চট্টগ্রামে ৩৮ মোড়ে হবে পদচারী-সেতু

চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম জিইসি মোড়। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হয় পথচারীরা। গতকাল বিকেল চারটায়।  ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম জিইসি মোড়। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে সড়ক পার হয় পথচারীরা। গতকাল বিকেল চারটায়। ছবি: প্রথম আলো

এক যুগ আগেও অনায়াসে চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজারের ইস্পাহানি মোড়ের রাস্তা পারাপার হওয়া যেত। তখন গাড়ির সংখ্যা ছিল কম। কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষ আর গাড়ির চাপ বাড়ছে নগরে। প্রতিদিন ইস্পাহানি মোড়েই গড়ে ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার মানুষ রাস্তা পারাপার হচ্ছে। এতে থমকে যাচ্ছে গাড়ির গতি। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য পদচারী–সেতু স্থাপন জরুরি বলে মনে করছেন নগর–পরিকল্পনাবিদেরা।

চট্টগ্রাম নগরের জনসংখ্যা ৭০ লাখের বেশি। এ কারণে নগরের ব্যস্ততম মোড়গুলোয় মানুষের জমায়েত ও যাতায়াত বেড়েছে। এতে যানজটও বাড়ছে। যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনতে নগর–পরিকল্পনাবিদেরা শহরের ৩৮টি মোড়ে পদচারী–সেতু স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন সিটি করপোরেশনকে। সিটি করপোরেশন এই পরামর্শ বাস্তবায়নে সায় দিচ্ছে।

বর্তমানে নগরে পদচারী–সেতুর সংখ্যা আট। এর মধ্যে দুটি ব্যবহারের অনুপযোগী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের জিইসি, আগ্রাবাদ বাদামতলী, অক্সিজেন, দেওয়ানহাট, ইস্পাহানি মোড় ও ষোলোশহর দুই নম্বরে প্রতিদিন লাখো মানুষ রাস্তা পারাপার হয়। সবচেয়ে বেশি পারাপার হয় আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে। সেখানে গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার পথচারী পারাপার হয় বলে পুলিশের জরিপে উঠে এসেছে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জিইসি মোড়। এই মোড়ে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টায় পারাপার হয় ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার পথচারী।

এ ছাড়া প্রতিদিন লাখো পথচারী নগরের শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়ক, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, টাইগার পাস, দেওয়ানহাট, নিমতলা বিশ্বরোড, অলংকার, হালিশহর ‘এ’ এবং ‘কে’ ব্লক, বড়পোল, কাস্টমস, সল্টগোলা ক্রসিং এবং স্টিল মিল বাজারের সড়ক পারাপার হয়। এ কারণে প্রতিটি মোড়ে প্রতিনিয়ত ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে।

সম্প্রতি দেওয়ানহাট মোড়ে কথা হয় পোশাকশ্রমিক আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি প্রতিদিন দুবার দেওয়ানহাট মোড়ের রাস্তা পার হন। তিনি দেওয়ানহাট মোড়ে একটি পদচারী–সেতু নির্মাণের দাবি জানান।

নগর–পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জিইসি, বাদামতলী, ষোলোশহর দুই নম্বর, নিউমার্কেট, অক্সিজেনসহ কয়েকটি ব্যস্ত মোড়ে চার লেনের পদচারী–সেতু নির্মাণের নকশা প্রণয়ন করেছে। আরও কয়েকটি মোড়ে তিন লেনের এবং বাকিগুলো দুই লেনের পদচারী–সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সিটি করপোরেশন।

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, নগরের ৩৮ গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পদচারী–সেতু নির্মাণে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। অনুমোদন ও বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত নির্মাণকাজে হাত দেওয়া যাবে।

সিটি মেয়র উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘নাসিরাবাদ মহিলা কলেজে ছাত্রীর সংখ্যা নয় হাজার। সেখানে একটি পদচারী–সেতু খুব দরকার। কিন্তু সড়কটি এত সরু যে পদচারী–সেতু স্থাপন করা হলে সড়কের প্রশস্ততা আরও কমে যাবে। এ কারণে বাধ্য হয়ে আমরা ডায়াবেটিক হাসপাতালের সামনে চলন্ত সিঁড়ি বসানোর কাজে হাত দিয়েছি।’

চলন্ত সিঁড়ি নির্মিত হলে পথচারী এবং প্রতিবন্ধী পথচারী উভয় শ্রেণির মানুষ রাস্তা পারাপার হতে পারবে বলে অনেকে মনে করেন। নাছির উদ্দীন সেই চিন্তা থেকে ডায়াবেটিক হাসপাতালের সামনে চলন্ত সিঁড়ি নির্মাণকাজে হাত দিয়েছেন।

এদিকে পুলিশও বিভিন্ন মোড়ে পথচারী পারাপার নিয়ে জরিপ করেছে। সম্প্রতি পুলিশের জরিপে পথচারী পারাপারে বাদামতলী মোড় রয়েছে শীর্ষে। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জিইসি মোড়। এ ছাড়া পোর্ট কানেকটিং সড়কের ‘এ’ এবং ‘কে’ ব্লক–সংলগ্ন এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে। কারণ, সেখানে সড়কের এক দিক কার্পেটিং হওয়ায় গাড়ির গতি বেড়ে গেছে। এতে প্রতিদিন দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, পোর্ট কানেকটিং সড়ক পথচারীদের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেখানে অন্তত দুটি পদচারী–সেতু জরুরি ভিত্তিতে নির্মাণ করা প্রয়োজন।

নগর–পরিকল্পনাবিদ ও পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি সুভাষ বড়ুয়া পদচারী–সেতু নির্মাণের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, যে জায়গা দিয়ে মানুষ রাস্তা পারাপার হচ্ছে, সেখানেই পদচারী–সেতু নির্মাণ করতে হবে।

পথচারীদেরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন সুভাষ বড়ুয়া। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী পথচারী কীভাবে রাস্তা পার হবে, সেটাও মাথায় রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে বলে মত তাঁর।