

টিএসসি ভবনে বিভিন্ন সংগঠনের জন্য কক্ষ বরাদ্দের বিষয়ে রেজাউল করিম বলেন, এখানে কক্ষের সংখ্যা খুবই কম। এখন মাত্র পাঁচটি কক্ষ খালি রয়েছে। কিন্তু সংগঠনের সংখ্যা অনেক। কক্ষগুলো বড় হলেও একটিমাত্র দরজা থাকায় আমরা বিভক্ত করেও কোনো ব্যবস্থা করতে পারছি না। তবে প্রতিটি সংগঠনের ব্যবহারের জন্য আলাদা লকারের ব্যবস্থা করতে পারি কি না সেটি ভেবে দেখছি। শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাফেটেরিয়া ও টিএসসি খুলে দেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের টিএসসি ভবন। চারতলা ভবনের নিচ তলার পূর্ব পাশে শিক্ষার্থীদের জন্য এবং দ্বিতীয় তলায় শিক্ষক এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। তৃতীয় তলায় আছে সভাকক্ষ। পশ্চিম পাশের ভবনের নিচ তলায় রয়েছে স্টেশনারি দোকান। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নতুন কার্যালয়। তৃতীয় তলায় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের অফিস কক্ষ। এ ছাড়া চতুর্থ তলায় রয়েছে চুয়েট মেডিকেল সহায়তা কেন্দ্র এবং চুয়েটের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর।

আরও পড়ুন

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই ভবনটির আলো জ্বলছে না। এতদিন পেরিয়ে গেলেও কোনো খাবার পরিবেশক প্রতিষ্ঠান ঠিক করে ক্যাফেটেরিয়া চালু করতে পারেনি। এ কারণে বাড়তি টাকা খরচ করে শিক্ষার্থীরা বাইরের দোকান থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ছে। ক্যাফেটেরিয়া ও টিএসসি ভবন পুরোপুরি খুলে দিতে প্রশাসনকে কয়েকবার বলা হয়েছে। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি।

এদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে না দিলেও টিএসসি-ক্যাফেটেরিয়া ভবনে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নানা সভা–সমাবেশও করেছে এখানে। ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে ওই ভবন থেকেই। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা প্রশাসনের অনুমতি ব্যতিরেকে অন্যসময় শিক্ষার্থীদের জন্য তালাবদ্ধ থাকছে ভবনটি।

আরও পড়ুন