বরেন্দ্র অঞ্চলে বাড়ছে মাটির ক্ষয়

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বরেন্দ্র অঞ্চলে মাটির ক্ষয় বাড়ছে। ভেঙে যাচ্ছে মাটির কাঠামো। আর কমে যাচ্ছে জৈব পদার্থ, সালফার, ফসফরাসসহ মাটির নানা উপাদান। এতে উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে এ অঞ্চলের মাটি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে এই পরিস্থিতির উন্নতি করা জরুরি।

আজ রোববার রাজশাহীতে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় মাটির এই অবস্থার কথা উঠে এসেছে। সেখানে বক্তারা বলেছেন, মাটির ক্ষয় যা হওয়ার হয়েছে, এখন থেকে একটুও হতে দেওয়া যাবে না।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সম্মেলন কক্ষে ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূমির ক্ষয়, ভূমির ব্যবহার এবং টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা (এসএলএম)’ শীর্ষক এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের ‘স্টাব্লিশিং ন্যাশনাল ল্যান্ড ইউজ অ্যান্ড ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন প্রোফাইল টুওয়ার্ড মেইনস্ট্রেমিং এসএলএম প্র্যাক্টিস ইন সেক্টর পলিসিস (ইএনএএলইউএলডিইপি)’ প্রকল্পের আওতায় এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট যৌথভাবে ইএনএএলইউএলডিইপি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কর্মশালায় এই চার দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা অংশ নেন। প্রধান অতিথি ছিলেন বিএমডিএর চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন চৌধুরী।

কর্মশালায় বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটির ক্ষয়ের নানা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও তানোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাচোল, আমনুরা এবং নওগাঁর পোরশা উপজেলায় মাটির গুণগত মান খারাপ হয়ে গেছে। এ মাটিতে শতকরা মাত্র শূন্য দশমিক ৮ থেকে ১ দশমিক ৫ ভাগ জৈব পদার্থ রয়েছে। অনেক কমে গেছে ফসফরাস, সালফারসহ নানা উপাদানের পরিমাণ।

কর্মশালায় আলোচকেরা বলেছেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের বেশির ভাগ জমিতে আগে বছরে একবার ধান চাষ করা যেত। এখন বিএমডিএর গভীর নলকূপ স্থাপনের ফলে বছরে তিনবার ধান চাষ করা যায়। কৃষকেরা চাষাবাদ বাড়িয়েছেন। কিন্তু নানা কারণে জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে মাটির ক্ষয় হচ্ছে। এই ক্ষয় মাটির কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। এখনই এটি রোধ করতে হবে। আর ইতিমধ্যে যে ক্ষতি হয়েছে, তার উন্নয়ন ঘটাতে হবে আগামী ১০ বছরের মধ্যে।

বক্তারা বলেন, দেশে প্রতিদিন খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু প্রতিবছর ৭০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। এর মধ্যে সাগরের দিকে মিঠা পানির প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ছে। এতে নতুন নতুন এলাকার মাটি লবণাক্ত হয়ে যাচ্ছে। ২০৫০ সাল নাগাদ রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে দেশের হাওর অঞ্চলে বছরের বেশির ভাগ সময়ই চাষের মাটি পানির নিচে থাকে। কিন্তু বরেন্দ্র অঞ্চলে এসব সমস্যা নেই। তাই সারা বছরই ফসলের আবাদ করা যাবে। ফলে ক্রমবর্ধমান খাদ্যের চাহিদা মেটাতে বরেন্দ্র অঞ্চলে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ বাড়াতে হবে, যেন মাটির ক্ষয়রোধ করা যায়।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএমডিএর চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, এখন বরেন্দ্র অঞ্চলের অনেক বাসিন্দা বর্গাচাষিকে জমি ইজারা দিয়ে শহরে চলে যাচ্ছেন। তারপর কৃষক জমিতে কী করছেন, তা দেখার কেউ থাকে না। ফলে চাষাবাদের সুবিধার্থে চাষিরা বরেন্দ্রের উঁচু-নিচু মাটি কেটে সমান করে দিচ্ছেন। অনেকে জমির ওপরের উর্বর অংশ কেটে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে মাটির ক্ষয় হচ্ছে। খনিজ পদার্থের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই কৃষকদের মধ্যে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে কৃষি সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ। সভাপতিত্ব করেন, ইএনএএলইউএলডিইপি প্রকল্পের পরিচালক মুহাম্মদ সোহরাব আলী। বক্তব্য দেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী সরওয়ার জাহান, মৃত্তিকা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম প্রমুখ।