এক রাজপুত্রের কাহিনি

মায়ের সঙ্গে সিংহশাবক। সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে।  প্রথম আলো
মায়ের সঙ্গে সিংহশাবক। সম্প্রতি গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। প্রথম আলো

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দেখা হলো বনের রাজা–রানির সঙ্গে। রাজপুত্রও ছিল তাদের পাশে। রাজপুত্র বিড়ালের মতো দেখতে। পুরো শরীরে ছোট ছোট মখমলের মতো পশম। দেখামাত্রই হাত বুলিয়ে আদর করতে ইচ্ছে হয়। লোমগুলোতে এখনো বাদামি রং পুরোপুরি আসেনি। এ বছরের ৭ মে সিংহের রাজপ্রাসাদ আলো করে তার আগমন। সিংহী তার সদ্যোজাত বাচ্চাকে নিয়ে অন্দরমহলে অর্থাৎ লোকচক্ষুর অন্তরালে অবস্থান করছিল দীর্ঘদিন। স্বভাবজাত কারণেই রাজপুত্রকে গত ১৭ জুলাইয়ের আগে দ্বিতীয়বার দেখতে পায়নি কেউ। খুব আদুরে ভঙ্গিমায় বারবার মায়ের পেছনে লুকিয়ে থাকতে চেষ্টা করছিল সিংহশাবকটি। জন্মের পর থেকেই মা-বাবা তাকে আগলে রাখছে অন্যান্য সিংহের কাছ থেকে। এমনকি বন্য প্রাণী পরিদর্শকদের চলাচলের রাস্তাটাকেও নিরাপদ ভাবছে না তারা। সিংহের দেখভালের দায়িত্বে থাকা মিন্টু বলেন, ‘খাবার খাওয়ার সময় হলে মা দৌড়ে গিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে রাখা খাবার মুখে নিয়ে আবার খুব দ্রুত বাচ্চার কাছে ফিরে যায়। এভাবেই বাচ্চাটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সে। বাচ্চাকে লুকিয়ে রেখে সর্বক্ষণ তার বিষয়ে সচেতন থাকে। সময় সময় বাচ্চাটি দুধ পান করে।

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে বন্য প্রাণী পরিদর্শক সরোয়ার হোসেন খান বলেন, সিংহশাবকটি ভালো আছে। এটি পুরুষ। তিন থেকে পাঁচ বছর হলেই এরা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। শুরু থেকে দেড়-দুই বছর পর্যন্ত সিংহশাবক মা-বাবার কাছেই অবস্থান করে। এ সময় খাবার থেকে শুরু করে নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করে মা-বাবা। সিংহরা খুবই আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ে বাচ্চার জন্ম হলে। ছয় মাস পর্যন্ত বাচ্চা মায়ের দুধ পান করে। ১১ মাস বয়স হলে সিংহের বাচ্চা মায়ের মতো শিকার করতে চেষ্টা করে। প্রাপ্তবয়স্ক হলে সিংহের কেশর হয়। জন্মের পর ১০ দিন পর্যন্ত শাবক চোখে দেখতে পায় না। পরে তার চোখ ফোটে। নতুন বাচ্চাসহ এখন পার্কে আছে মোট ১৫টি সিংহ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, ‘যখন বাচ্চা জন্মের বিষয়টি আমরা বুঝতে পারি, তখন থেকে আফ্রিকান কোর সাফারির সিংহের বেষ্টনীর ভেতর চলা ছোট সড়ক নির্মাণকাজ কয়েক মাসের জন্য বন্ধ করে দিই। এটা করা হয়েছিল কেবল বাচ্চার সুরক্ষার জন্য। বাচ্চাটি দেখতে খুবই সুন্দর এবং আদুরে। মায়ের গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে বসে থাকে। মাঝেমধ্যে মায়ের সঙ্গে হাঁটাহাঁটিও করে। আদুরে হলেও বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তার মধ্যে হিংস্রতা আসতে শুরু করবে। আমরা সিংহশাবকটির দিকে সচেতন দৃষ্টি রাখছি।’