জড়িত প্রভাবশালীদের চিহ্নিত করতে মামলার পুনঃ তদন্ত চায় পরিবার

আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে নিহত প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের পরিবার
ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন খুনের ঘটনায় পুলিশের তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ জানিয়েছে পরিবার। তাদের দাবি, আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে পুলিশ তিনজনকে আসামি করলেও এই খুনের নেপথ্যে ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিদের শনাক্ত করেনি। পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থাকে দিয়ে মামলার পুনঃ তদন্ত চায় তারা।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি জানায় প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের পরিবার। দেলোয়ারের স্ত্রী খোদেজা আক্তার সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তাঁর পক্ষে কথা বলেন আইনজীবী এম কাওসার আহমেদ। আরও উপস্থিত ছিলেন দেলোয়ার হোসেনের ভাই নুরুন্নবী এবং দুই ছেলে মাসফিকুস সালেহীন ও ফাইজুস সালেহীন।

সংবাদ সম্মেলনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তুরাগ থানার পরিদর্শক শেখ মফিজুল ইসলামের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনজীবী কাওসার আহমেদ বলেন, তদন্তের ফলাফল বাদীকে না জানিয়ে তিনি আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। এমনকি বাদী বিভিন্ন সময় তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তিনি দেখা করেননি। তদন্ত কর্মকর্তা বিশেষ মহল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত করেছেন। এ কারণে আসামিরা ‘বেনিফিট অব ডাউট’ পাবেন। এতে ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায়বিচার পাবে না।

এই মামলায় ২০২০ সালের শেষের দিকে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও এখনো চার্জ গঠন করা হয়নি। মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) দিয়ে তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাদী যেসব অভিযোগ করছেন, এগুলো সঠিক নয়। আদালত থেকে নোটিশ দিয়ে বাদীকে ফলাফল জানানো হয়েছে। আর সঠিক তদন্ত না হলে আদালত সেটি গ্রহণ করতেন না। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।

২০২০ সালের ১১ মে মিরপুরের বাসা থেকে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর কর্মস্থলে যাওয়ার পথে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে উত্তরার ১৭ নম্বরে ৫ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে একটি জঙ্গল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী খোদেজা আক্তার তুরাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন দেলোয়ারের সহকর্মী সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ও তাঁর দুই সহযোগী হেলাল হাওলাদার ওরফে শাহিন ও গাড়িচালক মো. হাবিব। তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ জানায়, কর্মস্থলে দ্বন্দ্বের জেরে আনিসের পরিকল্পনায় গ্রেপ্তার তিনজন মিলে দেলোয়ারকে হত্যা করেছিলেন।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে আইনজীবী কাওসার আহমেদ বলেন, ঘটনার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয়ে বাদীকে মুঠোফোনে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত যে তিনজনের নাম এসেছে, এর বাইরে অন্য কাউকে আসামি করা হলে বা অন্য সংস্থা দিয়ে ঘটনার তদন্ত হলে দেলোয়ারের মতো তাঁর পরিণতি হবে। এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করা হয়নি। তাঁদের চিহ্নিত করা হলে আরও যাঁরা জড়িত, তাঁদের শনাক্ত করা যেত।

আরও পড়ুন

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ঘনিষ্ঠ একজন এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন বলেও তাঁরা মনে করেন।

এই ঘটনায় সাবেক মেয়রের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিটি হত্যায় জড়িত বলে তাঁরা নিশ্চিত কি না, জানতে চাইলে আইনজীবী কাওসার আহমেদ বলেন, হত্যায় জড়িত থাকতে পারেন, এমন সন্দেহ আছে। তবে নিশ্চিত করে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়। মুঠোফোনে হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করা গেলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হতো বলে দাবি করেন তিনি।

আইনজীবী কাওসার আহমেদ অভিযোগ করেন, অভিযোগপত্রে ১ নম্বর আসামি আনিসুর রহমান ৮ জুলাই উচ্চ আদালত থেকে জামিনে কারাগার থেকে বের হয়েছেন। এর পর থেকে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি দিয়ে বাদি খোদেজা আক্তারকে মামলা তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে বাদী ও তাঁর পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

আরও পড়ুন