নেত্রকোনায় পলিথিনের ব্যবহার কমছে

পলিথিন ব্যাগ
পলিথিন ব্যাগ

সপ্তাহ তিনেক আগেও নেত্রকোনার বাজারগুলোয় দেদার বিক্রি ও ব্যবহার করা হতো নিষিদ্ধ পলিথিন। কিন্তু এই কয়েক দিনের ব্যবধানে এখন আর সহজেই পলিথিন পাওয়া যাচ্ছে না। শহর থেকে শুরু করে জেলার ১০টি উপজেলার বাজারগুলোয় পলিথিনের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কমেছে। এতে সচেতন নাগরিকদের মধ্যে একধরনের স্বস্তি ও আশার সৃষ্টি হচ্ছে।

সম্প্রতি ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান এই বিভাগকে পলিথিনমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে সহমত পোষণ করে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে পলিথিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় নেত্রকোনা জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। প্রথমে জেলা শহরসহ সব কটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পলিথিন শপিং ব্যাগ ও পলিথিনসামগ্রী ব্যবহার বন্ধ করার উদ্দেশ্যে সচেতনতামূলক শোভাযাত্রা, প্রচারপত্র বিলি, মাইকিং ও আলোচনা সভা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলামসহ উপজেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। এখন নিয়মিত পলিথিনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করায় পলিথিন ব্যবহারে সতর্ক হচ্ছেন অনেক নাগরিক ও ব্যবসায়ী।

আগে যেখানে মাছের বাজার থেকে শুরু করে মাংস, ডিম, তরকারি, পান-সুপারি, ফল, মিষ্টি এমনকি ওষুধসহ মনিহারি—প্রতিটি দোকানেই অবাধে পলিথিন ব্যবহার করতেন; এখন আর তেমন দেখা মেলে না। ১০টি উপজেলার ইউএনওদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে গত মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় পলিথিন বিক্রি, মজুত ও ব্যবহার করায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে প্রায় ৩৫ মণ পলিথিন জব্দ ও ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ করা পলিথিন পুড়িয়ে ফেলা হয়।

গত কয়েক দিনে নেত্রকোনা জেলা শহরের মেছুয়াবাজার, আখড়াবাজার, ঘুষেরবাজার, রেলক্রসিংয়ের বাজারসহ কলমাকান্দা, পূর্বধলা ও দুর্গাপুর উপজেলার অন্তত ১৫টি বাজার ঘুরে এবং স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশে নেমে এসেছে। পলিথিন সহজে না মেলায় অনেকেই এখন বাজার করতে গিয়ে সঙ্গে কাপড়ের বা চটের ব্যাগ নিয়ে যান। বেশির ভাগ দোকানিই পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে কাগজের ঠোঙা, চটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ, নেট ব্যাগ ইত্যাদি ব্যবহার করছেন। তবে চাহিদার তুলনায় বাজারে পাট, চট বা কাপড়ের ব্যাগের সরবরাহ কম এবং দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাময়িক কিছুটা ঝামেলা হলেও কেউই বিষয়টিতে অখুশি নন।

নেত্রকোনা পৌর শহরের সাতপাই রেলক্রসিং এলাকার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদারক করায় পলিথিনের ব্যবহার অনেক কমে আসছে। আগে বাজার থেকে কোনো কিছু কেনার পরই দোকানি পলিথিন ব্যাগে ভরে দিতেন। তাই বেশির ভাগ লোক সঙ্গে করে ব্যাগ নিয়ে যেতেন না। এখন অনেকেই এই অভ্যাস পরিবর্তন করছেন।

শহরের ঘুষেরবাজারের সবজি ব্যবসায়ী টিংকু সরকার বলেন, পলিথিন এখন আর তাঁরা তেমন ব্যবহার করেন না। পলিথিনের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যেই ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। তাই বিকল্প হিসেবে কাপড়ের ব্যাগ ও নেট ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। তবে পলিথিন থেকে এই ব্যাগগুলোর দাম বেশি হওয়ায় সবজি বিক্রিতে তাঁদের কিছুটা কম লাভ হয়। 

তবে কয়েকজন দোকানি বলেন, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মেছুয়াবাজারের কয়েকটি মনিহারির দোকানে এখনো গোপনে পলিথিন ব্যাগ বিক্রি হয়। সেখান থেকে প্রতি কেজি পলিথিন প্রকারভেদে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে তাঁরা কিনে থাকেন। ওই দোকানিদের নাম জানতে চাইলে বলতে রাজি হননি তাঁরা।

নেত্রকোনায় পরিবেশ নিয়ে কাজ করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনউদ্যোগ। সংগঠনটির আহ্বায়ক কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের তৎপরতার কারণে আগের চেয়ে পলিথিনের ব্যবহার অনেকটা কমেছে। অনেকেই সচেতন হচ্ছেন। এটা আশাব্যঞ্জক। এখন পলিথিনের বিকল্প হিসেবে কাপড়, চটসহ বিভিন্ন ব্যাগগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধি ও সহজলভ্য করতে হবে।

জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম দেশের বাইরে থাকায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে ওই পদের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব জিয়া আহমেদ বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লুকিয়ে হয়তো পলিথিন বিক্রি করতে পারেন। তাঁদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অভিযান চলমান রয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে এই জেলাকে ক্ষতিকারক পলিথিন ব্যাগমুক্ত ঘোষণা করা হবে। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।