নতুন রূপ পাচ্ছে মনু নদের পাড়

মনু নদের পাড় ধরে একসময় মানুষ হেঁটে মৌলভীবাজার শহরের পূর্ব-পশ্চিম প্রান্তে চলাচল করেছে। প্রধান সড়ক ধরে না গিয়ে পাড় দিয়ে সংক্ষিপ্ত পথে গন্তব্যে পৌঁছেছে। দীর্ঘদিন ধরে অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকায় সেই পথ আর তেমন কেউ মাড়ায় না। বিক্ষিপ্তভাবে দু–একজন হাঁটাচলা করে।

মনুর সেই পাড়টি অচিরেই নতুন চেহারা পাচ্ছে। মৌলভীবাজার শহরের উত্তর প্রান্তে শান্তিবাগ এলাকার মনুর পাড়ে হবে পায়ে চলা ও ছোট যানবাহন চলাচলের পথ। সঙ্গে থাকবে বয়স্ক ও শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা। নদের সৌন্দর্য বাড়াতে পাড়ে তৈরি হবে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা, চিরসবুজ গাছ ও ফুল গাছ। এ জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। শিগগিরই দরপত্র আহ্বান করা হবে।

সম্প্রতি সরেজমিন শহরের চাঁদনীঘাট এলাকার মনু সেতু থেকে পশ্চিম দিকে মনু নদের পাড় ধরে দেখা গেছে, পাড়ের দক্ষিণ পাশে বাসাবাড়ির সীমানাপ্রাচীর। উত্তর দিকে প্রবহমান মনু নদ। পাড়ের ওপর গজিয়ে উঠেছে সবুজ ঘাস, লতাপাতা, বিভিন্ন ধরনের আগাছা। অনেক স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে। এসব ময়লা-আবর্জনা ও কাদা মাড়িয়ে চাইলেও এ পথে হাঁটাচলা কঠিন। পাড়ের মনু সেতু থেকে মৌলভীবাজার প্রধান ডাকঘর অংশ পর্যন্ত প্রায় একই অবস্থা।

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চাঁদনীঘাট মনু সেতুর পূর্ব দিক ফরেস্ট অফিস রোডের মাথা থেকে পশ্চিম দিকে একেবারে ডাকঘর পর্যন্ত নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে সড়ক ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। সড়কে ছোট যানবাহন চলাচল করতে পারবে। পূর্ব দিকের যানবাহনগুলো চৌমোহনা হয়ে না গিয়ে এই পাড় দিয়ে পশ্চিম দিকে যেতে পারবে। এতে শহরের চৌমোহনায় যানজট হবে না। এ ছাড়া বয়স্ক মানুষ যাতে নিরাপদে হাঁটাচলা করতে পারেন, তাঁদের জন্য ওয়াকওয়ে থাকবে। তাঁদের বসার ব্যবস্থা থাকবে। শিশুদের বিনোদনের জন্য কিছু রাইড থাকবে। উন্মুক্ত মঞ্চ থাকবে। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ লাগানো হবে।’ মেয়র বলেন, ‘নগর–পরিকল্পনা ও অবকাঠামো উন্নতীকরণ (ইউজিপ) প্রকল্প-৩–এর মাধ্যমে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ মিলেছে। শিগগিরই দরপত্র হবে। আশা করছি আগামী জুনের (২০২০) মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মনু নদের এই পাড় সম্পূর্ণ নতুন চেহারা পাবে।’

পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই পাড়ের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৮০০ মিটার। পাড় দিয়ে তৈরি পাকা (আরসিসি) সড়কের প্রশস্ততা হবে ১৪ ফুট। পাশাপাশি ৬ ফুট প্রশস্ত দুটি হাঁটাপথ (ওয়াকওয়ে) নির্মাণ করা হবে। গাড়ির জন্য দুটি পার্কিং স্থান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদির জন্য একটি উন্মুক্ত মঞ্চ, শৌচাগার, শিশুদের বিনোদনের জন্য খেলার কিছু রাইড, বসার বেঞ্চ ও ছাউনি, ক্যাফেটেরিয়া, নদে নামার জন্য ঘাট ও সড়কবাতি থাকবে। এ ছাড়া সৌন্দর্য ও ছায়ার জন্য গাছ ও ফুলের গাছ লাগানো হবে। এ পথ দিয়ে কোনো বড় গাড়ি যেতে দেওয়া হবে না। শুধু মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করবে। এতে যোগাযোগ, বিনোদন ও সৌন্দর্যের নতুন একটি স্থান হয়ে উঠবে মনু নদের এ পাড়টি।

পৌরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের ফরেস্ট অফিস রোড থেকে মনু নদের সেতুর নিচ দিয়ে একটি রাস্তা শান্তিবাগ আবাসিক এলাকার ভেতর দিয়ে গেছে। এই রাস্তা দিয়ে ১ নম্বর ওয়ার্ডসহ শহরের পূর্ব দিকের মানুষ চলাচল করে। শহরের বাইরের উত্তরাঞ্চলের কিছু মানুষ মনু সেতু পেরিয়ে প্রধান সড়কের যানজট এড়াতে এ রাস্তাটি ব্যবহার করেন। কিন্তু রাস্তাটি সরু হওয়ায় একাধিক যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এ ক্ষেত্রে ফরেস্ট অফিস রোডের পশ্চিম প্রান্ত থেকে মনু নদের শান্তিবাগ এলাকার পাড়কে চলাচলের উপযোগী করা হলে শহরের চৌমোহনা এলাকায় ছোটখাটো যানবাহনের চাপ কমে আসবে। পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে যারা যাবে, তারা মনু নদের পাড়টি ব্যবহার করতে পারবে। এই পাড়টি প্রধান ডাকঘর এলাকায় এম সাইফুর রহমান সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সেখান থেকে শহরের পশ্চিমবাজার, ডাকঘরের সামনের রাস্তা দিয়ে শাহ মোস্তফা সড়ক হয়ে ঢাকা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে গিয়ে ওঠা যাবে। এতে একই সঙ্গে চৌমোহনা ও পশ্চিমবাজারের যানজট এড়ানো সম্ভব হবে।