ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করে ৪৫ লাখ শিশু

দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ৪৫ লাখ শিশু ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে নিয়ে বসবাস করে। দুর্যোগের সময়ে শিশুদের হারিয়ে যাওয়া, যৌন নিপীড়নের শিকার, শিশু শ্রম, পাচার এবং অনিরাপদ অভিবাসনের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ইউনিসেফের একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আজ সোমবার ‘জলবায়ু অর্থায়ন এবং শিশু’ বিষয়ক জাতীয় সংলাপে বক্তারা এসব তথ্য দেন। রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশ, কমিউনিটি পার্টিসিপেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিথ্রিইআর যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে।

সংলাপে বক্তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি-অসময়ে বৃষ্টি, অতি গরম-দীর্ঘসময় ধরে উচ্চ তাপমাত্রা, তীব্র ঠান্ডা এবং বজ্রপাতের মতো দুর্যোগ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পূর্বের তুলনায় এখন শিশুরা বেশি অসুস্থ থাকছে।

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করতে শিশুরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে উল্লেখ করে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সিথ্রিইআরের উপদেষ্টা আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় শিশুদের কি করণীয় আছে তা আগে নির্ধারণ করতে হবে। তারপর সেসব পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে চাপ দেওয়া যাবে। আবার, এলাকাভিত্তিক দুর্যোগ মোকাবিলায়ও শিশুরা সরাসরি কাজ করতে পারে বলে জানান তিনি।

সম্মেলনে জানানো হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত শিশুদের ওপর সবচেয়ে বেশি পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের ১ কোটি ২০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব শিশুরা নদীভাঙন এলাকা বা এসব অঞ্চলের কাছাকাছি বসবাস করে। বিপদাপন্ন এসব শিশুদের জন্য বিশেষ প্রকল্পের দরকার।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল কাদির বলেন, শিশুদের জন্য জলবায়ু অর্থায়নের বিষয়টি বেশ কঠিন। তবে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নিজেদের সুবিধা-অসুবিধার কথা বলছে, যা প্রশংসনীয়।

তিনি আরও বলেন, এককভাবে সরকারের পক্ষে সব কাজ করা সম্ভব নয়, সরকার নেতৃত্ব দেবে, সবাইকেই অংশগ্রহণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্কুল থেকে আসা প্রায় ৪০ শিশু জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নিজেদের এবং নীতিনির্ধারকদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করে শিশুরা। সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসাইন বলেন, ‘বাংলাদেশে বড় শিল্পাঞ্চল না থাকার পরেও আমরা ঝুঁকিতে। সে ক্ষেত্রে সরকার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য কী করছে তা আমাদের জানা দরকার।’

সম্মেলনে বক্তারা জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২৩ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। কিন্তু এর মধ্যে শিশুদের জন্য কতটুকু বরাদ্দ তা জানা যায় না বলছেন তাঁরা। কিন্তু শিশুদের কথা ভেবে পৃথক পরিকল্পনা দরকার।

কমিউনিটি এবং স্কুল পর্যায়ে শিশুকেন্দ্রিক জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন নিরূপণ, উপায় ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠিত করা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ, অভিযোজন এবং প্রশমন বিষয়ক বিভিন্ন ঝুঁকি উদ্‌ঘাটন ও পরিকল্পনা প্রক্রিয়ার উন্নয়ন করাসহ দশটি সুপারিশ করে শিশুরা।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপির জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এ.কে.এম. মামুনুর রশিদ, কেএফডব্লিউয়ের জ্যেষ্ঠ আরবান রেজিলিয়েন্স বিশেষজ্ঞ এস.এম. মেহেদি আহসান, গ্রিন সেভারসের পরিচালক আহসান রনি, সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের হিউমেনিটেরিয়ান সেক্টর পরিচালক মো. মোস্তাক হোসেন, উপ পরিচালক-ডি আর আর অ্যান্ড সি সি এ সৈয়দ মতিউল আহসান, সংগীতশিল্পী তাহসান।