খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৭ মামলা দ্রুত এগোচ্ছে

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ছবি
>

• চারটিই দুর্নীতির মামলা
• সবচেয়ে বেশি এগিয়ে নাইকো দুর্নীতি মামলা
• তিনটি মামলার কাজ চলছে বিশেষ আদালতে
• অন্য তিনটি ঢাকার সিএমএম এবং কুমিল্লার জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও সাতটি মামলার কার্যক্রম দ্রুত এগোচ্ছে। এর মধ্যে তিনটি মামলার কার্যক্রম চলছে বিশেষ আদালতে। অন্য তিনটি ঢাকার সিএমএম এবং কুমিল্লার জেলা জজ আদালতে বিচারাধীন।

অন্যান্য আসামির সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট মামলা হয়েছিল ৩৪ টি। দুর্নীতি, যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, সহিংসতা, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি ও ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে এসব মামলা হয়। এর মধ্যে চারটি মামলা হয় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। এই চারটিই দুর্নীতির মামলা। আর ৩০টি মামলা হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়।

এই ৩৪ টির মধ্যে দুটি মামলায় খালেদা জিয়া ও তাঁর সহ-আসামিদের কারাদণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি দেওয়া রায়ে খালেদা জিয়ার ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। পরে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে হাইকোর্ট দণ্ড বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত বছরের ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়ার ৭ বছর জেল হয়েছে। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি জেলে আছেন।

বর্তমানে যে মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে নাইকো দুর্নীতি মামলা। ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এ এই মামলার বিচারকাজ চলছে। বর্তমানে প্রায় প্রতি সপ্তাহে এই মামলার তারিখ পড়ছে এবং মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আজ মঙ্গলবার মামলার শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, অভিযোগ গঠনের পর সাক্ষ্য গ্রহণ, জেরা এবং যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হবে। তবে বিশেষ আদালতের মামলাগুলোয় আসামিপক্ষকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া সম্পূর্ণ আদালতের ইচ্ছাধীন। কারণ ফৌজদারি কার্যবিধির ২০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই মামলাগুলো পরিচালিত হয়। সেখানে আসামিপক্ষকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়ার বিধান নেই। তবে এই সুযোগ দেওয়া হলেও চলতি বছরের মধ্যেই এই মামলার কার্যক্রম শেষ হবে।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এ চলছে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা। এই মামলায়ও অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায় শুরু হয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি আদালত রাষ্ট্রপক্ষের কাছ থেকে অভিযোগ শুনেছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য আছে। সেদিন থেকে আদালত অভিযোগ সম্পর্কে আসামিপক্ষের বক্তব্য শুনতে পারেন বলে আদালত সূত্র জানায়। এই মামলার কার্যক্রম সম্পর্কে আসামিপক্ষ হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছিল। হাইকোর্ট ছয় মাসের মধ্যে এই মামলার কার্যক্রম শেষ করার জন্য বিচারিক আদালতকে নির্দেশ দিয়েছেন। সে হিসাবে এই মামলার কার্যক্রমও চলতি বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।

ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২-এ চলছে বড়পুকুরিয়া দুর্নীতি মামলা। একাধিক আসামি নানা যুক্তিতে হাইকোর্টে আবেদন করে বিভিন্ন সময় ব্যক্তিগতভাবে মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ আনতে সমর্থ হওয়ায় এই মামলার বিচারকাজ উপরিউক্ত দুটির তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে আছে। তবে এখন হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের পর্যায় শেষ হয়েছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী দিন ধার্য আছে। সেদিন থেকেই মামলাটির অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায় শুরু হতে পারে বলে আদালত সূত্র জানায়।

বিশেষ আদালতের বাইরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলার কার্যক্রম অভিযোগ গঠনের শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। এর একটি ভুয়া জন্মদিন পালন এবং অন্যটি মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করার অভিযোগে দায়ের করা। এই দুই মামলায় খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য আছে।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে চলমান একটি নাশকতার (দারুসসালামে বোমা হামলা) মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে অগ্রবর্তী তালিকায় রয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য আছে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্য যে মামলাটি অগ্রবর্তী অবস্থায় রয়েছে, সেটি কুমিল্লার আদালতে দায়ের হওয়া নাশকতা ও হত্যা মামলা। এ মামলায় এর আগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।

আদালত ও খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সূত্র জানায়, এই সাতটি ছাড়া খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও ১০টি মামলা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারাধীন আছে। আর ১২টি মামলা আছে তদন্তাধীন এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনটি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।