বাক্স্বাধীনতা রুদ্ধ করে এমন আইনি কাঠামো সংস্কার করতে হবে: টিআইবি

টিআইবির মানববন্ধন। ৬ আগস্ট, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: প্রথম আলো
টিআইবির মানববন্ধন। ৬ আগস্ট, টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: প্রথম আলো

মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার রুদ্ধ করে—বাংলাদেশে এমন আইনি কাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তরুণ প্রজন্মের নির্বিঘ্নে মতপ্রকাশ ও প্রতিবাদ করার অধিকার নিশ্চিত করতে এসবের সংস্কার দাবি করেছেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে এক মানববন্ধনে ইফতেখারুজ্জামান এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে টিআইবি। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন’। জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর ১২ আগস্ট দিবসটি উদ্‌যাপিত হয়ে আসছে। ১২ আগস্ট ঈদুল আজহার ছুটি থাকায় টিআইবি আজ দিবসটি উদ্‌যাপন করছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার হার, শিক্ষার অভিগম্যতার হার বৃদ্ধি করতে পারা আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। কিন্তু যাঁরা এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণভাবে যাঁরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে একটি বদ্ধমূল ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে আমাদের শিক্ষার গুণগত মান ক্রমাগত অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আমরা যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও আধুনিক ডিজিটাল বিশ্বের কথা বলছি, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে হলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির বিকল্প নেই। তাই আমরা চাই বাংলাদেশে গুণগত শিক্ষার বিকাশ ঘটুক।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণেরা বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা যখন নিজেদের হাতে দায়িত্ব তুলে নেয়, তুলে নেওয়ার মতো পরিবেশ পায়, তখন তারা অনেক কিছু অর্জন করতে পারে। সেই জায়গাটায় যাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারের দায়িত্ব। এমন আইনি কাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারগুলো রুদ্ধ করে। এগুলো সংস্কার করতে হবে যাতে তরুণেরা তাদের মত প্রকাশ করতে পারে।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অন্যতম জায়গা হচ্ছে যে অন্যান্য অংশীজনের পাশাপাশি তরুণদের সম্পৃক্ত করা। এর সাফল্য যেমন তরুণদের ওপর নির্ভর করছে, তেমনি এর ব্যর্থতার দায়ও তরুণদের ওপর বর্তাবে। এই অভীষ্টে অংশগ্রহণমূলক উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। এর পূর্বশর্ত হিসেবে তরুণ প্রজন্মকে পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের প্রতি করুণা নয়, তাদের অংশগ্রহণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে।

এবারের আন্তর্জাতিক যুব দিবসে মানসম্মত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে টিআইবির পক্ষ থেকে ১২ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো শিক্ষায় গুণগত মান নিশ্চিতের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও তরুণদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার মাধ্যমে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় কৌশল নিরূপণ ও সুনির্দিষ্ট সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, এসব কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ ও তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো নির্মাণ, তরুণসমাজের নির্বিঘ্নে মতামত প্রকাশ ও প্রতিবাদ করার সুযোগ নিশ্চিত করা, শিক্ষার গুণগত পরিবর্তন ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রয়োজনীয় কারিকুলাম ও জনবলসহ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প খাতগুলোর মধ্যে গবেষণাকেন্দ্রিক সম্পর্ক স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন, মেন্টরিং, আইনি সহায়তা ও বাজারে অভিগম্যতা নিশ্চিত করা, গবেষণা খাতে বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি, তরুণ উদ্যোক্তা উন্নয়নে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ ও ব্যাংক ঋণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা, তাদের জন্য বাজার সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা, যুব উন্নয়ন নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রে চাকরিতে নিয়োগপ্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করা।

টিআইবির কর্মকর্তা ও সদস্যদের অনুপ্রেরণায় ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস) গ্রুপের সদস্যসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, টিআইবি কর্মী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই মানববন্ধনে অংশ নেন।