ভোটের মাঠে সাংসদ ও মেয়র

ইকবালুর রহিম, জাহাঙ্গীর আলম
ইকবালুর রহিম, জাহাঙ্গীর আলম

দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুইবারের সাংসদ ইকবালুর রহিমের সঙ্গে লড়াই হবে দিনাজপুর পৌরসভার দুবারের মেয়র ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও বিএনপি নেতা সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের। নির্বাচনী প্রচারকাজে মহাব্যস্ত তাঁরা।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পৈতৃক নিবাস দিনাজপুর হলেও আসনটি নৌকার ঘাঁটি বলেই পরিচিত। কিন্তু ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী এম আবদুর রহিমকে পরাজিত করে আসনটি দখলে নেন বিএনপি প্রার্থী খালেদা জিয়ার বড় বোন খুরশীদ জাহান হক। ২০০৬ সালে খুরশীদ জাহান হক মারা গেলে অন্তঃকোন্দল ও অনিয়মে দিশাহীন হয়ে পড়েন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ কারণে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী প্রয়াত শফিউল আলম প্রধানকে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন ইকবালুর রহিম। তিনি সাবেক সাংসদ এম আবদুর রহিমের ছেলে। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন ইকবালুর রহিম।
প্রতীক বরাদ্দের পরই আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকবালুর রহিম নির্বাচনী প্রচার চালানো শুরু করেন। তবে প্রতীক বরাদ্দের দুই দিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারে নামেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। প্রায় সবখানেই নৌকা প্রতীকের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন দেখা গেলেও সেভাবে দেখা মেলেনি ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার।
দিনাজপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, ‘আওয়ামী সরকারের যে দৃশ্যমান উন্নয়ন ও অর্জন দিনাজপুরে ইকবালুর রহিমের হাত ধরে হয়েছে, তাতে জয়ের ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী। যুবলীগ ইতিমধ্যে ছয়টি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি ভোটারদের নিরাপদে ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। শুধু যুবলীগ নয়, আওয়ামী লীগ ও অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোও প্রচার চালাচ্ছে।’
স্থানীয় কয়েকজন ভোটার বলেন, গত ১০ বছরে দিনাজপুর–৩ আসনে বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হলেও দিনাজপুর পৌর এলাকার তেমন কোনো উন্নয়ন চোখে পড়ে না। বিশেষ করে রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবস্থা বেশ নাজুক। এ বিষয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগের সাংসদ এবং বিএনপি–সমর্থিত মেয়র উভয়েরই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। সাংসদ বলছেন, মেয়র কখনোই তাঁর কাছে কোনো বিষয় নিয়ে আসেননি। অন্যদিকে মেয়রের অভিযোগ, তিনি বিএনপি–সমর্থিত মেয়র বলেই পৌরসভার উন্নয়নে সাংসদ তাঁকে কোনো বরাদ্দ পেতে সহযোগিতা করেননি। উল্টো মামলা–হামলার শিকার হয়েছেন তিনি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে দিনাজপুর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হক বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে আওয়ামী নেতা–কর্মীরা কোনো প্রকার বাধার সৃষ্টি না করলেও আমরা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছি পুলিশের দ্বারা। শুধু প্রার্থীর সঙ্গে যে কজন থাকেন, তাঁরা ছাড়া অন্য কোনো নেতা–কর্মী প্রচারে নামতে পারছেন না। এক মামলা থেকে জামিন পাওয়ামাত্রই অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে নেতা–কর্মীদের। গত চার দিনে দিনাজপুর শহর থেকেই তাঁদের ১০-১২ জন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘সরকারের অত্যাচার–নিপীড়নে মানুষ আজ অতিষ্ঠ, দেশে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে আমরা সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে সংগ্রামে নেমেছি।’
এই আসনে মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর মধ্যে হবে। তবে এখানে কাস্তে প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির বদিউজ্জামান বাদল, হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. খাইরুজ্জামান, কুলা প্রতীক নিয়ে বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী মো. আশরাফুল ইসলাম এবং হারিকেন প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রার্থী সৈয়দ মাহমুদ উল করিম প্রচার চালাচ্ছেন।
জাতীয় সংসদের দিনাজপুর-৩ (সদর) আসনটি ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এখানে ভোটার ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৮৮ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮১।