আলোচনায় শুধু মান্না আর জিন্নাহ

মাহমুদুর রহমান মান্না ও  শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ
মাহমুদুর রহমান মান্না ও শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ
>
  • বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৩ জন
  • মহাজোটের (জাপা) সাংসদ জিন্নাহ এবারও মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে ধারণা
  • আসনটিতে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন ঐক্যফ্রন্টের মাহমুদুর রহমান মান্না
  • আসনটিতে আ.লীগের ১০ জন ও বিএনপির ৭ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন

জটিল সমীকরণে ঘুরপাক খাচ্ছে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনের রাজনীতি। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের ১০ জন ও বিএনপির ৭ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। কিন্তু প্রার্থী হিসেবে ওই দুই দলের কেউই আলোচনায় নেই।

এবারের নির্বাচনে জেলার আলোচিত এই আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে শরিক দলের প্রার্থীদের। মহাজোট ঠিক থাকলে বর্তমান সাংসদ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ এবারও মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে স্থানীয় নেতা–কর্মীদের ধারণা। অন্যদিকে বিএনপির ‘দুর্গ’ হিসেবে পরিচিত এ আসনে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না।

এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪১৩ জন। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছয়টি সংসদ নির্বাচনে এখানে একবার জয় পেয়েছে জামায়াত, চারবার বিএনপি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির এ কে এম হাফিজুর রহমান ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মহাজোটের শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। তিনি ভোট পান ৮৮ হাজার ৮৯০টি। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির রেজাউল বারী ডিনা ১ লাখ ১৬ হাজার ৮০৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। সেবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মাহমুদুর রহমান মান্না ৪৭ হাজার ৮১৯ ভোট ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ১৭ হাজার ৭১৬ ভোট পান।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, এবার এ আসনের জন্য আওয়ামী লীগ থেকে ১০ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজার রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম ফকির, ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন, জেলা পরিষদের সদস্য আবদুল করিম, জেলা কৃষক লীগ নেতা আবদুল মোতালেব, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য আয়েশা খাতুন, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা উজ্জ্বল প্রসাদ কানু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ শাহাজাদা চৌধুরী ও তাঁর ছেলে সৈয়দ ওয়ালী মোকারম চৌধুরী।

বিএনপির স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, এদিকে বিএনপি থেকে ৭ জন মনোনয়ন ফরম তুলে জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন সাবেক সাংসদ এ কে এম হাফিজুর রহমান, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সাংসদ নূর আফরুজ বেগম, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মীর শাহে আলম, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম আর ইসলাম স্বাধীন, জেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক আবদুল বাসেত, সাবেক কূটনীতিক মুহাম্মদ সিদ্দিক ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা আশিক মাহমুদ ইকবাল।

গত তিন দিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বেশ কিছু ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এসব মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম ছাপিয়ে আলোচনায় রয়েছে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাম। ভোটাররা ধরেই নিয়েছেন এ আসনে মহাজোটের হয়ে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ‘লাঙ্গল’ প্রতীকে আর মাহমুদুর রহমান মান্না ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে নির্বাচন করবেন। তাই এলাকায় ভোটের যত হিসাবনিকেশ তা হচ্ছে এই দুজনকে ঘিরে।

শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের চাওয়া অনুযায়ী মহাজোট তাঁকে মনোনয়ন দেবে। তিনি শতভাগ আশাবাদী মহাজোট থেকে প্রার্থী হচ্ছেন।

তবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একটি অংশ বলছে, ১৯৭৩ সালের পর এ আসনে নৌকা প্রতীক কখনো জিততে পারেনি। ফলে দলের এ আসন নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই। তাই শরিক দল থেকে প্রার্থী করা হয়। কিন্তু গত স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক বেশ ভালো সাফল্য পেয়েছে।

অবশ্য বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেন, দীর্ঘদিন মানুষ ধানের শীষে ভোট দিতে পারেনি। ব্যালটে প্রতীক থাকলে প্রার্থী কোনো বিষয় নয়। তারপরও সবার কাছে পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য একজনকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নিলে আরও বেশি ভালো হবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় মনোনয়নয়প্রত্যাশী মোস্তাফিজার রহমান বলেন, ‘এ আসনে দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আশা করি দীর্ঘদিন পর এ আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করবে।’

বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সাংসদ এ কে এম হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বগুড়ার সবগুলো আসনই বিএনপির নিজস্ব আসন হিসেবে পরিচিত। তাই এখানে অন্য কাউকে দল মনোনয়ন দেবে বলে মনে হয় না। আর আমি এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’