আবু হেনা এবার সবচেয়ে 'গরিব'

রাজশাহী–৪ (বাগমারা) আসনে এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিদলীয় প্রার্থী হয়েছেন আবু হেনা। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সব প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, আবু হেনার সম্পদের পরিমাণই সবচেয়ে কম। আবু হেনার হলফনামায় দেখা গেছে, ব্যাংকে জমানো ২০ লাখ আর দানের ৭ লাখ টাকা নিয়েই এবার নির্বাচনের মাঠে নামছেন তিনি। এমনকি একটি গাড়িও নেই এই প্রার্থীর।

অথচ আবু হেনা বিপুল অর্থসম্পদের মালিক বলেই এত দিন জানতেন বাগমারার লোকজন। বিশেষ করে ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময়ই তাঁর বিপুল অর্থসম্পদের কথা এলাকায় চাউর হয়। তবে ওই সময় হলফনামার চল না থাকায় আবু হেনার তখনকার সম্পদের কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। সাবেক যুগ্ম সচিব আবু হেনা পরপর দুবার বিএনপি থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও স্থানীয় সাংসদ এনামুল হক। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই দুই প্রার্থীর মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।

আবু হেনার দাখিল করা হলফনামা থেকে জানা গেছে, বিএনপির এই প্রার্থীর ধনসম্পদ তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এনামুল হকের চেয়ে অনেক কম। আবু হেনার চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাংসদ এনামুল হকের বার্ষিক আয় ১৬ গুণ বেশি। আবু হেনার বার্ষিক আয় মাত্র ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তিনি আয়ের সমুদয় টাকা ব্যয়ও করেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। অপরদিকে এনামুল হকের আয় ৫৫ লাখ। তিনি ব্যয় করেন ৪০ লাখ টাকা।

হলফনামায় আবু হেনা জানিয়েছেন, তিনি ব্যাংকে জমানো ২০ লাখ এবং দানের ৭ লাখ টাকা নিয়ে এবারের নির্বাচন করবেন। দান হিসেবে উপজেলার ভবানীগঞ্জের বাসিন্দা ভাতিজা আক্তারুল আলমের কাছ থেকে ৫ লাখ এবং ভবানীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আবদুস সামাদের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নেবেন তিনি। আক্তারুল আলম ও আবদুস সামাদ নিশ্চত করেছেন, তাঁরা নির্বাচন করার জন্য আবু হেনাকে হলফনামায় উল্লেখিত টাকা দেবেন।

হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, আবু হেনার হাতে নগদ কোনো টাকা নেই। তিনি ঢাকা শহরে বসবাস করলেও সেখানে নিজস্ব বাড়ি বা নিজের কোনো গাড়িও নেই। আসবাব নেই বলে উল্লেখ রয়েছে হলফনামায়। এ প্রসঙ্গে আবু হেনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি রাজনীতি করি। রাজনীতি এবং এলাকার লোকজনের জন্য ঢাকার বাড়ি–গাড়ি সবই বিক্রি করে দিয়েছি।’

তবে সম্পদ বলতে ১২ হাজার টাকার একটি মুঠোফোন, ১৮ হাজার টাকা দামের টেলিভিশন এবং ১৯৬৩ সালে পাওয়া ১০ হাজার টাকার স্বর্ণ রয়েছে বলে আবু হেনার হলফনামা থেকে জানা গেছে। এ ছাড়া এই প্রার্থীর জন্মস্থান উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নের কাতিলায় একটি বাড়ি এবং পৈতৃক সূত্রে পাওয়া রাজশাহী নগরে তিন কাঠা জমি রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে একটি এবং প্রতারণার দুটি মামলা রয়েছে। তবে এসব মামলা থেকে এরই মধ্যে অব্যাহতি পেয়েছেন বলে আবু হেনা জানিয়েছেন।

এসব বিষয়ে আবু হেনা জানান, তাঁর বিপুল অর্থসম্পদের বিষয়টি ছিল অপপ্রচার। তিনি যে পরিমাণ সম্পদের আয়কর দেন, সেগুলোই হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। এর বাইরে তাঁর কিছুই নেই।