রোহিঙ্গা শিবিরে জলবসন্তের প্রকোপ

রোহিঙ্গা পরিবার।  ফাইল ছবি
রোহিঙ্গা পরিবার। ফাইল ছবি
>

• গত দুই সপ্তাহে জলবসন্তে ৮৩২ জন আক্রান্ত
• আক্রান্তদের ৩৯ শতাংশের বয়স ৫ বছরের কম
• আক্রান্তদের মধ্যে ৫১ শতাংশ উখিয়ার
• আক্রান্তদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ টেকনাফের
• আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়ার শঙ্কা
• নজরদারি বাড়িয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে জলবসন্ত (চিকেন পক্স) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত দুই সপ্তাহে এ রোগে ৮৩২ জন আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবদুল মতিন। কয়েক দিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সিভিল সার্জন জানিয়েছেন।

সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবদুল মতিন বলেন, জলবসন্ত ছোট-বড় সবাইকে আক্রমণ করে। এটা খুবই ছোঁয়াচে একটি রোগ। এ রোগে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় এই অস্বস্তিকর অবস্থা থাকে। প্রথমে সামান্য জ্বর হতে পারে, এরপর ফোসকা পড়ে, চুলকানি হয়। অবশেষে ফোসকা থেকে শুকনা মরা চামড়া উঠে আসে। এ রোগের লক্ষণ হলো গায়ে প্রচণ্ড জ্বর হয়, হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোসকার মতো দেখা দেয়।

রোহিঙ্গাদের ভাষায় এ রোগের নাম ‘হাঁরি’।

সিভিল সার্জন বলেন, এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রচুর চুলকানি ও শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়। তিনি বলেন, শীত মৌসুমে সাধারণত এ রোগ দেখা দেয়।

প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে সিভিল সার্জন বলেন, ‘সাধারণত সাত দিন পর এ রোগ ভালো হয়ে যায়। এরপরও জ্বর থাকলে জ্বরের ওষুধ খেতে হবে। তিনি বলেন, এ রোগ প্রতিরোধে একটি টিকা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এ টিকা নেই।’

গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এই ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাম্পের ৮৩২ জন জলবসন্তে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ৫১ শতাংশ উখিয়ার এবং ৪৯ শতাংশ টেকনাফের। এ ছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে ৩৯ শতাংশের বয়স ৫ বছরের কম। বাকি ৬১ শতাংশই এর চেয়ে বেশি বয়সী। সম্প্রতি জলবসন্তে আক্রান্ত তিন বছর বয়সী একটি শিশু মারা গেছে, যদিও তার মৃত্যুর কারণ সরাসরি এই রোগ নয়। 

সরেজমিন

গতকাল বিকেলে টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়ে দেখা যায়, শিশুসন্তানের নাকেমুখে কাপড় মুড়ে চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র থেকে ঘরে ফিরছেন নুরুন নাহার বেগম। একই চিত্র দেখা গেছে এই শিবিরের অন্যান্য জায়গায়ও।

লেদা শিবিরের নুরুন নাহার বেগম নামের এক নারী বলেন, তাঁর পরিবারে সাতজন সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে ছোট শিশুসন্তানটি জলবসন্তে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে শিশুটিকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। অপরাপর সন্তানরাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে শঙ্কায় আছি।’

লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল মতলব ও কুতুপালংয়ের মধুরছড়া-২ শিবিরের মাঝি (দলনেতা) ওমর আব্বাস বলেন, কয়েক দিন ধরে শিবিরের বিভিন্ন স্থানে এ রোগ দেখা দিয়েছে।

সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আবদুল মতিন বলেন, তাঁর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য খাতের অংশীদারেরা প্রাদুর্ভাব কমানোর জন্য আজ বুধবার উখিয়া-টেকনাফে পৃথকভাবে স্থানীয় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ শুরু করবেন। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। দুই সপ্তাহ ধরে এ রোগে রোহিঙ্গারা বেশি আক্রান্ত হলেও এ পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। সাধারণত এ রোগে কারও মৃত্যু হয় না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের জলবসন্তের বিস্তার ঠেকাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থাটি কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে এবং যৌথ নজরদারি বাড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি চিকিৎসক বারদান জাং রানা বলেন, জলবসন্ত চিহ্নিত করা এবং এর বিস্তার ঠেকাতে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়েছে। নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: