'রিয়েল লাইফের হিরো সরকার'

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ৮২ শতাংশ তরুণ দেশ ছাড়তে চান। নিজের দেশে কোনো ভবিষ্যৎ আছে বলে তাঁরা মনে করেন না। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের জরিপে উঠে এসেছে এমনই তথ্য। এ অবস্থা থেকে বাঁচার উপায় জানতে চাওয়া হয়েছিল পাঠকের কাছে।

প্রথম আলো ফেসবুক পেজে এক ঘণ্টার মধ্যেই ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন পাঠক। সরকারই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে পারে বলে বেশির ভাগ পাঠকের মত। অনেকে আবার উত্তরণের উপায় বাতলে দিয়েছেন। অনেকে কেবল হতাশা জানিয়েছেন।

নাজিম উদ্দিনের মতে, এই জরিপের ফল থেকে বোঝা যায়, সম্ভাবনাময় শিক্ষিত তরুণেরা তাঁদের ভবিষ্যৎ চাকরি, পথচলা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা খুঁজে পাচ্ছেন না। এভাবে চলতে থাকলে দেশের মেধা বিদেশে চলে যাবে। আর দেশ দিন দিন মেধাশূন্য হতে থাকবে। এটি দেশের জন্য অশনিসংকেত।

আহমেদ খালিদ বিন এম রহমান কিছুটা ক্ষোভ জানিয়ে লিখেছেন, ‘দেশে কোটায় চাকরি দেবেন ৫৬ শতাংশ আর আশা করবেন তরুণেরা দেশে বসে থেকে এসব উপভোগ করবে?’

দীপক কুমার কিছু উপায় বাতলে দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘উপায় তো অনেক আছে। মেধা পাচার তো আজকে থেকে শুরু হয়নি। দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, মান্ধাতার আমলের সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাপদ্ধতি, ঘুষ, মেধাবীদের অবমূল্যায়ন, সৃজনশীল কাজের অভাব, সৃজনশীল কাজের অবমূল্যায়ন বন্ধ করলে এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যেতে পারে।’

মুহিত আহমেদ জামিল লিখেছেন, ‘পড়াশোনা শেষ করলেই যে বাংলাদেশে চাকরি হয়ে যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাইরের দেশে পড়াশোনা শেষ করে ভালো মানের একটা চাকরি না করতে পারলেও মোটামুটি লেভেলের কিছু একটা তো করা যায়। কিন্তু এই সুযোগটা আমাদের এখানে নেই। চাকরিক্ষেত্রের যথেষ্ট অভাব আছে আমাদের দেশে। যেগুলো আছে, সেগুলোর আবার নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তরুণদের দেশে আটকে রাখতে চাইলে সবার আগে যা যা করতে হবে:
১. অবকাঠামোগত উন্নয়ন
২. পর্যাপ্ত চাকরিক্ষেত্র তৈরি করা
৩. যোগ্যতা আর দক্ষতার ভিত্তিতে সবকিছুতে সুযোগ দেওয়া, কোটার ভিত্তিতে নয়
৪. আন্তর্জাতিক মানের বেতনসহ অন্যান্য আকর্ষণীয় সুবিধা দেওয়া
৫. আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাব্যবস্থার প্রণয়ন ঘটানো
৬. মেধাবীদের কদর করা
৭. পর্যাপ্ত গবেষণা করার সুযোগ, ফান্ড দেওয়া
৮. সর্বোপরি রাজনৈতিক সমস্যার জাঁতাকল থেকে তরুণদের মুক্তি দেওয়া
৯. সত্যিকার অর্থেই তরুণদের কাজ করার সুযোগ দেওয়া।

মো. জাহাঙ্গীর আলমও মুহিত আহমেদের সুরে সুর মিলিয়ে পাঁচটি উপায়ের কথা লিখেছেন—প্রথমত, কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া। দ্বিতীয়ত, আইটি শিক্ষাভিত্তিক সিলেবাস প্রণয়ন। তৃতীয়ত, যোগ্যতাভিত্তিক নিয়োগ। চতুর্থত, কোটা ব্যবস্থার বিলোপসাধন। পঞ্চমত, সুশাসন নিশ্চিত করা।
ইসমাইল হোসেন বলছেন, ‘উপযুক্ত কাজ না থাকা (অপেক্ষাকৃত কম থাকা), কাজের যথাযথ মূল্যায়ন না করা, মেধাবীদের গুরুত্ব না দেওয়া, বিভিন্ন বিষয়ে কোটা চালু রাখা, শিক্ষার বৈষম্য, উত্তম কাজের পরিবেশ না থাকা, বিশেষত সরকারি চাকরিতে মোটা অঙ্কের ঘুষ প্রভৃতি কারণগুলো এই পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ।’

হিমেল শাহাদাত বলছেন, দেশে চাকরি নিতে ঘুষ লাগে, ব্যবসা করতে চাঁদা লাগে, ব্যবসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছাতে সরকারি সব অফিসে ঘুষ দিতে হয়, পরিবহনে যানজট ও এক্সট্রা মাশুল দিতে হয়, রাস্তায় অকারণে পুলিশের তল্লাশি ও গাঁজা বা ইয়াবা মামলায় ফেঁসে যাওয়া কিংবা ছিনতাইয়ের ভয়, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি হওয়ার আশঙ্কা, মেধা থাকা সত্ত্বেও আকাঙ্ক্ষিত বিষয়ে পড়তে না পারা, কোটার কারণে ও মামার জোরে মেধাতালিকায় থাকার পরেও চাকরি না পাওয়া, অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরকারি দুর্নীতির চেইনে নিজেকে সমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে হতাশায় ভোগা, এসব কারণে তরুণেরা এ ধরনের চিন্তা করতে বাধ্য হয়।’

সৈকত আকবর লিখেছেন, ‘দেশ আমাকে মূল্যায়ন না করতে পারলে আমার কীই–বা করার আছে। আমি তো আর সিনেমার হিরোর মতো রিয়েল লাইফের হিরো নই। রিয়েল লাইফের হিরো হচ্ছেন সরকার। চাইলে সরকার দেশীয় কাঠামো চেঞ্জ করতে পারেন, দেশের পরিবর্তন আনতে পারেন। দুর্নীতি সকল উন্নতির অন্তরায়।’

মো. মনিরের সোজাসাপ্টা কথা, ‘তরুণেরা যেসব সুযোগ-সুবিধার জন্য বিদেশ গিয়ে থাকতে চান, সেই সব সুযোগ-সুবিধা আমাদের দেশে থাকলে তাঁরা আর যেতে চাইতেন না।’