জংলি ঝুমকো

সাদা রঙের জংলি ঝুমকো লতা। টেকনাফ থেকে তোলা ছবি l লেখক
সাদা রঙের জংলি ঝুমকো লতা। টেকনাফ থেকে তোলা ছবি l লেখক

জংলি ঝুমকো লতা অনেক দিন ধরে চিনি। আমাদের সব বনেই এ লতা একসময় দেখা যেত। কিন্তু দিন দিন এই বুনো ফুল হারিয়ে যাচ্ছে। জংলি ঝুমকোর যে প্রজাতিটি এত দিন ধরে বনে দেখে এসেছি, সেটির ফুল ছিল সাদা ও বেগুনি রঙের মিশেল। সম্প্রতি টেকনাফের একটি পাহাড়ে বেড়ে ওঠা লতায় পুরো সাদা বর্ণের ফুল দেখতে পাই। দেশের কয়েকজন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞকে জানালে তাঁরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। পরে ভারতীয় কয়েকজন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ জানিয়ে দিলেন, এটি একই প্রজাতির, ফুলের রং দুই ধরনের হয়। তবে সাদা রং সহজে দেখা যায় না। উদ্ভিদজগতে অনেক প্রজাতির গাছে ফুলের রঙের হেরফের হয়ে থাকে।
জংলি ঝুমকো লতা বনে-বাদাড়ে বেড়ে ওঠা এক অবহেলিত ফুল। পাহাড়ের ঢালে সবুজ লতায় যখন ফুল আসে তখনই হয়তো কোনো বনবাসী, পথিক তার রূপটি দেখতে পায়। পাহাড়ি বন, সড়কের ধারের কোনো ঝোপে এ লতা কদাচিৎ দেখা যায়। এ লতার বৈজ্ঞানিক নাম Passiflora foetida, পরিবার Passifloraceae, ইংরেজি নাম Wild Passion Flower। এটি আরোহী লতা। আকর্ষীর মাধ্যমে কোনো ধারককে আঁকড়ে ধরে বেয়ে ওঠে। ফুল সুগন্ধি নয়, তবে দেখতে আকর্ষণীয়। পাতা একান্তর, দুটি খাঁজ রয়েছে। ফুল বেগুনি ও সাদা রঙের। বৃতি পাঁচটি, দল পাঁচটি এবং বৃতি নল থেকে কিছুটা খাটো। ফল পাকলে কমলা লাল বর্ণের হয়।
ফল বহুবীজী। মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ফুল ফোটে। পানি জমে থাকে না এ রকম রোদ-ছায়াময় জায়গায় এ লতা ভালো জন্মে। বাংলাদেশ ছাড়া মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, চীন, মাদাগাস্কার ও উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় এ লতার বিস্তৃতি রয়েছে। বীজ দ্বারা বংশবৃদ্ধি ঘটে। পাহাড়ি বন থেকে আবাসস্থল ধ্বংসের ফলে এবং অতিরিক্ত গাছ কাটার কারণে লতাটি দিন দিন কমে যাচ্ছে। সম্ভবত দক্ষিণ আমেরিকা এটির আদি আবাস, যা পরবর্তীকালে উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
এর পাকা ফল খাওয়া যায়। স্বাদে মিষ্টি ও রসাল। কিন্তু কাঁচা ফল বিষাক্ত ও ভক্ষণে মানা। পৃথিবীর নানান দেশে বেড়া দিতে এবং বাড়ির ধারের উন্মুক্ত স্থান ঢাকার জন্য এ লতা লাগানো হয়। আমাদের বুনো ফুল অবহেলিত ও অরক্ষিতও বটে। পাহাড়ি এলাকায় বন বিনাশ, আবাসস্থল ধ্বংস, নগরায়ণ, প্রাকৃতিক জমি কৃষিতে রূপান্তর এবং জলাশয়ের সংকোচনের ফলে আমাদের বুনো ফুলের প্রজাতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।