সরে দাঁড়ালেন বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা

বৃষ্টির মধ্যেও কক্সবাজারের বায়তুশশরফ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন অনেক ভোটার। ছবি: প্রথম আলো
বৃষ্টির মধ্যেও কক্সবাজারের বায়তুশশরফ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন অনেক ভোটার। ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালটে সিল ও এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি ও জামায়াতের দুই মেয়র প্রার্থী বেলা আড়াইটার দিকে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে দুই মেয়র প্রার্থী প্রহসনের নির্বাচন বাতিল করে পৌরসভায় নতুন করে ভোট গ্রহণের দাবি করেন।

তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুজিবুর রহমান বলেন, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা পরিকল্পিতভাবে আগেভাগে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন, যা হাস্যকর।
নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১৭ ও কাউন্সিলর পদে ৬৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটার সংখ্যা ৮৩ হাজার ৭২৮।

ভারী বর্ষণ, ফাঁকা কেন্দ্র
ভারী বর্ষণের মধ্যে পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কিছু কেন্দ্রে কাউন্সিল প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ব্যালটে জোর করে সিল মারার ঘটনা চোখে পড়েছে। কেন্দ্রের বাইরে ভোটারের উপস্থিতি কম হলেও ভেতরে ছিল জমজমাট।
সকাল সাড়ে আটটায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবদিয়াপাড়া মুহিউচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ভারী বর্ষণ উপেক্ষা করে শতাধিক ভোটার কেন্দ্রে হাজির হয়েছেন। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, আধা ঘণ্টা ভোট পড়েছে ৫৬টি। এ কেন্দ্রে ভোটারসংখ্যা ২ হাজার ৬৬১।
পাশের সমিতির পাড়া ইসলামিয়া রিসার্চ সেন্টার কেন্দ্র, ফদনারডেইল মুক্তি কেন্দ্র, উত্তর নুনিয়াছটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। ভোটারের উপস্থিতি কম, কিন্তু প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগ হয়েছে ৯০ থেকে ১২৩টি।
সকাল নয়টায় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বায়তুশশরফ জব্বারিয়া একাডেমি কেন্দ্রে দেখা গেছে ভোটারদের উপস্থিতি ১০ থেকে ২০ জন ।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা পিন্টু আরেং বলেন, ১ ঘণ্টায় ৬টি বুথে ভোট পড়েছে ৭০টি। কেন্দ্রে ভোটার আছে ২ হাজার ১৮০। বৃষ্টিপাতের কারণে ভোটার উপস্থিতি কম।

বৃষ্টি ঠেকানোর চেষ্টায় এক ভোটারের। ছবি: প্রথম আলো
বৃষ্টি ঠেকানোর চেষ্টায় এক ভোটারের। ছবি: প্রথম আলো

পার্শ্ববর্তী ডি-ওয়ার্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও ভোটারদের উপস্থিতি ১০-১২ জন। কোনো নারী ভোটার নেই। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা গোপাল কৃষ্ণ দাশ বলেন, বৃষ্টির কারণে ভোটাররা আসছেন না। দেড় ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ৯৭টি।

সকাল ১০টায় নুনিয়াছটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কথা হয় আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে ভোটারের উপস্থিতি কম হলেও ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। তবে তিনি ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাত-আটটি কেন্দ্রে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর লোকজন ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলেন।
বেলা ১১টায় ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কস্তুরাঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা গেছে, বাইরে ফাঁকা, ভেতরে ৪০ থেকে ৫০ জন লোক জড়ো হয়ে আছেন।
সংরক্ষিত নারী কাউন্সিল প্রার্থী হুমাইরা বেগম অভিযোগ করেন, কেন্দ্রের ভেতরে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থীর লোকজন সিল মারছেন। এই কেন্দ্রের তিনতলার পুরুষ কক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, ম্যাজিস্ট্রেট জাল ভোটের অভিযোগে ১৫টি ব্যালট জব্দ করেছেন এবং জাল ভোট বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিচ্ছেন। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রণজিৎ বড়ুয়া বলেন, বৃষ্টির কারণে ভোটাররা বাইরে দাঁড়ানোর জায়গা না পেয়ে কক্ষের ভেতরে এসে ভিড় করছেন। এ সময় কিছু জাল ভোট প্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে। ম্যাজিস্ট্রেট কিছু জাল ব্যালট বাতিল করেছেন।
ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উমিদিয়া জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে দুই কাউন্সিল প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বায়তুশশরফ জব্বারিয়া একাডেমি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
দুপুর ১২টার দিকে শহীদ তিতুমীর কেন্দ্রে কথা হয় নাগরিক কমিটির প্রার্থী সরওয়ার কামালের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই কেন্দ্রে ভোট সুষ্ঠুভাবে হলেও ১, ২, ৩, ৪, ৮, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত ২৫টি কেন্দ্রে মেয়রের ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নৌকা প্রতীকের সিল মারা হয়েছে।
বেলা আড়াইটার দিকে বাহারছড়া পিটিআই কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থী রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন মোটেও সুষ্ঠু হচ্ছে না। ১২টি ওয়ার্ডের অন্তত ১৮টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ব্যালট ছিনতাই করে নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে। শত শত ভোটার ব্যালট না পেয়ে ভোট দিতে না পেরে কেন্দ্রে থেকে ফিরে এসেছেন। বলা যায়, এটা প্রহসনের নির্বাচন।
সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ৩৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে অন্তত ২১টি সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভোটকেন্দ্রগুলোতে সব প্রার্থীর এজেন্টরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর থেকে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীর কাউকে দেখা যায়নি। এ সময় জাল ভোটের অভিযোগ ওঠে। দুপুর থেকে ১৪টি ভোটকেন্দ্র বৃষ্টির পানিতে ডুবে ছিল। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নিষ্ক্রিয় ছিল।

ফলাফল প্রত্যাখ্যান, আবারও ভোট গ্রহণের দাবি
বেলা তিনটায় টেকপাড়ার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে পৌর নির্বাচন প্রত্যাখ্যান ও আবারও ভোট গ্রহণের দাবি জানান নাগরিক কমিটির ব্যানারে জামায়াতের মেয়র প্রার্থী সরওয়ার কামাল। তিনি বলেন, সকাল নয়টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৪টি, ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৪টি, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ২টিসহ ২৫টি কেন্দ্রে অন্তত ১৬ হাজার ব্যালটে নৌকা প্রতীকে জোর করে সিল মেরেছেন।

বেলা সাড়ে তিনটায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে একই ঘোষণা দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি ভোট গ্রহণ স্থগিত ও নতুন করে ভোট গ্রহণের দাবি তোলেন। তিনি বলেন, ৩৯ কেন্দ্রের মধ্যে ১৯টি কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হয়েছে। এ সময় তাঁর এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মোজান্মেল হোসেন বলেন, সারা দিন ভারী বর্ষণের মধ্যেও ভোটারের উপস্থিতি ছিল আশানুরূপ, ভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।