আহা, ধর্মসাগর!

কোন পথে ঢুকবেন, সে আপনার পছন্দ। বাদুরতলার কুমিল্লা মহিলা মহাবিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে ঢুকতে পারেন। হয়তো শহর ঘুরতে ঘুরতে চলে গেছেন ঈদগাহ, স্টেশন ক্লাব বা শিশুপার্কের দিকে। তাহলে পার্কের দেয়াল ঘেঁষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দিকে চলে যাওয়া নওয়াব ফয়জুন্নেসা সড়ক ধরে এগোবেন। সামনেই বাঁ দিকে ছোট গেট।

অথবা ধরুন ছোট বলে মানুষের ভিড়ে গেটটা চোখ এড়িয়ে গেল। একটু বেশিই এগিয়ে গেছেন আপনি। তাতেও পথ হারানোর ভয় নেই। আরেকটু এগোলেই দেখবেন বাঁ দিকে চলে গেছে পিচঢালা সরু পথ। এ পথে একটু হাঁটলেই একটা মিষ্টি মাতাল হাওয়া আপনার গা ছুঁয়ে যাবে। আর মাত্র কয়েক কদম এগিয়ে বাঁ দিকে তাকালেই দৃষ্টিসীমায় চলে আসবে বিশাল জলরাশি। আহা, ধর্মসাগর!

কুমিল্লার ধর্মসাগর।  ছবি: প্রথম আলো
কুমিল্লার ধর্মসাগর। ছবি: প্রথম আলো

নামের সঙ্গে ‘সাগর’ থাকলেও ধর্মসাগর কিন্তু সাগর নয়। সাগরের মতো উত্তাল ঢেউ নেই এখানে, তবে এর বাতাসে মৃদুমন্দ ঢেউয়ের কলকল ধ্বনি। কুমিল্লা শহরের ঠিক হৃৎপিণ্ডে থাকা ধর্মসাগর আসলে একটা বিশাল দিঘি। ১৪৫৮ সালে ত্রিপুরার মহারাজা ধর্মমাণিক্য স্থানীয় মানুষকে পানির সুবিধা দিতে খনন করেন ৯.৩৮ হেক্টর আয়তনের এই দিঘি। তাঁর নামানুসারেই এর নাম ধর্মসাগর।

তো মহারাজ যে উদ্দেশ্যে ধর্মসাগর খনন করেছিলেন, এটির সেই ব্যবহার এখন আর নেই। বিশাল শান্ত এই দিঘি মানুষের পানির তৃষ্ণা নিবারণের উৎস নয় বহু বছর ধরেই। তবে মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে যাচ্ছে তার সৃষ্টি থেকে আজ অবধি। কুমিল্লা শহরের যে কয়টি স্থান শচীন দেববর্মন আর কাজী নজরুল ইসলামের ভাবুক মনকে টানত, তার একটি এই ধর্মসাগর পাড়। একসঙ্গে দুজনের অনেক সময় কেটেছে এখানে। হয়তো অনেক গানের কলি, কবিতার অনেক শব্দ তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন ধর্মসাগর পাড়ের এলোমেলো হাওয়া থেকে।

কুমিল্লা নগরের আশপাশে নতুন নতুন বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠছে এখন। তবু প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় অবসর বিনোদনকেন্দ্র আজও ধর্মসাগর। শহরের সবচেয়ে বেশি নির্মল হাওয়া, সবচেয়ে বিশুদ্ধ নিশ্বাস এর শানবাঁধানো পাড়ে এসে দাঁড়ালেই শুধু মেলে।