বানভাসি মানুষদের জন্য 'গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন'

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার বন্যা কবলিত তারাই গ্রামের পাঁচ শতাধিক মানুষকে প্রতিদিন তিন বেলা খাবার দিচ্ছেন গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের কর্মীরা। ছবি: কামনাশীষ শেখর
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার বন্যা কবলিত তারাই গ্রামের পাঁচ শতাধিক মানুষকে প্রতিদিন তিন বেলা খাবার দিচ্ছেন গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের কর্মীরা। ছবি: কামনাশীষ শেখর

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার তারাই গ্রাম। এ গ্রামের ঘরে ঘরে পানি। বেশির ভাগ মানুষ দিনমজুর। যাদের অবস্থা কিছুটা সচ্ছল বন্যার কারণে তাদেরও রান্না করে খাওয়ার মতো অবস্থা নেই। গ্রামটির মানুষের দুর্দশা লাঘবের জন্য এগিয়ে এসেছেন ‘গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের’ কর্মীরা। তারা একটি কেন্দ্র থেকে খাবার রান্না করে বন্যা কবলিত গ্রামের মানুষদের খাবারের বন্দোবস্ত করেছেন।

প্রতিদিন তিন বেলা পাঁচ শতাধিক মানুষ গ্রাম পাঠাগারের কেন্দ্র থেকে খাবার পাচ্ছেন। এ খাবারের অর্থ জোগান দিচ্ছেন গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের ফেসবুক পেজে যুক্ত সদস্যরা।

উদ্যোক্তারা জানান, ‘গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন’ মূলত ফেসবুক ভিত্তিক একটি সংগঠন। যারা মানুষদের গ্রামে গ্রামে পাঠাগার স্থাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। এ আন্দোলনের মূল সংগঠক আব্দুস সাত্তার খান ভূঞাপুর উপজেলার অর্জুনা গ্রামের সন্তান। তার নেতৃত্বেই গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের কর্মীরা এ ভূঞাপুরের এই কেন্দ্রটি পরিচালনা করছেন।

আব্দুস সাত্তার খান বলছিলেন, গত বুধবার যমুনা নদীর তীরে নলীন-পিংনা-যোকারচর বাঁধ ভেঙে যায়। এতে তারাই গ্রাম সম্পূর্ণ বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। অনেক মানুষ বাড়িঘর ফেলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে, আশপাশের উঁচু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেন। গ্রামের মানুষের খাবারের কষ্ট লাঘব করতে তারাই মাদ্রাসা মাঠে বৃহস্পতিবার থেকে কেন্দ্রটি চালু করেন। এখান থেকে প্রতি বেলায় পাঁচ শতাধিক মানুষ খাবার গ্রহণ করছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের শুভানুধ্যায়ীরা প্রতিদিন যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা পাঠাচ্ছেন। আর এ টাকাতেই চলছে এই কেন্দ্র।

আজ সোমবার দুপুর দুইটার দিকে ওই পাঠাগারের বন্যার্ত সহায়তা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভাত, মুরগির মাংস ও ডাল রান্না শেষে কর্মীরা প্যাকেট করার কাজ করছেন। এদিকে বানভাসি নারী, পুরুষ, শিশু এসে জড়ো হচ্ছেন। প্যাকেট করা শেষ হওয়ার পরেই শুরু হলো বিতরণের কাজ। কোনো হইচই নেই, বিশৃঙ্খলা নেই। সবাই একে একে প্যাকেট নিতে শুরু করলেন।

খাবার নিতে আসা তরাই গ্রামের কোহিনুর বেগম বলছিলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও খাবারের কোনো চিন্তা করতে হচ্ছে না। তিন বেলা এই কেন্দ্র থেকে খেতে পারছেন।

রেহেনা বেগম নামে অপর এক নারী বলেন, বন্যার সময় খাবারের সমস্যাটাই বড় হয়ে দেখা দেয়। এবার তাদের সে সমস্যা নেই।

রান্নার কাজ চলছে। আজহ সোমবার দুপুরে তারাই মাদ্রাসা মাঠ থেকে তোলা। ছবি: কামনাশীষ শেখর
রান্নার কাজ চলছে। আজহ সোমবার দুপুরে তারাই মাদ্রাসা মাঠ থেকে তোলা। ছবি: কামনাশীষ শেখর

বেশির ভাগ মানুষ দিনমজুরি করে চলে বলে জানান আব্দুর বাসেদ। তাঁর কথা, বন্যার সময় কাজ থাকে না। তখন খাওয়া পড়ার খুব কষ্ট হয়। এ কেন্দ্রটি এবার শ্রমজীবী মানুষের সে কষ্ট লাঘব করছে।
গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবক জাহিদুল আলম জানান, সরকারি সাহায্যের আশায় না থেকে তারা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছেন এলাকার বন্যা কবলিত মানুষের খাবারের জোগান দিতে।

আরেক কর্মী আনোয়ার হোসেন খান বললেন, ‘বানভাসি মানুষের সেবা করতে পেরে তাদের খুব ভালো লাগছে।’
গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের সংগঠক আব্দুস সাত্তার খান জানান, তারা বন্যার পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনেরও কাজ করবেন।