দেওতারা ফুল ও গাছ

দেওতারা, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান থেকে তোলা।  ছবি: লেখক
দেওতারা, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান থেকে তোলা। ছবি: লেখক

কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের পাহাড়ি ছড়াপথে, আংশিক ছায়াময় ঢালে দেখা হয় দেওতারার সঙ্গে। পুষ্পময় দেওতারা গাছের সাক্ষাৎ পেতে দুই কিলোমিটারের চড়াই–উতরাই পার হতে হয়েছে। যে গাছে ফুল ঝুলে আছে তার পাতা লম্বাটে, এলাচিগাছের পাতার চেয়ে কিছুটা চ্যাপ্টা। রং জলপাই সবুজ।

দেওতারার ইংরেজি নাম মালাক্কা জিনজার, অর্নামেন্টাল জিনজার। বৈজ্ঞানিক নাম alpinia malaccensis.

দেওতারা রাইজোমসমৃদ্ধ বলিষ্ঠ বীরুৎ–জাতীয় উদ্ভিদ। আদিবাসীরা প্রধানত ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবে এর বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করে। রাইজোমের রস অজীর্ণ এবং অম্লের কারণে পেটব্যথা উপশমে ব্যবহার করা হয়। শিশুদের শ্বাসকষ্ট এবং বড়দের ঠান্ডাজনিত রোগে রাইজোম ব্যবহার করা হয়। উত্তর ভারতে এর কচি ডগা সেদ্ধ করে খাওয়া হয়। পুরো গাছটাই সুঘ্রাণময়। এ গাছ থেকে তেলও পাওয়া যায়।

বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর বনে দেওতারা জন্মায়। রাইজোম এবং বীজ থেকে সহজেই বংশবিস্তার করে। আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে প্রজাতিটি বনের পরিবেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ বাদে এটি পাশের দেশ ভারত, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কায় দেখা যায়।

দেওতারা ফুলের গাছ প্রায় ৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। পাতা সবৃন্তক, বৃন্ত ৩-৫ সেন্টিমিটার লম্বা। পুষ্পবিন্যাস রেসিম, খাড়া, ২০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা নৌকাকৃতির দুটি বড় মঞ্জরি পুষ্পবিন্যাসকে আবৃত করে রাখে। বৃতি সাদা, ঘণ্টাকৃতির। ফুলের পাপড়ি তিনটি, সাদা রঙের। ফুল ফোটে মে থেকে অক্টোবরে। ফুল সুগন্ধিময় এবং অনেক দিন ধরে ফুটে থাকে।

সুন্দর ফুলের জন্য উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকার এ কন্দজ উদ্ভিদ বাড়ির বাগানে এবং উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য রোপণ করা হচ্ছে।