গাছগুলো যেন কাঁদছে

>

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরের পামগাছগুলোতে ঠুকে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য পেরেক। গতকাল বিকেল।  জুয়েল শীল
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরের পামগাছগুলোতে ঠুকে দেওয়া হয়েছে অসংখ্য পেরেক। গতকাল বিকেল। জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ৫৬টি পাম গাছে ১০০ থেকে ১৫০টি করে পেরেক ঠুকে দেওয়া হয়েছে।

চার ইঞ্চি লম্বা পেরেকের দুই ইঞ্চি পর্যন্ত ঠুকে দেওয়া হয়েছে গাছে। একটি দুটো নয়, প্রতিটি গাছেই ‘ঘর হয়েছে’ ১০০ থেকে ১৫০টি পেরেকের। নির্যাস বেরিয়ে কালচে দাগ হয়ে গেছে পেরেকের গোড়ায় গোড়ায়। যেন গাছগুলো কাঁদছে!

এই দশা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫৬টি পাম গাছের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে—গাছগুলোতে পেরেক ঠুকিয়েছে স্বয়ং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই। এর পেছনের কারণ—গাছের গায়ে যাতে কেউ পোস্টার-ব্যানার সাঁটাতে না পারে।

পেরেক ঠুকলে গাছের কী ক্ষতি হতে পারে? জানতে চাওয়া হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শেখ বখতিয়ার উদ্দীনের কাছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পেরেক ঠুকলে গাছের জীবনীশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। কারণ গাছ শেকড়ের মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করে। পেরেক ঠুকলে খাবার সংগ্রহে বাধা তৈরি হবে আর গাছের ওই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তা দিয়ে ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব ঢোকে। এতে ধীরে ধীরে মরে যেতে পারে গাছ।

গতকাল বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মুখ থেকে ডেন্টাল ইউনিটের মুখ—প্রায় আড়াই শ গজের এই জায়গার সড়কের দুপাশে সব মিলিয়ে ৬২টি শোভাবর্ধনকারী পাম প্রজাতির গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৬টি গাছের প্রতিটিতেই শেকড়ের ওপর থেকে পাঁচ হাতসমান জায়গা পর্যন্ত ১০০ থেকে ১৫০টি পেরেক ঠুকে দেওয়া হয়েছে। ঠুকে দেওয়ার পর বাকি যে অংশটুকু বেরিয়ে আছে সেটিকে বেঁকে দেওয়া হয় গাছের গায়েই। অন্য ছয়টি গাছ অবশ্য পেরেকমুক্ত থাকতে পেরেছে। কারণ, সেগুলোর অবস্থান মানুষের নাগালের বাইরে। ইতিমধ্যেই মরে গেছে তিনটি গাছ।

গাছের ছবি তোলার সময় কৌতূহলী মানুষ জড়ো হন। তাঁদেরই একজন রহিম উদ্দীন। এক অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে হাসপাতালে এসেছেন তিনি। রহিম গাছের গায়ে এত পেরেক দেখে বিস্মিত হন আর আফসোস করে বলেন, ‘যে হাসপাতাল মানুষের রোগ সারায়, সেই হাসপাতালেই যেন জোর করেই মারা হচ্ছে গাছগুলোকে।’

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান হাসপাতালের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি যোগদান করার আগেই হয়তো পেরেকগুলো ঠোকানো হয়েছিল। বিষয়টি সম্পর্কে আমি খোঁজখবর নেব। কেন লাগানো হয়েছিল তা দেখব। এরপর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেব।’

তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ছাদেকুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে জানান, প্রায় দেড় বছর আগে গাছগুলোতে পেরেকগুলো ঠুকে দেওয়া হয়েছিল। কারণ আগে গাছগুলোতে ব্যানার-পোস্টার সাঁটানো হতো। এতে শোভাবর্ধনের বদলে বিশ্রী অবস্থা সৃষ্টি হতো। তাই যাতে কেউ পোস্টার-ব্যানার লাগাতে না পারে সেজন্য পেরেক গেঁথে দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

গাছে পেরেক ঠোকার বিষয়ে সরকারিভাবে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই বলে জানান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপপরিচালক নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, এটা কাণ্ডজ্ঞানের বিষয়। কারণ গাছের প্রাণ আছে। তাই তার ব্যথাও আছে। এটা যদি মানুষ না বোঝে—আইন দিয়ে কী হবে?