আ.লীগে 'বিদ্রোহী'ভীতি, জামায়াতে নত বিএনপি

শিবলী সাদিক, দেলোয়ার হোসেন,  আনোয়ারুল ইসলাম ও এ জেড এম জাহিদ
শিবলী সাদিক, দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম ও এ জেড এম জাহিদ

চাচা দেলোয়ার হোসেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য। ভাতিজা শিবলী সাদিক দিনাজপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংসদ। চাচা গত নির্বাচনে মনোনয়ন পেলেও দলীয় প্রধানের নির্দেশ আর ভাতিজার প্রতি ‘ভালোবাসার কারণে’ সরে দাঁড়িয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। তবে এবার জাপা থেকে তাঁর মনোনয়ন পাওয়া নিশ্চিত বলে তিনি মনে করেন। আর ভাতিজা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেলে তাঁর আপত্তি নেই।

চাচা দেলোয়ারের আপত্তি না থাকলেও সাংসদ শিবলী সাদিকের মনোনয়নে আপত্তি তুলেছেন স্থানীয় পাঁচ আওয়ামী লীগ নেতা। সভা–সমাবেশ, লিখিত ও মৌখিকভাবে সভাপতিসহ দলীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাছে শিবলী সাদিককে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। না হলে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হওয়ার হুঁশিয়ারিও দিচ্ছেন তাঁরা। অতীতেও এখানে বেশ কয়েকটি নির্বাচনে বিদ্রোহীরা ভুগিয়েছেন আওয়ামী লীগকে।

বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর, ঘোড়াঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর–৬ আসনটি বরাবরই জোটের শরিক জামায়াতকে ছাড় দিয়ে আসছে বিএনপি। এবারও জোটের মনোনয়ন ‘চূড়ান্ত’ ধরে নিয়ে মাঠে কাজ করছে জামায়াত। তবে দলীয় সাংসদ না থাকায় সংগঠন ও নেতা–কর্মীদের হতাশার কথা তুলে ধরে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির দুই নেতা। ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির রবীন্দ্রনাথ সরেনকে পরাজিত করে সাংসদ হন শিবলী সাদিক। 

আ.লীগে ‘বিদ্রোহী’ জুজু
সাংসদ শিবলী সাদিকের বিপরীতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চান ছয়জন। তাঁরা হলেন সাবেক সাংসদ আজিজুল হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আলতাফুজ্জামান মিতা, বিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজানুর রহমান, নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, নবাবগঞ্জের কুশদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইনুল হক চৌধুরী, ঘোড়াঘাটের পালশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী মাকসুদুর রহমান চৌধুরী।

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ সাংসদ শিবলী সাদিককে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে স্বতন্ত্র হলেও তিনি নির্বাচন করবেন।

আজিজুল হক চৌধুরী এককভাবে কাজ করছেন। বাকি পাঁচ মনোনয়নপ্রত্যাশী একত্রে শিবলী সাদিকের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সভা–সমাবেশ করছেন।

১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেছিলেন শিবলী সাদিকের বাবা মোস্তাফিজুর রহমান। তখন তিনি অল্প ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে হারলেও ১৯৯৬ সালে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হন। ২০০১ সালে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন আজিজুল হক। তখন অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে যান আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমান। বিজয়ী হয় জামায়াত।

শিবলী সাদিক বলেন, তিনি তাঁর বাবার মতো উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে সাংসদ হয়েছেন। যাঁরা আজ তাঁর বিরোধিতা করছেন, তিনি তাঁদের প্রত্যেককে যথাযথ সম্মান দিয়েছেন, মূল্যায়ন করেছেন। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় দিনাজপুর-৬ আসনে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করেছেন। 

জামায়াতে ন্যুব্জ বিএনপি
১৯৯১ সালের নির্বাচনে এ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন জামায়াতের আজিজুর রহমান চৌধুরী। এরপর থেকে (১৯৯৬–এর ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন ছাড়া) বিএনপি এ আসনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে জামায়াতকে ছেড়ে দেয়। ২০০১–এ চারদলীয় জোট থেকে জামায়াতের আজিজুর রহমান আবারও বিজয়ী হন। ২০০৮ সালে মাত্র এক হাজার ভোটের ব্যবধানে জামায়াতের আরেক প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম হেরে যান।

এখানে দীর্ঘদিন থেকে মাঠে কাজ করছেন জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোটগতভাবেই সংসদ নির্বাচন হবে। বিএনপির কাছ থেকে যে কয়েকটি আসন নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে দিনাজপুর-৬ অন্যতম। এখানকার চারটি উপজেলার মধ্যে নবাবগঞ্জের উপজেলা চেয়ারম্যান এবং একজন ভাইস চেয়ারম্যান, ঘোড়াঘাটের এবং হাকিমপুরের দুই ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াতের। এ আসনে তাঁদের অবস্থান খুবই শক্ত।

তবে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান বলেন, জামায়াতকে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কথা হয়নি। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এখানকার নেতা–কর্মীরা তাঁকে সাংসদ হিসেবে দেখতে চান বলে জানান তিনি।

আগামী পর্ব ফেনী–১ আসন নিয়ে