মডেল রাউধা আত্মহত্যা করেছেন: পিবিআই

রাউধা।
রাউধা।

মালদ্বীপের মডেল রাউধা আতিফের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলার তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে একই মামলায় দেড় বছর আগে পুলিশের করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের চেয়ে নতুন কিছু পায়নি পিবিআই। পুলিশের ওই প্রতিবেদনের মতো পিবিআইও রাউধা হত্যায় কাউকে অভিযুক্ত করেনি।

১৮ মে পিবিআই এর উপপরিদর্শক ও এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান রাজশাহী মহানগর হাকিম আদালতে এই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আজ বুধবার আদালত তা গ্রহণ করেন।

তদন্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ তদন্তে যা পেয়েছিল, তারাও তদন্ত শেষে একই ফলাফল পেয়েছেন। তদন্তে রাউধাকে হত্যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এর আগে ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর পুলিশ রাউধা হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। তারও আগে দু’দফার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছিল মালদ্বীপের এই মডেল আত্মহত্যা করেছিলেন।

সে সময় মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আসমাউল হক। ওই প্রতিবেদনে রাউধার মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করা হয়নি। রাউধাকে হত্যা করা হয়েছিল, এমনটিও বলা হয়নি। তাই বাদীপক্ষের আইনজীবী ওই প্রতিবেদনে নারাজি দিতে চেয়েছিলেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক আসমাউল হক সে সময় বলেছিলেন, দুই দফার ময়নাতদন্ত, ভিসেরা ও মুঠোফোন পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, রাউধা আত্মহত্যাই করেন। এরপরই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তদন্ত শেষে এবং প্রতিবেদন দাখিলের আগে এ বিষয়টি রাউধার বাবাকেও অবহিত করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেছিলেন, প্রেমে ব্যর্থ হয়েই রাউধা আত্মহত্যা করেছিলেন। মালদ্বীপের শাহী গণি নামের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই যুবক পড়াশোনার জন্য লন্ডনে থাকেন। রাউধার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে জানা গেছে, শাহীর সঙ্গে রাউধার সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল। এ নিয়ে প্রচণ্ড মানসিক চাপে ছিলেন রাউধা। আত্মহত্যার আগের রাতেও শাহীর সঙ্গে রাউধার কথা হয়েছিল।

২০১৭ সালের ২৯ মার্চ রাজশাহীর নওদাপাড়ায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রীনিবাস থেকে রাউধা আতিফের (২২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ওই কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মালদ্বীপের মেয়ে রাউধা পড়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে এসেছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি মডেলিং করতেন।

রাউধার মৃত্যুর দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ শাহ মখদুম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করে। রাউধার লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজশাহীতে দাফন করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাউধা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এরপর মালদ্বীপের দুই পুলিশ কর্মকর্তা রাজশাহীতে গিয়ে ঘটনা তদন্ত করেন।

এদিকে রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিও তাদের প্রতিবেদনে বলেছিল, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। তবে রাউধার বাবা মোহাম্মদ আতিফ এসব প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ওই বছর ১০ এপ্রিল রাজশাহীর আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন।

এ মামলায় রাউধার সহপাঠী ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মেয়ে সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়। কিন্তু সিরাতকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর ১৪ এপ্রিল হত্যা মামলাটি শাহমখদুম থানা থেকে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। পরে কবর থেকে লাশ তুলে দ্বিতীয়বারের মতো রাউধার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। সে প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন।

তবে রাউধার বাবা আতিফ তারপরেও দাবি করে আসছিলেন, তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। মামলার পর থেকে তিনি রাজশাহীতেই অবস্থান করতে থাকেন। তাঁর দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই ২০১৭ সালের ২৩ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের ওপর ফের মামলাটির তদন্তের ভার পড়ে।

আরও পড়ুন: