১ টাকায় গাছের সেবা

আগারগাঁওয়ে এই গাছের হাসপাতালেই থাকবে জমা রাখা গাছগুলো।
আগারগাঁওয়ে এই গাছের হাসপাতালেই থাকবে জমা রাখা গাছগুলো।

এই ইট-কাঠের নগরে সবুজের স্নিগ্ধতা প্রায় ঘুচেই গেছে। তবু মানুষ তার সহজাত সৌন্দর্যচেতনা আর প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার তাড়না থেকেই ফ্ল্যাটবাড়ির সীমিত পরিসরের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চায় বৃক্ষ-লতাগুল্মের সমারোহ। একচিলতে বারান্দা কিংবা অপরিসর ছাদে তাই বেড়ে ওঠে সুবিশাল বট ও ছায়াপ্রদায়ী হিজলের বনসাই। টব থেকে ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে স্নিগ্ধ গন্ধরাজ, জুঁই অথবা কামিনীর সৌরভ। আর ঈদের লম্বা ছুটিতে মমতায় বেড়ে ওঠা এসব পুষ্পবৃক্ষ ও গাছগাছালির পরিচর্যা নিশ্চিত করতে এগিয়ে এসেছে গ্রিন সেভার্স নামের একটা সংগঠন। এ জন্য গাছপ্রতি দৈনিক ১ টাকা করে নিচ্ছে তারা।

মালিকের অবর্তমানে গাছের যত্ন নেওয়ার এই মূল্যটা নিছক প্রতীকী। এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, গাছের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা থেকেই তাঁদের এ আয়োজন। তাঁদের ভাষ্য, সাধারণত ঈদে লম্বা ছুটি কাটিয়ে অনেকে বাসায় ফিরে দেখেন পছন্দের কিছু গাছ মরে গেছে। তখন অনেকে বাসাবাড়িতে গাছ লাগানোর ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এই উৎসাহে যাতে ভাটা না পড়ে, যত্ন-মমতায় বেড়ে ওঠা গাছগুলো যেন সতেজ থাকে, তাই চার বছর ধরে তাঁরা এই কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।

এই আয়োজনের প্রধান উদ্যোক্তা ও গ্রিন সেভার্স সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনি জানান, আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের দক্ষিণ ফটকে গ্রিন সেভার্সের গাছের হাসপাতালে গাছ জমা নেওয়া শুরু হয়েছে গত ২৫ মে থেকে। গাছ জমা রাখা যাবে ১৫ জুন পর্যন্ত। এ জন্য গ্রিন সেভার্সের ফেসবুক পেজ অথবা ০১৯২০১১১৬৬৬—এই নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। চাইলে কেউ ই-মেইল করতে পারেন—[email protected] এই ঠিকানায়।

>

ঈদের ছুটিতে ছাদ বা বারান্দা বাগানের পরিচর্যা করবে গ্রিন সেভার্স
এ জন্য গাছপ্রতি দৈনিক ১ টাকা করে নিচ্ছে তারা

আহসান রনি বলেন, ‘সাধারণত লম্বা ছুটিতে গাছ বেশি জমা হয়। এ বছর রোজার ঈদে টানা ৯ দিনের ছুটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমরা আশা করছি এবার গাছ আসার পরিমাণ বাড়বে।’

গত বুধবার আগারগাঁওয়ে গাছের হাসপাতালে কথা হয় গ্রিন সেভার্সের নির্বাহী কমিটির সদস্য ওমর ফারুকের সঙ্গে। তিনি জানান, গাছের যত্নের জন্য হাসপাতাল পরিচালনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গাছের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে ঢাকার স্কুলগুলোয় গ্রিন সেভার্স নিয়মিত বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে। এই আয়োজনের অংশ হিসেবে প্রতিটি স্কুলে অন্তত ২৫টি করে ফলদ ও বনজ বৃক্ষ লাগানো হয়। প্রতিটি স্কুল থেকে নির্বাচন করা হয় একজন করে গ্রিন অ্যাম্বাসেডর। এখন পর্যন্ত ঢাকার ৪০টি স্কুলে এই কার্যক্রম চালিয়েছে গ্রিন সেভার্স। এ ছাড়া বর্তমানে গ্রিন সেভার্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেট্রোলজি বিভাগ ও কার্লটন ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে চলছে ‘আরবান মাইক্রোক্লাইমেট রিডিউসিং প্রজেক্ট’ নামের একটা প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তাঁরা বোঝার চেষ্টা করছেন কক্ষের তাপমাত্রা কমানোর জন্য কোন ধরনের গাছ লাগাতে হবে।