প্রার্থিতা ফিরে পেলেন বিএনপির ৩৭ জন

মনোনয়নপত্র বাতিলের পর নির্বাচন কমিশনে প্রথম আপিল শুনানি হয় বৃহস্পতিবার। তাই সারা দিনই নির্বাচন ভবনে ভিড় ছিল আপিলকারী প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের। আগারগাঁও, ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
মনোনয়নপত্র বাতিলের পর নির্বাচন কমিশনে প্রথম আপিল শুনানি হয় বৃহস্পতিবার। তাই সারা দিনই নির্বাচন ভবনে ভিড় ছিল আপিলকারী প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের। আগারগাঁও, ঢাকা, ৬ ডিসেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

আপিল শুনানির প্রথম দিনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন বিএনপির ৩৭ প্রার্থী। এ ছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট ভুক্ত দলের কয়েকজন প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার তালিকায় রয়েছেন। প্রথম দিনের শুনানিতে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বাদ পড়া একমাত্র প্রার্থী আবদুল মান্নানও (ঝিনাইদহ-৪)।

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের দ্বারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে প্রার্থিতা ফিরে পেতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিলের এই শুনানি হয়। প্রথম দিনে ১৬০ জনের শুনানি হয়। এর মধ্যে ৮০ জন তাঁদের প্রার্থিতা ফিরে পান, ৭৬ জনের প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করা হয়। বাকি চারজনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি স্থগিত অবস্থায় আছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের দশম তলায় স্থাপিত এজলাসে এই শুনানি হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন আপিল শুনানি শোনেন।

প্রথম দিনে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া বিএনপির প্রার্থীরা হলেন, মোরশেদ মিলটনের (বগুড়া-৭), তমিজ উদ্দিন (ঢাকা-২০), মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান রঞ্জন (কিশোরগঞ্জ-২), মো. আব্দুল মজিদ (ঝিনাইদহ-২), মো. গোলাম মওলা রনি (পটুয়াখালী-৩), মোহাম্মদ শাহজাহান (পটুয়াখালী-৩), খন্দকার আবু আশফাক (ঢাকা-১), মো. ফরিদুল কবির তালুকদার-শামীম (জামালপুর-৪), আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী (সিলেট-৩), মো. ফজলুর রহমান (জয়পুরহাট-১), মো. হাসাদুল ইসলাম (পাবনা-৩), মো. আবিদুর রহমান খান (মানিকগঞ্জ-২), মো. আইনাল হক (সিরাজগঞ্জ-৩), এস এম শফিকুল আলম(খুলনা-৬), মো. জয়নাল আবেদিন (ময়মনসিংহ-৭), একেএম মুখলেছুর রহমান (শেরপুর-২), সেলিম ভূঁইয়া (ঢাকা-৫), কেএম মুজিবুল হক (কুমিল্লা-৩), মো. তোফাজ্জল হক (মানিকগঞ্জ-১), আবু আসিফ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), আহাম্মেদ তায়েবুর রহমান (ময়মনসিংহ-৩), ফরহাদ হোসেন (পঞ্চগড়-২), আতাউর রহমান (মানিকগঞ্জ-৩), সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক (ঢাকা-১৪), আবদুল খালেক (কুড়িগ্রাম-৩), নুরুল আমীন (চট্টগ্রাম-১), মোস্তফা কামাল পাশা (চট্টগ্রাম-৩), মো. ইউনুস (কুমিল্লা-৫), মো. রফিকুল ইসলাম (গাইবান্ধা-৩), মো. নাজিমুল ইসলাম (গাইবান্ধা-৫), আব্দুল্লাহ আল মামুন (সিরাজগঞ্জ-৫), আবদুল আজিজ (নাটোর-৪), এম এ মুহিত (সিরাজগঞ্জ- ৬), মেজর (অব.) মনজুর কাদের (সিরাজগঞ্জ-৫), মো. আমিনুল হক (রাজশাহী-১), মো. হানিফ (দিনাজপুর-১) ও এরশাদ উল্লাহ (চট্টগ্রাম-৮)।

এ ছাড়া প্রথম দিনের শুনানিতে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া বিএনপির সংশ্লিষ্ট জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের সদস্যরা হলেন, এম এ বাশার (এলডিপি, ময়মনসিংহ-৮), মো. মাহফুজুর রহমান (গণফোরাম, কুড়িগ্রাম-৪), মো. নেয়ামুল বশির (এলডিপি, চাঁদপুর-৫), ফকির শওকত আলী (জেএসডি, নড়াইল- ২), মো. আফসার আলী (জেএসডি, সাতক্ষীরা-২), মো. হাবিবুর রহমান (বাংলাদেশ মুসলীম লীগ, সিরাজগঞ্জ-৬) ও মো. শফিকুল ইসলাম (বাংলাদেশ মুসলীম লীগ, বগুড়া-২)।

এই শুনানিতে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা হলেন, মো. মামুনুর রশীদ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫), জহিরুল ইসলাম মিন্টু (মাদারীপুর-১), মো. মাহবুব আলম (গাজীপুর-২), মো. জয়নাল আবেদিন (গাজীপুর-২), জেসমিন নূর বেবী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬), মোস্তফা সেলিম (জাতীয় পার্টি, রংপুর-৪), আব্দুল্লাহ আল হেলাল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩), মো. আলাউদ্দিন মৃধা (নাটোর-৪) ও মো. কামরুজ্জামান স্বাধীন (ঝিনাইদহ-৩)।

প্রথম দিনের শুনানিতে বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বৈধতা পেয়েছেন। তাঁরা হলেন, মো. মুখলেছুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), মো. মাহবুব আলম (লক্ষ্মীপুর-১), মো. আশরাফ উদ্দিন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), . মো. আসাদুজ্জামান (রংপুর-১), মো. আবু জাফর (গাইবান্ধা-৩), মো. আনিছুজ্জামান (বরিশাল-২), মোহাম্মদ বাবুবকর ছিদ্দিক (ময়মনসিংহ-২), মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম (চট্টগ্রাম-১৬), আব্দুর রহিম সরকার (গাইবান্ধা-৪), মো. ইউনুছ আলী (কুড়িগ্রাম-৪), মো. আব্দুর রউফ মন্ডল (বগুড়া-৫)ও ফয়জুল মনির চৌধুরী (সিলেট-৫)।

এ ছাড়া বৃহস্পতিবারের শুনানিতে আরও প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন, মোহাম্মদ ফয়সাল বিন (বগুড়া-৬), জাকির পার্টির শাহ আলম (কুড়িগ্রাম-৪), সাইদুজ্জামান (যশোর-৬), মো. তাজুল ইসলাম (কুমিল্লা-১১), মো. জাকির হোসেন (ঢাকা-১৪)।

বৈধতার তালিকায় আছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুর রহমান (সিরাজগঞ্জ-৪) ও সৈয়দ আনোয়ার আহাম্মদ লিটন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩)। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল -জাসদের প্রার্থী মো. আনিছুর রহমান (চট্টগ্রাম-১০), ইসলামী ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী মো. শাহ আলম (কুমিল্লা-৫), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির প্রার্থী মো. সুমন সন্যামত (পটুয়াখালী-১), ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদের জুবায়ের আহমেদ (হবিগঞ্জ-১) ও মৌলানা মুহাম্মদ ছোলাইমান খান রব্বানী (হবিগঞ্জ-৪)।

প্রথম দিনের শুনানি শেষে যে ৭৬ জনের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে এর মধ্যে রয়েছেন, বগুড়া-৪ আসনের আলোচিত প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম (হিরো আলম), বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু (নাটোর-২), মীর মোহাম্মদ নাসির (চট্টগ্রাম-৫), সরকার বাদল (বগুড়া-৭), ও ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২)।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নবাব মো. শামছুল হুদার শুনানির মধ্য দিয়ে এই আপিল কার্যক্রমের শুরু হয়  ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। গত ২৯ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। এরপর গত রোববার মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয়। এদিন নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য জমা দেওয়া ৩ হাজার ৬৫ মনোনয়নপত্রের মধ্যে ৭৮৬টি বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা, যাঁদের মধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের শক্তিধর প্রার্থীও রয়েছেন। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এই নির্বাচনে ২৯৫ আসনে জমা পড়েছে ৬৯৬টি মনোনয়নপত্র। আর সরকারি দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ২৬৪ আসনে জমা দিয়েছে ২৮১টি মনোনয়নপত্র।

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাতিলের বিরুদ্ধে গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে আপিল করেন ইচ্ছুক প্রার্থীরা। এই তিন দিনে মোট ৫৪৩ জন আপিল করেন। এর মধ্যে প্রথম দিন থেকে তৃতীয় দিন পর্যন্ত যথাক্রমে ৮৪, ২৩৭ ও ২২২টি আপিল জমা পড়ে। এসব আপিলের ওপর শনিবার পর্যন্ত শুনানি হবে। বৃহস্পতিবার শুনানি হয়েছে ১ থেকে ১৬০ পর্যন্ত ক্রমিক নম্বরের আবেদনের। শুক্রবার হবে ১৬১ থেকে ৩১০ ও শনিবার হবে ৩১১ থেকে ৫৪৩ ক্রমিক নম্বর আবেদনের আপিল শুনানি।