দায়মুক্তি দিয়ে আবারও অনুসন্ধান!

দুর্নীতির অভিযোগ থেকে একজন প্রকৌশলীকে দায়মুক্তি দেওয়ার দেড় বছরের মধ্যে একই অভিযোগে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আবারও অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একসময় জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হলেও এবার তাঁর বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধান হচ্ছে।

এই অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আজ বুধবার স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ওই প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাঁকে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন সংস্থার উপপরিচালক মো. নাসির উদ্দিন।

ওই প্রকৌশলীর নাম মো. আনোয়ার আলী। তিনি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঢাকার সার্কেল-১–এর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। বর্তমানে সার্কেল-৬ কুমিল্লার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মরত।

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার আলী প্রথম আলোকে বলেন, দুদক থেকে যেসব তথ্য চাওয়া হয়েছে, তার সবকিছুই দেওয়া হয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তাঁর দাবি, যা সম্পদ আছে, তার সবই বৈধ। তিনি ২৮ বছর ধরে আয়কর দিচ্ছেন। আয়কর নথিতে সব সম্পদের তথ্য দেওয়া আছে।

এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়ে দেখা যায়, আনোয়ার আলীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় গত বছরের জানুয়ারিতে নিষ্পত্তি হয়ে যায়। জানা গেছে, ২০০২ সালে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর আমলে তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

দীর্ঘদিন ধরে দুদকে ওই অভিযোগ পড়ে ছিল। ২০১৫ সালে দুদকের পক্ষ থেকে তাঁকে নোটিশ দিয়ে নথিপত্র চাওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত তাঁর আয় ব্যয়ের নথি পর্যালোচনা করে দুদক। শেষে কোনো অনিয়ম না পেয়ে অভিযোগটি নিষ্পত্তি করা হয়। এ বিষয়ে দুদকের সাবেক সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আনোয়ার আলীকে দেওয়া হয়। কপি পাঠানো হয় সরকারি সংশ্লিষ্ট সবগুলো দপ্তরে।

দুর্নীতির অভিযোগ নিষ্পত্তির দেড় বছরের মধ্যেই আনোয়ার আলীর বিরুদ্ধে নতুন অনুসন্ধান শুরু হয় এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে। দুদকে আসা একটি অভিযোগ যাচাই–বাছাই করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়, তাঁর বিরুদ্ধে শতকোটি টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁকে তলব করে নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে তিনি ও তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের অর্জিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের বিবরণ, সবার আয়ের উৎস এবং প্রথম থেকে সর্বশেষ দাখিলকৃত সব আয়কর রিটার্নের কপি চাওয়া হয়।

দুদক সূত্র জানায়, আজ দুদকে হাজির হয়ে আনোয়ার আলী সব নথিপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিষ্পত্তি হওয়ার কাগজপত্রও অনুসন্ধান কর্মকর্তার কাছে দিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে দুদকের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ঘটনা দুদকে এর আগেও ঘটেছে। এমনও ঘটেছে, একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একই সময় একই অভিযোগে তিনটি অনুসন্ধান হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান এবং মামলার নথিপত্র সংরক্ষণ এখনো পুরোনো পদ্ধতিতে হওয়ার কারণে এমনটা ঘটে। তাঁরা স্বীকার করেন, এর মাধ্যমে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হয়রানির শিকার হন।

সম্প্রতি একজন সাবরেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একটি অভিযোগ ১৯ বছর পর নিষ্পত্তির খবর প্রকাশ হয় প্রথম আলোয় । ১৯ বছর ধরে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ওই ব্যক্তি জীবন কাটিয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ঘটনায় অনেকে দুর্ভোগে পড়েছেন, অনেকে দুর্ভোগ সয়েছেন, এটি সত্য। এ বিষয়ে কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে।