প্রতীকের আত্মহত্যার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি

তাইফুর রহমান প্রতীক
তাইফুর রহমান প্রতীক

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ছাত্র তাইফুর রহমান প্রতীকের আত্মহত্যার ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং প্ররোচনাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে এ দাবি জানানো হয়। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা অংশ নেন।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ‘একটা ট্র্যাজিক অবস্থায় প্রতীকের জীবনাবসানের দুঃখ অবর্ণনীয়। তাঁর পরিবার, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধবের দুঃখটা আমরা ঠিক বুঝব না। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও অবক্ষয়ের কার্যকারণ আমাদের গভীরভাবে অনুসন্ধান করা দরকার। গত ২০-৩০ বছরে আত্মহত্যা ও অপরাধের হার বেড়েছে। এর কারণ বিচ্ছিন্নতা ও আইনের শাসনের অভাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এ বিষয়ে গবেষণা করে অনেক তথ্য বের করা দরকার, যাতে সরকার চাপ অনুভব করে এবং কতগুলো তথ্য ও প্রশ্নের মুখোমুখি হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম কর্মসূচিতে বলেন, ‘বাজার অর্থনীতির এই যুগে শিক্ষকতাটাকেও আমরা বাজারজাত করে ফেলেছি এবং শিক্ষার্থীদেরও সেদিকেই উৎসাহিত করছি। এর ফলে যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হচ্ছে, সেটি প্রশমনের ক্ষেত্রও আমরা তৈরি করছি না। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতীকের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা শিক্ষকসুলভ ছিল না। আমাদের যেন এমন আর কোনো প্রতীককে দেখতে না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়া এবং তাদের মনের মধ্যে যে আরও অনেক কিছু উঁকিবুকি দেয়, এ জায়গাটা আমাদের উপলব্ধি করা দরকার।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘রাজনৈতিক মতাদর্শ, এলাকাপ্রীতি আর ব্যক্তিগত আনুগত্যের ভিত্তিতে এখন শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রচুর দলীয় ও এলাকা বিবেচনায় নিয়োগ হয়েছে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকা দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম প্রতীকেরা গুমরে গুমরে মারা যাচ্ছে। একজন শিক্ষকের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের কতটা ভালোবাসেন, তাদের কতটা ভালো চান। এই মূল্যায়নে আমার বিবেচনায় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতীকের শিক্ষকেরা শূন্য নম্বর পেয়েছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাকিম আরিফের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক সালমা নাসরীন, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হুমায়ুন কবির প্রমুখ বক্তব্য দেন।

প্রসঙ্গত, তাইফুর রহমান প্রতীক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাওহিদা জাহানের ছোট ভাই।

আরও পড়ুন: