খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরীকে ধর্ষণে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি ৮৪ ‘নারীবাদী’র

বিবৃতিপ্রতীকী ছবি

খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ৮৪ জন ‘নারীবাদী’। তাঁরা বলেছেন, ধর্ষণ সেখানে শুধুই একটি অপরাধ নয়; বরং এটি পাহাড়ি জাতিসত্তার জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, যাতে তারা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।

আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ‘নারীবাদী’রা এ কথা বলেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সব পাহাড়ি জাতিসত্তার জনগণের ওপর হামলা ও ধর্ষণের বিচার, সেনাশাসন প্রত্যাহার, আটক বম নাগরিকের মুক্তি এবং জাতিগত নিপীড়নের অবসান চেয়েছেন তাঁরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে জানাচ্ছি, গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাত নয়টায় খাগড়াছড়িতে একজন মারমা কিশোরী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জাতিসত্তার নারীর ওপর সংঘটিত বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়; বরং বছরের পর বছর ধরে চলে আসা জাতিগত নিপীড়নের ভয়াবহ অস্ত্র হিসেবে ধর্ষণের ব্যবহারকে আবারও স্পষ্ট করেছে। এই ধর্ষণের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে সেটেলার কর্তৃক পাহাড়ে আদিবাসীদের ওপর হামলা, চরম নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। মারমা কিশোরী ধর্ষণের মামলার ৭২ ঘণ্টা পার হলেও ভুক্তভোগীর মেডিকেল পরীক্ষা হয়নি।’

খাগড়াছড়িতে গত এক বছরে সাতজন পাহাড়ি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিবার এই বর্বরোচিত ঘটনাগুলোর বিচার চাইতে গিয়ে ভুক্তভোগী ও আন্দোলনকারীরা হামলা, মামলার দীর্ঘসূত্রতা এবং রাষ্ট্রীয় অসহযোগিতার শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি সংবাদমাধ্যম সেন্সর (নিয়ন্ত্রণ) করা ও ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা, মামলা নিতে পুলিশের অনীহা, দুর্বল এজাহার তৈরি করে আসামির জামিন নিশ্চিত করা, মেডিকেল পরীক্ষা না করা কিংবা দেরি করে আলামত নষ্ট করা এবং ভুক্তভোগীদের পর্যাপ্ত আইনি সহায়তা না দেওয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য।

এমন অবস্থায় বিবৃতিতে সাতটি দাবি জানানো হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মারমা কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সবার দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; আগের সব ধর্ষণের ঘটনায় প্রচলিত আইনে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার নিশ্চিত করা ও ধর্ষণের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি জাতির জনগণের ওপর সব হামলা–ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা; খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ দেশের সব জেলায় অবিলম্বে ধর্ষণের শিকার নারীদের জন্য ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ও ফরেনসিক ল্যাব স্থাপন; পাহাড় থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার ও পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সব জাতিসত্তার নাগরিকদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, স্বাধীন জীবনযাপন ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।

আরও পড়ুন

বিবৃতিতে সই করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, নৃতত্ত্ববিদ সায়েমা খাতুন, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, লেখক ফেরদৌস আরা রুমী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের শিক্ষক কাব্য কৃত্তিকা, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজিফা তাসনিম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহা তানজীম, লেখক–গবেষক ডালিয়া চাকমা, হিল উইমেনস ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমা, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন, অধিকারকর্মী প্রাপ্তি তাপসী, ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি নাজিফা জান্নাত, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক, গবেষক মিম আরাফাত, লেখক–গবেষক নওশিন ফ্লোরা প্রমুখ।

আরও পড়ুন