মনু নদে বাঁধ নির্মাণে ১৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প

মৌলভীবাজারের মনু নদের বন্যা সমস্যার সমাধানে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার এ প্রকল্প বর্তমানে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। অনুমোদনের পর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মনু নদের বন্যা সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হবে বলে আশা করছে পাউবো।

মনু নদের বন্যা জেলার কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার জন্য একটি স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিবছরই এই তিনটি উপজেলার কোথাও না কোথাও মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে কমবেশি বন্যা নিয়ম হয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ফসল, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ মূল্যবান নানা স্থাপনা। বারবার বন্যার ছোবলে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে নদের দুই পাশের অনেক পরিবার।

পাউবো মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহিত মনু নদ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকা থেকে উৎপত্তি হয়েছে। ১৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ মনু নদের ৯৩ কিলোমিটার পড়েছে ভারত অংশে। বাংলাদেশে ৭৩ কিলোমিটার। জেলার কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল এলাকা দিয়ে মনু নদ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এটি কুশিয়ারা নদীতে গিয়ে মিশেছে। মনু নদের বাংলাদেশ অংশের উভয় তীরে ১৪০ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। অনেক সময় বাংলাদেশ অংশে ভারী বর্ষণ না হলেও উজানে ভারতের ত্রিপুরা অঞ্চলে বেশি বৃষ্টিপাত হলে নদটি দ্রুত ফুলে–ফেঁপে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে নদটি ভরাট হওয়ার কারণে উজান থেকে দ্রুত নেমে আসা পানি ধারণ করতে পারে না। তখন নদের দুই পারের কোথাও না কোথাও বাঁধ উপচে বা বাঁধ ভেঙে বন্যা হচ্ছে। এতে মানুষের ফসলের পাশাপাশি ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও নানা রকম স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে প্রতিবছর রাস্তাঘাট নির্মাণে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্যে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

এই বাস্তবতায় পাউবো মৌলভীবাজার কার্যালয় মনু নদের বন্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজের একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় মনু নদের দুই তিরের ৬৭টি স্থানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই স্থানগুলোতে জমি অধিগ্রহণ, সিসি ব্লকের সাহায্যে প্রতিরক্ষা কাজ, বাঁধ উঁচু ও প্রশস্ত এবং খননের কাজ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি গত জানুয়ারি মাসে পাউবোর প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। পাউবোর প্রধান কার্যালয়ে প্রকল্পটি নিয়ে সভার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই ও সংশোধনের পর গত ৩১ মার্চ পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটি এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

পাউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনুর দুই তীরের ৬৭টি স্থানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব স্থানে জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে অনেক ধরনের কাজ হবে। প্রকল্পটি যাচাই-বাছাই শেষে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রাকৃতিক বড় রকমের কোনো বিপর্যয় ছাড়া এই এলাকার মানুষকে আগামী ২০-৫০ বছরে আর চিন্তা করতে হবে না। স্বাভাবিক বন্যায় বাঁধের কিছু হবে না।’